খুলনা থেকে আবু হামজা বাঁধন ঃ-
খুলনার ফুলতলার উপজেলার দামোদর গ্রামে বেড়ে উঠা যুবক আশরাফুল আলম কচি। তিনি ৯০ দশকের শেষের দিক থেকে ফুলতলা উপজেলা ছাত্রলীগের নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। সময়ের ব্যবধানে খুলনা জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদকেরও দায়িত্ব পালন করেছিলেন। দলের ক্রান্তিকালে রাজপথে সাহসি ভূমিকা রাখায় তাকে একাধিকবার জেল জুলুম নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছিল। তবুও স্তমিত করে রাখতে পারেনি আজকের আসন্ন জেলা যুবলীগ সম্মেলনের সাধারন সম্পাদক পদ প্রার্থী আশরাফুল আলম কচিকে। তিনি বলেন, আমি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের আদর্শের সৈনিক। কোন প্রকার কালো থাবার ভয় অতীতে করেনি ,এখনও করব না।
জানাযায়, কিশোর বয়স থেকে আশরাফুল আলম কচি বাবার হাত ধরে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। ১৯৯৪ সালে ফুলতলা এম এম কলেজ শাখা ছাত্রলীগে যোগদানের মাধ্যমে মূলত কচির রাজনৈতিক অধ্যায় শুরু হয়। তৎকালীন সময়ে কচি ফুলতলা এম এম কলেজের অন্যতম মেধাবী ছাত্র ছিলেন। পড়াশুনার পাশাপাশি জাতিরজনকের আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে তিনি রাজপথে ছাত্রলীগের সাহসি নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ফলশ্রুতিতে ১৯৯৫ সালে ফুলতলা এম এম কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক হিসেবে মনোনীত হন। এরপর থেকে আশরাফুল আলম কচিকে রাজনৈতিক প্লাটফর্মে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। পরবর্তীতে এই মেধাবী ছাত্রনেতাকে দলের প্রতি প্রবল আনুগত্যের ফলে ও দুঃসময়ে রাজপথে সাহসি ভূমিকা রাখার কারণে ২০০০ সালে জেলা ছাত্রলীগের সদস্য এবং ২০০৩ সালে মাত্র ২৩ বছর বয়সে খুলনা
জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠিক সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন। ছাত্র রাজনীতি শেষে, ২০১১ সালের পর থেকে আশরাফুল আলম কচি জেলা যুবলীগের সভাপতি কামরুজ্জামান জামাল ও সাধারন সম্পাদক আক্তারুজ্জামান বাবুর নেতৃত্বে যুবলীগকে সু-সংগঠিত করার লক্ষ্যে ফুলতলা উপেজলা সহ বিভিন্ন থানা এলাকায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছে। এছাড়া তিনি আসন্ন জেলা যুবলীগের ২৭ অক্টোবারের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে সাধারন সম্পাদক পদ প্রার্থী হিসেবে রাজনৈতিক কর্মকান্ড সহ প্রচার-প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন।
কথা হয় তরুণ যুবনেতা আশরাফুল আলম কচির সাথে। তিনি বলেন, আমি ফুলতলার আওয়ামীলীগ পরিবারের সন্তান, আমার পরিবার মুক্তিযোদ্ধা পরিবার। আমার চাচা বঙ্গবন্ধুর ডাকে সারা দিয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। বাবা যুদ্ধ করলেও কখনও মুক্তিযুদ্ধের সার্টিফিকেট আনার জন্য যায়নি। তিনি বলতেন, আমি যুদ্ধ করেছি দেশের জন্য , সার্টিফিকেটের জন্য নয়। এমন পরিবারের সন্তান হিসেবে আমি গর্বিত। ৯০দশকে সক্রিয় ছাত্রলীগ করার কারণে আমাকে বারংবার বিভিন্ন হামলা ও মামলার শিকার হতে হয়েছে। এমনকি আমার বাড়িঘর ভাংচুর করেছে তৎকালীন সময়ের যৌথবাহিনী। একটাই দোষ আমি ও আমার পরিবার আওয়ামীলীগ করি। ২০০১ সালের ১লা অক্টোবার আওয়ামীলীগ ক্ষমতা হস্তান্তরের পরপর অর্থাৎ ২২ অক্টোবার ফুলতলা থানায় আমার নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাকে গ্রেফতার করানো হয়, ৬মাস জেলে ছিলাম, ২০০২ সালে অপারেশন ক্লিনহাটে আমার বাসা ভাড়ি ভাংচুর করে, ২০০৩ সালে আমার নামে আবারও দ্বিতীয়বারের মত মিথ্যা মামলা দায়ের হয়, তখন আমি প্রায় ৭মাস কারগারে ছিলাম, ২০০৫ সালে আবারও তৎকালীন সরকারের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে র্যাব দিয়ে আমাকে গ্রেফতার করানো হয়, ১৭ মাস হাজতবাস করি। জেল থেকে ২০০৬ সালে বের হই , তবে পরিবার পরিজনের কাছে যেতে পারেনি। দীর্ঘ দিন এলাকাছাড়া ছিলাম। কোন অপরাধ না করেও বিভিন্ন জায়গায় ফেরারীরমত আত্মগোপন করে দিন কাটিয়েছি। দলকে ভালবাসার মাশুল হিসেবে প্রায় দুটি বছর নিজের গ্রামে আসতে পারেনি। সবকিছুই হাসিমুখে বরণ করেছি, শুধুমাত্র আওয়ামীলীগকে ভালবাসি, আমার নেত্রির প্রতি অগাধ ভালবাসায় সব কিছুই স্বাভাবিকভাবে মেনে নিয়েছি। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনের এক সপ্তাহপূর্বে ফুলতলায় এসে নির্বাচনী প্রচার প্রচারনা করেছি। অবশেষে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার পর স্থায়ীভাবে বাড়ি ফিরলাম।
এক প্রশ্নের জবাবে আশরাফুল আলম কচি বলেন, দলের জন্য যা করেছি, তার কোন বিনিময় পাওয়ার জন্য করেনি। তবে জেলা যুবলীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে সিনিয়র নেতারা যদি আমার অতীত রাজনেতিক প্রেক্ষাপট পর্যালোচনা করেন, তবে আমি নিঃসন্দেহে খুলনা জেলা যুবলীগের সাধারন সম্পাদক হব। এরপরেও যদি না হতে পারি, তবে সিনিয়র নেতারা যুবলীগ সম্মেলনে যে সিদ্ধান্ত গ্রহন করবেন , তা আমি হাসিমুখে মেনে নিব। তবে আমি বিশ্বাসকরি যুবলীগের এ সম্মেলন সম্পূর্র্ণ গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে হবে।
কচির পারিবারিক পরিচয় ঃ সরদার আশরাফুল আলম কচি ১৯৭৯ সালে ফুলতলার দামোদর গ্রামের সরদার বাড়িতে জন্মগ্রহন করেন। তার বাবা সরদার শাহাবুদ্দিন জিপ্পি খুলনা জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ও বর্তমান ফুলতলা উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধরন সম্পাদক। মা বিলকিস আক্তার ধারা কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামীলীগের সদস্য।