বাংলাদেশ নিয়ে বিজেপি নেতার হুমকি ও পাগলাগারদ :- এ.কে.এম শামছুল হক রেনু

506

বাংলাদেশ নিয়ে বিজেপি নেতার হুমকি ও পাগলাগারদ
এ.কে.এম শামছুল হক রেনুহরণ দিয়ে শিরোনামের আলোকে সামনে এগুচ্ছি। ১৯৬৫ সাল তখন আমি কোদালিয়া এস.আই উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র। ১৯৬৫ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়। তখন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান, পররাষ্ট্র মন্ত্রী জুলফিকার আলী ভূট্টো এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রী ও পররাষ্ট্র মন্ত্রী সর্দার সরন সিং। স্কুলের স্যারদের নির্দেশে বিমান থেকে নিক্ষিপ্ত বোমার হাত থেকে বাঁচার জন্য সিভিল ডিফেন্স ও শরীরচর্চা শিক্ষক (ঈরারষ ফবভবহপব ধহফ ঢ়যুংরপধষ ঃবধপযবৎ) আজহারুল ইসলাম ও অহিদ স্যার ছাত্রদেরকে প্রতিদিন বিভিন্ন কলাকৌশল প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সতর্ক করতেন। তাছাড়া বাঁচার জন্য ডব্লিউ ট্রেঞ্চ (ড) ও রাতে নিস্প্রদীপ মহড়া সম্পর্কে অবহিত করতেন। স্যারদের নির্দেশ মতো ছাত্ররা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে গ্রামে ডব্লিউ ট্রেঞ্চ এবং হাটে বাজারে গিয়ে নিস্প্রদীপ মহড়া সম্পর্কে জনসাধারণকে সচেতন করে থাকে। যুদ্ধের ২/৩ দিন যেতে না যেতেই দেশময় খবর ছড়িয়ে পড়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রী ৭২ ঘন্টার মধ্যে পাকিস্তান দখল করে লাহোরের শালিমার গার্ডেনে চা খাবে। এই কথা শুনে দেশের মানুষ আতংকগ্রস্থ হয়ে পড়ে। আর আমাদেরতো (স্কুলের ছাত্রদের) আতংক উৎকণ্ঠার পরিসীমাই ছিল না।

স্যারদেরও ছাত্রদের প্রতি নির্দেশ ছিল বিমানের আওয়াজ শুনার সাথে সাথে ডব্লিউ ট্রেঞ্চের মধ্যে ঢুকে পড়ার। আর রাতের বেলায় পড়ালেখার হারিকেন ও বাড়ীর বাতি কালো কাপড় বা অন্য কালো কিছু দিয়ে ঢেকে রাখার। তখন গ্রামে এমনকি অনেক ছোটখাট শহরে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ছিল না। তখন ছোট বড় সকলেই এভাবেই চলতে থাকে। এর মধ্যে দেশব্যাপী রেডিওতে প্রচার হল ভারতের প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রী লাহোর শালিমার গার্ডেনে চা খাওয়াতো দূরের কথা বরং পাকিস্তানের অকুতোভয় দুঃসাহসিক ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্ট ভারতের ভিতর ঢুকে তাদের কেমকারান সেক্টর দখল করে নেয় এবং পাকিস্তান বিমান বাহিনীর স্কোয়াড্রান লিডার তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) এম.এম. আলম ভারতের আগ্রাসহ বিভিন্ন সামরিক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় বম্বিং ও সাফল্যের সাথে দুঃসাহসিক অভিযান চালিয়ে পাকিস্তানের বিমান ঘাঁটিতে প্রত্যাবর্তন করে। যার ফলে ভারত জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় তাসখন্দ চুক্তির মাধ্যমে ১৭ দিনের যুদ্ধের পর পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে যুদ্ধ বিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়ে থাকে।

আরও দুটি উদাহরণ, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৫ সালে আমরা বেশ কয়েকজন সহকর্মী সুনামগঞ্জ জেলার টেঁকেরঘাট চুনাপাথর খনি (ঞখগ- চৎড়লবপঃ) সংলগ্ন বন্ধুবর চিলনির শহীদ সিরাজের কবর জেয়ারত করতে গিয়েছিলাম। পাশেই মেঘালয়ের খাসিয়া জয়ন্তিয়া পাহাড়। এখানে তখন দেখা যায়, বাংলাদেশের শ্রমিক ও প্রকৌশলীরা খুব কষ্ট করে
চলমান পাতা/২
পাতা: ২

