খুলনায় গতকাল শনিবার গ্রামীনফোনের উদ্যেগে সফলভাবে নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সুন্দরবন টাইগার, জলপরী, সোনার তরী, আল্লাহ ভরশা , মা-বাবার আশীর্বাদ, দুরন্তসহ নানা চমৎপ্রদ নামের বাইচ দল প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। খুলনাসহ সারাদেশের ৩০ দলের অংশগ্রহণে আরেকবার মেতে ওঠেছিল রূপসা নদীর দুই পাড়। নদীতে ১৩তম নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে খুলনার নগর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র’র (এনএসএসকে) এবং তত্ত্¡াবধায়নে ছিলেন খুলনা জেলা প্রশাসন। এ পর্যন্ত টানা পাঁচ বছর গ্রামীণফোনের সহযোগিতায় খুলনা নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা সফলভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এই প্রতিযোগিতা দেখতে গতকাল শনিবার দুপুরের পর থেকেই রূপসা নদীর দুই পাড়ে শিশু-কিশোর-কিশোরীসহ বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ জমায়েত হতে থাকেন। প্রতিযোগিতা শুরুর আগ মুহূর্তে নদীর দু’পাড়ে ঢল নামে তরুণ-তরুণী, নারী, শিশুসহ সব বয়সী মানুষের। অনেকে নৌকা ও ট্রলার ভাড়া করে নদী ঘুরে বাইচ উপভোগ করেন। রূপসা নদীর আশেপাশের এলাকাও মেতে ওঠে প্রাণের উৎসবে। দুপুরের পর থেকেই মেঘলা আকাশ। বিকেলে মাঝে মাঝে উকি দেয় সূর্য। এমনই পরিবেশে রূপসা নদীর দুই পাড়ে ছিলো মানুষের মিলন মেলা আর আনন্দের উচ্ছ্বাস। বিপুল সংখ্যক দর্শকের উপস্থিতিতে প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া নৌকার খেলোয়াড়রা কখনো একদল আরেক দলকে পেছনে ফেলে আগে ওঠে। আবার পেছনে পড়ে। গায়েন বা পরিচালক কাঁসির শব্দে এই বৈঠার এবং গানের গতি বজায় রাখতে সাহায্য করেন। নদীর দু’পাড়ে দাঁড়ানো হাজারো দর্শকস্রোতা হৈ হুলে¬াড়ে আর করতালি তাদেরকে উৎসাহ যোগিয়ে যান। নদীর দুই পাড়ে এবং নদীতে ভাড়া নিয়ে ট্রলারে থাকা দর্শকরা মেতে ওঠে সেলফিতে। কেউ কেউ ফেসবুকে লাইভও দিয়েছেন। সারা দেশের মানুষের জন্য উৎসবের এই প্রতিযোগিতা গ্রামীণফোনের ফেসবুক ফ্যান পেজ থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
বিজয়ী দল ও পুরস্কার : এবারের নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতায় সারাদেশের ৩০টি বাইচ দল অংশগ্রহণ করে। নৌকার মাপের ওপর ভিত্তি করে বাইচগুলোকে তিনটি দলে ভাগ করা হয়। প্রতিটি দল থেকে বিজয়ী ১ম, ২য় এবং ৩য় দল জিতে নেয় নগদ পুরষ্কার। গতকালের প্রতিযোগিতায় কয়রা, পাইকগাছা, তেরখাদা, কালিয়া, নড়াইল থেকে ১০টি বড় এবং ৯টি ছোট বাইচ দল অংশগ্রহণ করে। এছাড়াও গোপালগঞ্জ, মাদারিপুর ফরিদপুর এলাকার ১১টি বাচারি নৌকা নিয়ে একটি বিশেষ দল তৈরি করা হয়েছিল। বড় দলের প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করে এক লক্ষ টাকা জিতে নেয় খুলনার কয়রার সুন্দরবন টাইগার। দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে ৬০ হাজার টাকা পুরষ্কার নেয় খুলনার তেরখাদার ভাই ভাই জলপরী। আর তৃতীয় স্থান অধিকার করে ৩০ হাজার টাকা পুরস্কার পেয়েছে একই এলাকার আল্ল¬াহ ভরসা। ছোট গ্র“পে প্রথম স্থান অধিকার করে ৫০ হাজার টাকা পুরষ্কার পেয়েছে খুলনার পাইকগাছার ভাই ভাই দুরন্ত। দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে কয়রার সোনার তরী পেয়েছে ৩০ হাজার টাকা। আর তৃতীয় স্থান অধিকারী দল খুলনার পাইকগাছার দুরন্ত পেয়েছে ২০ হাজার টাকা। বিশেষ বাছারি দলের প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করে ৫০ হাজার টাকা জিতে নেয় খুলনার সোনাডাঙ্গার ফলিয়া এন্টারপ্রাইজ। দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে ৩০ হাজার টাকা পেয়েছে গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ার সোনার তরী। আর তৃতীয় পুরস্কার ২০ হাজার টাকা পায় একই এলাকার মা-বাবার আশীর্বাদ। সন্ধ্যায় রূপসা ফেরি ঘাট চত্বরে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয় এবং পরবর্তীতে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
বিচারক : প্রতিযোগিতায় বিচারকের দায়িত্বে ছিলেন বাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ডের উপ-পরিচালক বিল¬াল হোসেন খান, খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ভেটেরিনারি সার্জন ডাঃ রেজাউল করিম, বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সহ-সভাপতি নিজাম উর রহমান লালু ও খুলনা জেলা ক্রীড়া সংস্থার সদস্য মোঃ মোতালেব হোসেন মিয়া।
উদ্বোধন ও র্যালি : সকালে এই আয়োজনকে ঘিরে নগরীতে আয়োজন করা হয় বর্ণাঢ্য র্যালি। দুপুরে রূপসা ১নং কাস্টম ঘাটে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের মধ্যদিয়ে বাইচ প্রতিযোগিতা শুরু হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক। জেলা প্রশাসক মোঃ হেলাল হোসেনের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য মিজানুর রহমান মিজান, কেএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার সর্দার রকিবুল ইসলাম ও পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্ল¬াহ। উপস্থিত ছিলেন গ্রামীণফোনের খুলনা সার্কেল বিজনেস হেড মোঃ আওলাদ হোসেন, হেড অব ব্র্যান্ড এন্ড ডিজিটাল মার্কেটিং নাফিস আনোয়ার চৌধুরী, খুলনা সার্কেল মার্কেটিং হেড আবুল হাসনাত ও রিজিওনাল হেড আহসান হাবিব, নগর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের প্রধান উপদেষ্টা শেখ আশরাফ-উজ-জামান, সভাপতি মোল¬া মারুফ রশীদ, সাধারণ সম্পাদক মোঃ মনিরুজ্জামান রহিম প্রমুখ। সমগ্র অনুষ্ঠান খুলনা সিটি কর্পোরেশন, খুলনা জেলা প্রশাসন, খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ, র্যাব, নৌ পুলিশ, বাংলাদেশ নৌ-বাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, বন বিভাগ, বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড, আনসার ও ভিডিপি, বিআইডব্লিটিএ, সড়ক ও জনপদ বিভাগ, বিদ্যুৎ বিভাগ, বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটি, রূপসা সেতু কর্তৃপক্ষ ও ট্রলার মালিক সমিতির তত্ত্বাবধানে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়।