সংসদ নির্বাচনের আগে জঙ্গিদের টার্গেট কিলিং ঠেকাতে মাঠে নেমেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী

505

সি আইএন টিভি ২৪ ডেক্স ঃ

টার্গেট কিলিংকের মাধ্যমে আসন্ন সংসদ নির্বাচনের আগে দেশকে অস্থিতিশীল করার প্রক্রিয়া চালাচ্ছে জঙ্গিরা। আর তাদের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছে সরকার বিরোধী একটি রাজনৈতিক অংশ। সেজন্য বিশেষ অ্যাপস ব্যবহার করা হচ্ছে। বিষয়টি গোয়েন্দা নেটওয়ার্কে ধরা পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে জঙ্গিদের ঠেকাতে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নেমেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, পরিকল্পনা অনুযায়ী মাঠপর্যায়ে টার্গেট কিলিং বাস্তবায়নের জন্য জঙ্গি সংগঠনগুলো কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের টার্গেটে রয়েছে প্রভাবশালী মন্ত্রী, আমলা, আওয়ামী লীগ ঘরানার শীর্ষ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, বুদ্ধিজীবীসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ। তাছাড়া বিদ্যুৎ স্টেশন, রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায়ও জঙ্গিরা নাশকতা চালাতে পারে। এমনকি পুলিশ সদস্যদের মনোবল ভেঙে দিতে সিনিয়র পুলিশ অফিসারদের তালিকা করে টার্গেট কিলিংয়ের পরিকল্পনাও করছে তারা। এমন ধরনের টার্গেট কিলিং ঠেকাতে প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নেমেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। সেই লক্ষ্যে আসন্ন সংসদ নির্বাচনের আগ পর্যন্ত সারাদেশে নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাাশি অভিযান পরিচালনা করছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। গত আগস্ট মাস থেকেই ওই বিশেষ অভিযান শুরু হয়েছে। গত দুই মাসে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী পরিকল্পনাকারীসহ অর্ধশত জঙ্গি ও শিবির ক্যাডারকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারকৃতরা টার্গেট কিলিংয়ের বিস্তারিত তথ্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে প্রকাশ করে দিয়েছে।
সূত্র জানায়, টার্গেট কিলিং পরিচালনা করতে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনগুলোর সাথে পরিকল্পনাকারীরা বিশেষ অ্যাপসের (প্রটেকটিভ টেক্স, টেলিগ্রাম, ভাইবার ও হোয়াটসআপ) মাধ্যমে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছে। ঢাকা মহানগরের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন শিবির নেতাকে বিস্ফোরকসহ গ্রেফতারের পর এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দারা। মূলত নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করতে অক্টোবর থেকেই মাঠে নামার প্রস্তুতি নিয়েছে শিবিরের প্রশিক্ষিত ক্যাডার বাহিনী। আর টার্গেট কিলিং বাস্তবায়নকারী জঙ্গিদের সঙ্গে ওই ক্যাডার বাহিনীর সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে। নাশকতা ও হামলার পরিকল্পনা নিয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে সংগঠনের নেতাকর্মীরা গোপন বৈঠক করছে। অতিসম্প্রতি চট্টগ্রামের মিরেরসরাই জঙ্গি আস্তানায় র‌্যাবের অভিযানে ২ জন নিহত হয়েছে। জঙ্গিদের ওই আস্তানা থেকে চট্টগ্রামের আদালত ভবন উড়িয়ে দেয়ার প্রস্তুতি চলছিল।
সূত্র আরো জানায়, একটি মহল বিগত ২০১৩-১৪ সালের চেয়েও ভয়াবহ নাশকতা চালানোর পরিকল্পনা করছে। সেই লক্ষ্যে বর্তমান মন্ত্রী-এমপিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ করে জনগণের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে বিশৃঙ্খল পরিবেশে টার্গেট কিলিংয়ের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতারকৃত জঙ্গিরা এসব তথ্য দিয়েছে। জঙ্গিরা এবার মরণ কামড় দিতে প্রস্তুত। আর ষড়যন্ত্র সফল করতে একত্রিত কাজ করছে জামায়াত-বিএনপির এক শ্রেণীর নেতা। দেশ-বিদেশ থেকে টাকা দিয়ে জঙ্গিদের নিজেদের দলে ভেড়ানোর কাজ করছে জামায়াত। আর অত্যন্ত গোপনে ওই কাজটি রাজধানী থেকে শুরু করে একেবারে গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত করা হচ্ছে। যুদ্ধাপরাধীদের পরিবারও এই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। বিশেষ করে জামায়াত থেকে যারা বিএনপিতে গেছে তারাই বেশি তৎপর। ষড়যন্ত্র সফল করতে সব অপশক্তি ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে।
এদিকে পুলিশ সদর দপ্তরের জঙ্গি কার্যক্রম মনিটরিং কাজে নিয়োজিত একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, নির্বাচন সামনে রেখে জঙ্গি ও একটি মহল টার্গেট কিলিং ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলার যে পরিকল্পনা নিয়েছে, তা পুলিশের মনিটরিংয়ে ধরা পড়েছে। ওই ধরনের নাশকতা ও টার্গেট কিলিং প্রতিরোধে পুলিশের পক্ষ থেকে সবধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। মাদকের অভিযানের পাশাপাশি ওই বিষয়েও পুলিশ অভিযান চালিয়ে আসছে। আর নির্বাচন পর্যন্ত ওই অভিযান অব্যাহত থাকবে। অভিযানে একজন পরিকল্পনাকারীসহ ২০ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ইতিমধ্যে টার্গেট কিলিং ঠেকাতে পুলিশ সদর দফতর থেকে সব ইউনিট প্রধান, ডিআইজি, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ও জেলার এসপিদের ওই সংক্রান্ত নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ জানান, টার্গেট কিলিং বা নাশকতা- যে ধরনের পরিকল্পনাই করুক না কেন র‌্যাবের নেটওয়ার্ক উপেক্ষা করার কোনো সুযোগ নেই। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আগেই র‌্যাব সেখানে হাজির হচ্ছে। সব ধরনের নাশকতা মোকাবিলায় র‌্যাবের প্রস্তুতি রয়েছে। নির্বাচনের আগ পর্যন্ত র‌্যাব ওই ধরনের নাশকতা কার্যক্রম প্রতিরোধে অভিযানসহ মনিটরিং কার্যক্রম অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাবে।
উল্লেখ্য, গত দুই মাসে র‌্যাব টার্গেট কিলিং ও নাশকতা পরিকল্পনায় জড়িত অভিযোগে ৩১ জনকে গ্রেফতার করেছে।