মাইন বিস্ফোরণের মাধ্যমে মাটির গভীর তলদেশ থেকে চুনাপাথর সংগ্রহ করে তা চাতক সিমেন্ট কারখানায় পাঠানোর ব্যবস্থা করে থাকে। তখন চাতক সিমেন্ট কারখানা ছিল বাংলাদেশের কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশনের (ইঈওঈ) নিয়ন্ত্রণাধীন একটি ইন্ডাস্ট্রি। জানা যায়, সেই সময় চুনা পাথর উত্তোলনে নোম্যান্স ল্যান্ড (ঘড় সবহং ষধহফ) অতিক্রম করে পার্শ্ববর্তী খাসিয়া জয়ন্তিয়া পাহাড়ে টহলরত ভারতীয় সীমান্ত রক্ষিবাহিনী (ইঝঋ) প্রায় সময়ই অহেতুক ফাঁকা গুলি ও বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে চুনাপাথর উত্তোলনকারীদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করতো এবং তাদের কাজে অহেতুক বাধা সৃষ্টি করতো। এ ব্যাপারে তখন শ্রমিক, প্রকৌশলী ও এলাকার লোকজনদের কাছ থেকে জানা যায়, পাকিস্তান আমলে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষিবাহিনী (ইঝঋ) গুলি ও বোমা ফাটিয়ে শ্রমিক ও প্রকৌশলীদেরকে ভয় ও বাধা দেয়াতো দূরের কথা নো ম্যান্স ল্যান্ডের সীমানার আধা কিলোমিটার দূরে ও জ্ঞাতসারে তাদেরকে অবলোকন করা যেত না। এসব বলে পাকিস্তান আমলের গুণকীর্তন জাহির করছি তা নয়। ইহাই ছিল তখন বাস্তবতা ও আজকের ইতিহাস। পাকিস্তান আমাদের বিরুদ্ধে ২৩ বছর যে শোষন, নির্যাতন ও লুন্ঠন করেছে স্বেচ্ছাচারের সেই নির্মম ইতিহাস কোন দিনই ভুলার নয়। পাকিস্তানের শোষক গোষ্ঠি ও পাক হানাদার বাহিনীর নির্যাতন ও পৈশাচিকতার কথা এদেশের মানুষের কোনদিনই ভুলে যাওয়ার নয়।

নিবন্ধে শিরোনামের আরেকটি ছোট উদাহরণ। এক সময় আমাদের গ্রামের (সুখিয়া গ্রাম) পাশের গ্রামে এক ভন্ড ফকির বা ল্যাংটা বাবার আস্তানা ছিল। সে প্রায়ই এ আস্তানায় শরীয়ত বিরোধী ও বেদাত কাজকর্ম করতো। কাহারও বাধা নিষেধ কখনও কর্ণপাত করতো না। সাগরেদদের কারণে তার পরিধিও ছিল বেশ বড়। এমনিভাবে এলাকার লোকজন ত্যক্ত, বিরক্ত ও অতিষ্ট হয়ে এক সময় এলাকার ছোট বড় সকলেই মিলিত হয়ে ভন্ড ও ল্যাংটা বাবার আস্তানা পুড়িয়ে দেয়। পাগলা গারদের মতো আলো বাতাস বিহীন একটি ঘরে কথিত ল্যাংটা বাবাকে ২৪ ঘন্টা আটকিয়ে রাখা হলে কথিত ল্যাংটা বাবা তার ভন্ডামী ছেড়ে কৃতকর্মের অন্যায় স্বীকার করে এবং এলাকাবাসীর কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে পাগলা গারদ থেকে মুক্তি পেয়ে সাধারণ মানুষের কাতারে এসে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে বাধ্য হয়। যদি তার বিরুদ্ধে এলাকাবাসী তা না করে প্রশ্রয় দেয়া হত (ঝযবষঃবৎ) তবে কথিত ল্যাংটা বাবার হয়তো এমনিভাবে এলাকায় ভন্ডামী করেই যেত।

