গায়েবি মামলা নিয়ে হাইকোর্টের বিভক্ত আদেশ

490

সিআইএন:

সারা দেশে বিএনপির জ্যেষ্ঠ আইনজীবীসহ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে করা চার হাজার মামলা এবং তিন লাখেরও বেশি মানুষকে আসামি করার বৈধতা নিয়ে রিটের ওপর দ্বিধাবিভক্ত আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এর ফলে নিয়ম অনুসারে মামলাটি প্রধান বিচারপতির কাছে যাবে। পরে প্রধান বিচারপতি মামলাটির শুনানির জন্য অন্য বেঞ্চ গঠন করে দেবেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে গতকাল মঙ্গলবার বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ দ্বিধাবিভক্ত আদেশ দেন। আদালতে রিট আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, নিতাই রায় চৌধুরী, মো. মাসুদ রানা, ব্যারিস্টার এ কে এম এহসানুর রহমান প্রমুখ। অন্যদিকে, রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তাঁর সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একরামুল হক টুটুল। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে পৃথক পৃথক আদেশ দেন হাইকোর্ট। দ্বৈত বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী তাঁর আদেশে ‘গায়েবি’ মামলা হিসেবে অভিযোগকারীসহ অন্যান্য ব্যক্তির বিরুদ্ধে করা মামলা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। একইসঙ্গে ঢাকায় দায়ের হওয়া মামলাগুলো তদন্ত করে আগামি ৬০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলে পুলিশের মহাপরিদর্শককে নির্দেশ দেন। পাশাপাশি মামলার পরবর্তী তারিখ ১৭ ডিসেম্বর নির্ধারণ করেন। এরপর আদালতের কনিষ্ঠ বিচারপতি আশরাফুল কামাল তাঁর আদেশে বলেন, রিটটি সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদ অনুসারে গ্রহণযোগ্য নয়। তাই এ রিটটি আমি প্রত্যাখ্যান (খারিজ) করলাম। পরে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, গত সোমবার রুল পাওয়ার আশায় আদালতে গিয়েছিলাম। কিন্তু তা হয়নি। ড. কামাল হোসেন ৮ অক্টোবর শুনানি করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, আজকে (গতকাল মঙ্গলবার) তার আর আসার দরকার হবে না। আজকে অ্যাটর্নি জেনারেল শুনানি করলেন। তিনি শুনানিতে আদালতকে বললেন, এসব ফৌজদারি মামলা রিটের আওতায় আসবে না, এগুলো কোয়াশিংয়ে (বাতিল) যাবে। জবাবে আমি আদালতকে বললাম,সারা দেশের আট লাখ লোক এ মামলায় আসামি। তাই একটি রিট করে আমরা এ ধরনের ঘটনা (গায়েবি মামলা) ঘটেছে কি না, তা জানতে চাই। পরে আদালত দ্বিধাবিভক্ত আদেশ দিলেন। এর ফলে মামলাটি এখন প্রধান বিচারপতির কাছে যাবে। এরপর তিনি মামলাটি শুনানির জন্য অন্য একটি বেঞ্চ গঠন করে দেবেন। মামলার বিবরণে জানা যায়, গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন জায়গায় রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে প্রায় চার হাজার মামলা হয়। ১০ বছর আগে মারা গেছেন এমন লোকদেরও এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেনকে একই জায়গায় পর পর তিন থেকে চারদিনে ৪-৫টি মামলায় আসামি দেখানো হয়েছে। বলা হয়েছে, এর প্রত্যেকটি মামলায় তিনি ককটেল বিস্ফোরণের আসামি। তাঁর মতো ব্যক্তি সন্ধ্যার পরে গিয়ে ককটেল ছুড়তে পারেন- এটা আদৌ কি বিশ্বাসযোগ্য? ২০০৭ সালে মারা গেছেন, কিংবা চলতি বছর হজে ছিলেন, বিদেশে থাকেন- এমন লোকদের বিরুদ্ধেও মামলা হয়েছে। এর আগে, গত ২৩ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিটটি দায়ের করেন আইনজীবী এ কে খান। জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন, নিতাই রায় চৌধুরী, সানাউল্লাহ মিয়ার পক্ষে এই রিট দায়ের করা হয়। গত ২২ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট আবেদন করা হয়। রিটে গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে ২০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সারা দেশে বিএনপির জ্যেষ্ঠ আইনজীবীসহ বিভিন্ন নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে করা চার হাজার মামলা এবং তিন লাখেরও বেশি লোককে আসামি করার কারণ জানতে চাওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে এ বিষয়ে অনুসন্ধান করার জন্য স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ ব্যতীত অন্য দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত যত গায়েবি মামলা করা হয়েছে সেগুলোর তদন্ত বন্ধ এবং এ গায়েবি মামলাগুলোর বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক কমিটি করে ঘটনার তদন্ত এবং তাদের বিরুদ্ধে পরবর্তীতে যেন এ ধরনের মামলা দেওয়া না হয়, তার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। পাশাপাশি আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে পুলিশি ক্ষমতা অপব্যবহার করে গায়েবি বা মিথ্যা মামলা দায়ের করা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, রিটে সে বিষয়ে রুল জারির আরজি জানানো হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, পুলিশের আইজি, ডিএমপি কমিশনার, ডিএমপি রমনা জোনের ডেপুটি ও অতিরিক্ত ডেপুটি কমিশনার, রমনা, পল্টন ও শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ মোট নয়জনকে এই রিটে বিবাদী করা হয়েছে।