আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের মধ্যে সাড়ে ৩ ঘণ্টা সংলাপ হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর গণভবনে সন্ধ্যা সাতটার দিকে সংলাপ শুরু হয়ে শেষ রাত সাড়ে ১০টায়। সংলাপ শেষে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি। তবে শুধু তিনি বলেন, তারা সংলাপে সন্তুষ্ট নন। সন্ধ্যা ৭টায় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ক্ষমতাসীন ১৪ দলীয় জোটের ২৩ নেতার সঙ্গে সংলাপ শুরু করেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ২১ নেতা। রাত সাড়ে ১০ পর্যন্ত সংলাপ চলে। এরপরই সংলাপে অংশ নেওয়া নেতারা একে একে বের হয়ে যান।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৪ দলীয় জোটের ২৩ নেতার সঙ্গে সংলাপে অংশ নেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ২০ নেতা। ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্ব দেন ড. কামাল হোসেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সংলাপে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় থাকার কথা থাকলে শেষ পর্যন্ত তিনি আর যোগ দেননি।
সন্ধ্যা সাতটার দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংলাপ কক্ষে ঢুকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এরপর সংলাপের শুরুতেই সূচনা বক্তব্য দেন তিনি। সূচনা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাঁর সরকার টানা ৯ বছর ১০ মাস ধরে ক্ষমতায়। দিন বদলের যে সূচনা তাঁরা করেছেন, সেই দিন বদল হচ্ছে। একে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার বলেন, আজকে আপনারা এসেছেন গণভবন ও জনগণের ভবনে, গণভবনে আপনাদের স্বাগত জানাই। তিনি বলেন, বাংলাদেশের জন্য আর্থসামাজিক উন্নয়নের কাজ করে যাচ্ছি এবং দীর্ঘ সংগ্রামের পথ পাড়ি দিয়ে গণতন্ত্র অব্যাহত রেখেছি। বাংলাদেশের এই উন্নয়নের গতিধারা অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে আজকের এই আলোচনা বিরাট অবদান রাখবে বলে মনে করি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই দেশটা আমাদের সকলের, মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করা, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং দেশের সার্বিক উন্নয়ন এটাই আমাদের মূল লক্ষ্য। আমি বিচারের ভার আপনাদের ওপর ছেড়ে দেব। দীর্ঘ নয় বছর ১০ মাস হতে চলল আমরা সরকারে আছি। এই সময়ের মধ্যে দেশে কত উন্নয়ন করতে পেরেছি, সেটা নিশ্চয়ই আপনারা বিবেচনা করে দেখবেন। এতটুকু বলতে পারি, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ ভালো আছে, তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটছে। দিনবদলের যে সূচনা করেছিলাম, সেই দিন বদল হচ্ছে এটাকে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাস্তবায়ন করে লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছি, আমাদের মহান নেতা জাতির পিতার নেতৃত্বে আমরা এ স্বাধীনতা অর্জন করেছি। আজকে সেই স্বাধীনতার সুফল যেন প্রতিটি মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছাতে পারে, সেটাই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করছি।
সংলাপে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক দল হিসেবে অংশ নেয়। বিএনপির পক্ষে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ স্থায়ী কমিটির ছয় সদস্য ছিলেন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে চলমান বিরোধের কারণে এই সংলাপের দিকেই আজ তাকিয়ে রয়েছে দেশের মানুষ। সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা একটি সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে যে অনিশ্চয়তা, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আস্থাহীনতা তা সংলাপের মাধ্যমে নিরসন হবে।
ঐক্যফ্রন্ট প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সংলাপে বসার আগ্রহের কথা জানিয়ে চিঠি দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী তাদের নৈশভোজের আমন্ত্রণ জানান। সেই আমন্ত্রণে ঐক্যফ্রন্ট গণভবনে সংলাপে গেলেও নৈশভোজে অংশ নেবে না বলে জানিয়েছে।
গণফোরাম, বিএনপি, জাসদ (জেএসডি) ও নাগরিক ঐক্য নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হয়। গঠনের পরই ৭ দফা দাবি মানতে আন্দোলনে নামে তারা। তবে সংলাপের কারণে সেই আন্দোলনে কিছুটা ভাটা পড়েছে। ইতিমধ্যে ঐক্যফ্রন্ট সিলেট ও চট্টগ্রামে সমাবেশ করেছে। কাল তাদের ঢাকায় সমাবেশ করার কথা আছে। এ ছাড়া ৬ নভেম্বর রাজশাহীতে সমাবেশ করার কথা রয়েছে।