ভারত বাংলাদেশের সুপ্রতিবেশী দেশ। ৭১ সালের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের অবদান ও ১ কোটি লোককে (শরনার্থি) আশ্রয় দেয়ার কথা এদেশের জনগণ ও স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত কোনো সরকারই তা অস্বীকার করেনি। তারপর ৭২ সালে ভারত পাকিস্তান সিমলা চুক্তির মাধ্যমে (ইন্দিরা ভূট্টো) ৯৩ হাজার পাক হানাদার বাহিনী, কষাই, দজ্জাল, নরঘাতক, মা বোনের ইজ্জত সম্ভ্রম হরণকারী ও চিহ্নিত যুদ্ধারাপরাধী হিসেবে বিবেচিত ১৯৫ জন পাকহানাদার বাহিনীকে বিনা বিচারে পাকিস্তানে প্রত্যাবর্তনকে এদেশের নির্যাতিত ও নিষ্পেষিত জনগণ আজও ভুলতে পারেনি। আজও এ ব্যাথা বেদনায় স্বামী হারা স্ত্রী, ভাই হারা বোন, সন্তান হারা পিতা মাতা আজও চোখের অশ্রু সংবরণ করতে পারেনি। সেই চুক্তিতে (সিমলা চুক্তি) স্বাধীন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের তদানীন্তন সরকার ও মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এম.এ.জি ওসমানীকেও রাখা হয়নি। ভারত ৭১ সালে পশ্চিম পাকিস্তানের সীমান্ত যুদ্ধে পাকিস্তানে আটককৃত ভারতীয় সৈন্যদের মুক্তির ব্যাপারে পাকহানাদার ও দজ্জালদের এ উদারতা দেখিয়েছি বলে দেশ ও বিদেশের অনেকের মন্তব্য থেকে এসব কিছু জানা যায়।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে অদ্যাবধি গায়ের জোরে ভারত একটার পর একটা ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়ে যাচ্ছে। যদিও ভারতের সাথে রয়েছে আমাদের ট্রানজিট চুক্তি, বাণিজ্য চুক্তিসহ অনেক চুক্তি। ফালানিকে নির্মমভাবে ভারতীয় বিএসএফরা হত্যা করে কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলিয়ে রাখে। আজও ফালানীর পিতামাতা, ভাইবোন ও আত্মীয়স্বজন ন্যায় বিচারের স্বার্থে ভারতের আদালতে বছরের পর বছর ঘুরে বেড়াচ্ছে। এমনিভাবে ভারতের বিএসএফ এবং ঘোষবাহিনী বলে খ্যাতরা অহরহ কতক লোককে যে ধরে নিয়ে গেছে এবং যাচ্ছে এর পরিসংখ্যানের খোঁজ খবর রাখেই বা কজনা। স্বাধীনতার পর থেকে তাদের (বিএসএফ) অপরাধের পরিসীমা সীমাহীন বলেও অনেকের অভিমত।

তদোপরি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। ১৯৪৭ সালের ১৪ ও ১৫ আগস্ট ভারত ও পাকিস্তান স্বাধীনতা লাভ করার পর থেকেই ভারত ও পাকিস্তান অদ্যাবধি একদেশ অন্য দেশের বিরুদ্ধে হুমকি, ধমকি, সংঘাত, কমবেশী যুদ্ধ বিগ্রহ ও সীমান্ত নিয়ে অহরহ লেগেই আছে। আর কাশ্মীর নিয়ে দুদেশের মধ্যে বৈরীতারতো শেষই নেই। যদিও সেসব ভারত ও পাকিস্তানের অভ্যন্তরীন ব্যাপার।

