অবৈধ ব্যাংকিং ব্যবসার বিরুদ্ধে আটঘাঁট বেধে এবার মাঠে নামছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

558

অবৈধভাবে ব্যাংকিং ব্যবসায় জড়িত সমবায় সমিতি এবং মাল্টিপারপাস ব্যাংকের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সে লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক এবার আটঘাঁট বেধেই মাঠে নামছে। ইতিপূর্বে বিভিন্ন সময় অবৈধভাবে ব্যাংকিং করা ওসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক আদালতে রিটের কারণে পিছপা হতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু এবার আঠঘাট বেধে ওসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে যাচ্ছে ব্যাংকিং খাতের নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানটি। বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশে কর্মরত যেসব কো-অপারেটিভ সোসাইটির নামের শেষে ব্যাংক শব্দ আছে তাদেও তালিকা প্রস্তুত করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওসব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধের বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া হবে। ঢাকা মার্কেন্টাইল কো-অপারেটিভ ব্যাংক লিমিটেড অবৈধভাবে ব্যাংকিং করছে। ইসলামিক শরীয়াহ অনুযায়ী পরিচালিত ওই প্রতিষ্ঠানটি ১৯৭৩ সাল থেকে কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। একইভাবে আজিজ কো-অপারেটিভ অ্যান্ড ফিন্যান্স ক্রেডিট সোসাইটি লিমিটেডও ব্যাংকিং করছে। সম্প্রতি ১৯৮৪ সালে শুরু হওয়া আজিজ কো-অপারেটিভ অ্যান্ড ফিন্যান্স ক্রেডিট ব্যাংক সম্প্রতি তাদের নাম পরিবর্তন করে ব্যাংক শব্দ বাদ দিয়েছে। তবে ওই প্রতিষ্ঠানটি অবৈধভাবে ব্যাংকিং ব্যবসা করছে।
সূত্র জানায়, ব্যাংক কোম্পানি আইন ও সমবায় আইন অনুযায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংক হিসাবে লাইসেন্স পাওয়া প্রতিষ্ঠানের বাইরে কোনো প্রতিষ্ঠান সাধারণ মানুষ থেকে আমানত নিতে পারে না। ব্যাংকের মতই কিছু সমিতি ও কো-অপারেটিভ প্রতিষ্ঠান আমানত সংগ্রহ করছে। আবার আমানত নিতে জনগণকে আকর্ষণীয় অফারও দিচ্ছে তারা। ইতিপূর্বে বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন সময়ে বেআইনি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কোনো ধরনের ব্যাংকিং না করতে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে সতর্কতামূলক বিজ্ঞপ্তি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্ট্রিগ্রিটি অ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিস বিভাগ কোম্পানিগুলোর সার্বিক কার্যক্রমের ওপর বিশদ পরিদর্শন করে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ এবং অর্থপাচার ও মানি লন্ডারিং বিষয়ে খতিয়ে দেখে আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বলেও সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।
সূত্র আরো জানায়, ঢাকা মার্কেন্টাইল কো-অপারেটিভ ব্যাংক লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠানটি বিনা অনুমোদনে সারা দেশে ১৩০টি শাখা খুলে অবৈধ ব্যাংকিং করছে। একইভাবে আজিজ কো-অপারেটিভ কমার্স অ্যান্ড ফাইন্যান্স ক্রেডিট সোসাইটি লিমিটেড ১১০টি শাখার মাধ্যমে অবৈধ ব্যাংকিং করছে। অতিরিক্ত মুনাফার লোভ দেখিয়ে জনগণ থেকে চলতি, সঞ্চয়ী এবং বিভিন্ন ধরনের স্থায়ী আমানত গ্রহণ এবং উচ্চ সুদে ঋণ বিতরণ করছে ওসব প্রতিষ্ঠান। ওই প্রতিষ্ঠান দুটি বাংলাদেশ ব্যাংকের লাইসেন্সপ্রাপ্ত কোনো ব্যাংক নয়।
এদিকে আজিজ কো-অপারেটিভের পক্ষ থেকে বলা হয়, সোসাইটির সদস্য ও সাধারণ মানুষকে সঞ্চয়ে উদ্বুদ্ধ করাই তাদের অন্যতম লক্ষ্য। তারা চলতি ও সঞ্চয়ী আমানতসহ মোট ১৮ ধরনের আমানত স্কিমের ঘোষণা দিয়েছে। তার মধ্যে ১৬ ধরনের মেয়াদি আমানত স্কিম রয়েছে। তাদের ঘোষিত সুদহার কত তারা স্পষ্ট জানিয়ে দেয়। তাছাড়া তিন ধরনের ঋণ প্রকল্পের সুদহারও নির্ধারিত রয়েছে। আর শরীয়াহ ভিত্তিক দাবি করা ঢাকা মার্কেন্টাইল কো-অপারেটিভ ব্যাংক লিমিটেডও তাদের ওয়েবসাইটে আমানত ও ঋণের সুদহার (তারা প্রফিট উল্লেখ করেছে) উল্লেখ করেছে। আবার তাদের ওয়েবসাইটে একটি বিজ্ঞাপনে একজন গ্রাহককে নগদ টাকা দিতেও দেখা যাচ্ছে। ইসলামী শরীয়াহ মোতাবেক গ্রাহকের নগদ টাকা না দিয়ে পণ্য কিনে দেয়ার কথা বলা হয়েছে।
অন্যদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মতে, কোনো প্রতিষ্ঠানের নামের শেষে ব্যাংক শব্দটি থাকলে সেখানে মানুষ সঞ্চয় রাখতে উৎসাহিত হয়। তারা আস্থার সঙ্গে সেখানে ব্যাংকিংও করতে চায়। তবে তা সম্পূর্ণ অবৈধ। যেকোন সময় ওসব অবৈধ ব্যবসা সরকার বন্ধ করে দিতে পারে। যদিও ওসব প্রতিষ্ঠান দাবি করে তারা সরকারের কাছ থেকে বৈধ লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করছে। এদেশে কো-অপারেটিভ সোসাইটির মত প্রতিষ্ঠানে টাকা রেখে নিঃস্ব হওয়ার উদাহরণ অনেক আছে। কারণ অবৈধ প্রতিষ্ঠানগুলো মানুষের সারাজীবনের জমানো টাকা নিয়ে উড়াল দেয়। তখন ওসব মানুষদের করার কিছু থাকে না। ডেসটিনি, যুবকের মত প্রতিষ্ঠানে টাকা রেখেও মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।