ষোড়শ শতাব্দীতে মোগল স¤্রাট বাবরের আমলে প্রতিষ্ঠিত বাবরী মসজিদের স্থলে রামমন্দির প্রতিষ্ঠার জন্য ভারত পানি কম ঘোলা করছে না। এবার নতুন করে বিজেপি আবার পুরনো খেলায় মেতে উঠাসহ স¤্রাট শাহজাহান তাঁর স্ত্রী মমতাজ বেগমের (আরজুমান বানু) নামে প্রতিষ্ঠিত ঐতিহাসিক আগ্রার তাজমল ভাঙাসহ আরও ঐতিহাসিক স্থাপত্যের স্থলে মন্দির বানানোর অশুভ পাঁয়তারা অব্যাহত রেখেছে। তাছাড়া ভারতে মুসলমানদের গরু জবাই, গরুর মাংস ভক্ষণ ও কোরবানীর ঈদের সময় (ঈদুল আজহা) গরু কোরবানীতে শুধু বাধারই সৃষ্টি করেনি গরু জবাইয়ের কারণে ভারতে অনেক মুসলমানকে পিটিয়ে হত্যা করার নজির দেশী বিদেশী গণমাধ্যম ও মিডিয়াতে কম পরিলক্ষিত হয়নি।
চলমান পাতা/৩
পাতা: ৩

আন্তর্জাতিক হেলসিংকি নদীমালা আইন ভঙ্গ করে বারাকসহ ভারতের ওপর দিয়ে বয়ে আসা ৪৪টি নদীর ওপর গ্রোয়েন নির্মাণ, তিস্তার ন্যায্য পানির হিস্যা থেকে বঞ্চিত এবং অপর দিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার কানষাট থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে গঙ্গা নদীতে ফারাক্কা বাঁধ দিয়ে ভারত পানি আগ্রাসনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে মুরুভূমি বানানোর সুদূর পরিকল্পিত মহাপরিকল্পনা অটুট রেখেছে। তিস্তার ন্যায্য পানির সমস্যার সমাধান যেমনি আজও হয়নি তেমনি ফারাক্কা সমস্যার ন্যায় সঙ্গত সমাধানও হয়নি। ফারাক্কার পানির হিস্যার ন্যায় সংঘত দাবী আদায়ের নিরিখে এবং বিশ্ব ব্যাংক ও জাতিসংঘের সুদৃষ্টির লক্ষ্যে মাওলানা ভাসানী ১৯৭৬ সালের ১৬ মে, ঐতিহাসিক লংমার্চ করেছিলেন। ভারতের আসামে দীর্ঘদিন যাবৎ স্থায়ীভাবে বসবাসকারী বাঙালীদের এতদিনে বাংলাদেশী বলে ভারত তাদের উৎখাতের জন্য রোহিঙ্গাদের মতো করে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছে। যদিও ন্যায় সঙ্গতভাবেই এদেশের হিন্দু মুসলমানরা আসামসহ ভারতের অন্যান্য অংশে বসবাস করে আসছে। এনআরসি বা ন্যাশনাল রেজিস্ট্রেশন কার্ডের অহেতুক ছোতা সৃষ্টি করে (ঘধঃরড়হধষ জবমরংঃৎধঃরড়হ ঈধৎফ- ঘজঈ) এর পরিকল্পনা করছে। তথ্যসূত্রে জানা যায়, এরই মধ্যে আসামে স্থায়ীভাবে বসবাসকারী ৪০ লক্ষ লোককে বাংলাদেশী বলে নাকি চিহ্নিত করা হয়েছে।

২ অক্টোবর মঙ্গলবার টাইমস অব ইন্ডিয়ার সংবাদের বরাতে যুগান্তর “বাংলাদেশ দখলের হুমকি বিজেপি নেতার” শিরোনামে একটি সংবাদ ছাপিয়েছে। যা দেখে বাংলাদেশের আপামর জনগণ গভীরভাবে মর্মাহত, দুঃখিত ও বিষ্মিত। যে প্রতিবাদের কোনো ভাষা নেই। তাতে বলা হয়েছে, ৩১/৯/১৮ ইং রোববার সকালে বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন ভারতীয় রাজ্য ত্রিপুরার আগরতলায় ত্রিপুরা সরকারের অতিথিশালায় এক সংবাদ সম্মেলনে ভারতের সাবেক মন্ত্রী ও বর্তমান বিজেপি সরকারের সংসদ সদস্য সুব্রামনিয়াম স্বামী মিথ্যা ও অবাস্তব অভিযোগ এনে বলেছেন, বাংলাদেশে গায়ের জোরে হিন্দুদের ধর্মান্তরিত ও মন্দির দখল করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে এটা বন্ধ না হলে, বাংলাদেশ দখল করারও হুমকি দেয়া হয়েছে। সপ্তাহ দুই আগে বিজেপির সভাপতি অমিতশাহও দাবী করেন বহু বাংলাদেশী অনুপ্রবেশ করে ভারতে বসবাস করছে। এমনকি তাদেরকে উইপোকার সাথে তুলনা করে তাদেরকে খোঁজে বের করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়ারও হুমকি দেয়া হয়ে থাকে। বিজেপি নেতা সুব্রামনিয়াম স্বামী আরও বলেছেন, বাংলাদেশে হিন্দুদের ধর্মান্তরিত ও মন্দির দখল করছে পাগল বাংলাদেশীরা। আরো বলেছে, শেখ হাসিনার প্রতি ভারতের সমর্থন রয়েছে। কিন্তু হিন্দুদের গায়ের জোরে ধর্মান্তকরণ ও মন্দির ভাঙার তান্ডব বন্ধ করতে হবে। হিন্দুদের বিরুদ্ধে পাগলামী বন্ধ না হলে বাংলাদেশ দখল করতে হবে। ভারতের তিন হিন্দু মন্দির পুনরোদ্ধার যথা অযোধ্যার রামমন্দির, কাশ্মীমের বিশ্বনাথ মন্দির ও মথুরার কৃষ্ণ মন্দিরের কথা বলা হয়। এই তিন মন্দিরসহ ৪০ হাজার মন্দির মুসলীম আগ্রাসনের সময় ধ্বংস হয়েছে। তবে তিনটি মন্দির মুসলীমরা স্বেচ্ছায় দিলে বাকিসব মন্দির ছেড়ে দিতে আমরা প্রস্তুত। তা না হলে সবই আমরা দখল করে নেব। এটাই হল হিন্দুদের শ্রীকৃষ্ণ প্যাকেজ। তাছাড়া আরও কত আস্ফালন ও হুমকি।

সুব্রামনিয়ামের এ বক্তব্যের প্রেক্ষিতে সরকারের অবিলম্বে প্রতিবাদ জানানোর প্রয়োজন বলে দেশের সর্বস্তরের জনগণ মনে করে থাকে। বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। এদেশের রাজনীতিতে ভিন্নতা থাকলেও প্রাণপ্রিয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যেকোন ধৃষ্টতা, কটাক্ষ, হুমকি, ধমকি ও আস্ফালনের বিরুদ্ধে সবাই এক ও অভিন্ন। সুব্রামনিয়াম বাংলাদেশ দখলের যে হুমকি দিয়েছে তা প্রত্যাহার না করলে এ নিবন্ধে ভন্ড ও ল্যাংটা বাবাকে যে পাগলা গারদে রাখা হয়েছিল তেমনিভাবে স্বাধীন বাংলাদেশের জনগণ ভারতের বিজেপি সরকারের নিকট সুব্রামনিয়াম স্বামীকে বাংলাদেশ দখলের উক্তির অপরাধে ভারতের যে কোন পাগলাগারদে রাখার দাবী জানালে অত্যুক্তি হওয়ার মতো তেমন কিছু আছে বলে বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক জনগণ মনে করে না।

বাংলাদেশ আমাদের অহংকার, বাংলাদেশ আমাদের গৌরব, জীবনে মরণে বাংলাদেশ আমাদের স্বপ্ন। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে দজ্জাল পাকিস্তানের শোষকদের দুঃশাসন থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। ভারতীয় বিজেপি নেতা সুব্রামনিয়ামের বাংলাদেশ দখলের হুমকি ও আস্ফালনে যেমনি এদেশের ১৭ কোটি জনগণ প্রতিবাদ জানায় তেমনি ঘৃণ্য ভয়ে এ হুমকিকে ধিক্কার জানিয়ে থাকে। তাছাড়া ভারতের আরেক বিজেপি নেতা বলেছে মুসলমানরা রামের বংশধর (যুগান্তর ০৩ অক্টোবর/২০১৮)। ভারতসহ সারা দুনিয়ায় বাংলাদেশের বন্ধু আছে, প্রভু নেই।

এ.কে.এম শামছুল হক রেনু
লেখক কলামিষ্ট