আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এক জনসভার আয়োজন করে। সরকারের পদত্যাগ, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন ও খালেদা জিয়াসহ রাজবন্দীদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে এ জনসভার আয়োজন করা হয়।
জনসভায় সভাপতির বক্তব্যে বিএনপির মহাসচিব ও ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কর্মসূচির কথা বলেন। তিনি বলেন, আগামীকাল বুধবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিতীয় দফা সংলাপে ঐক্যফ্রন্টের দাবি-দাওয়া না মানা হলে ৮ নভেম্বর রোডমার্চ করে ৯ নভেম্বর রাজশাহীতে সমাবেশ করবে এই জোট। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশন যদি তফসিল ঘোষণা না পেছায়, তাহলে কমিশন অভিমুখে পদযাত্রা করবে ঐক্যফ্রন্ট।
আজকের সমাবেশে সব বক্তাই খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘আজকে আমি শুরুতেই বলি, খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করি এবং সকল রাজবন্দীর মুক্তি দাবি করি। যে দেশে বিরোধীদলীয় নেতাকে শ্রদ্ধা জানানো হবে না, সে দেশে গণতন্ত্র চলতে পারে না
রাস্তাঘাট বন্ধ করে আজকের সমাবেশে আসতে নেতা-কর্মীদের বাধা দেওয়া হয়েছে বলেও সমালোচনা করেন কামাল হোসেন। মামলা ও গ্রেপ্তারের হয়রানি বন্ধের দাবিও জানান। নয়তো এর জবাব সরকারকে দিতে হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
সরকারের পদত্যাগ, খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ ঐক্যফ্রন্টের দাবি আদায় না করে ঘরে ফিরবেন না বলে জানান জনসভার প্রধান বক্তা ও জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব। তিনি প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, ‘পদত্যাগ করে ছোট সরকার করেন। নয়তো সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে জাতির। তারপর হবে আপনার।’
জনসভায় উপস্থিত জনতার অধিকাংশই ছিল বিএনপি ও তার নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের। এখানে অংশ নেয় এলডিপি, কল্যাণ পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, ইসলামী ঐক্যজোট, জাগপা, এনডিপি। এ ছাড়া সোনার বাংলা পার্টি ও বিকল্পধারা থেকে বের হয়ে নতুন গড়া বিকল্পধারাও জনসভায় উপস্থিত ছিল।
গতকাল সোমবার জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেয় কাদের সিদ্দিকীর দল কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ। জনসভায় কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘আমি কিন্তু বিএনপিতে যোগ দিইনি। কামাল হোসেনের ঐক্যফ্রন্টে যোগ দিয়েছি।’ বিএনপির কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, বিজয়ী হতে হলে নির্বাচন পর্যন্ত বিএনপি ভুলে যান। এ ছাড়া খালেদা জিয়া জেলে গিয়ে গণতন্ত্রের প্রতীক হয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, মুক্তি খালেদা জিয়ার নয়, শেখ হাসিনার দরকার। এ জনসভা থেকে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার কথাও বলেন তিনি।
দুপুরে থেকেই জনসভায় ছোট ছোট মিছিল নিয়ে কর্মীরা আসতে থাকেন। তাঁদের ব্যানার ও মুখে স্লোগান ছিল খালেদা জিয়ার মুক্তি চাওয়া নিয়ে এবং তারেক রহমানকে নিয়ে। বক্তব্যে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের নেতারা অভিযোগ করেন, জনসভায় আসতে কর্মীদের বিভিন্ন জায়গায় বাধা ও অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়।
ঐক্যফ্রন্টের নেতা ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, খালেদা জিয়াকে জেলের মধ্যে রেখে মেরে ফেলতে চাচ্ছে। তাঁকে জেলে মরতে দেওয়া হবে না। এ ছাড়া তিনি বলেন, সংসদ বাতিল করে নতুন সরকার হলে সেখানে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না। সংসদ বাতিল না হলে রাজপথ প্রকম্পিত করে আন্দোলন করা হবে বলে জানান তিনি।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাত দফা না মানা হলে আন্দোলনে নামতে হবে বলে মন্তব্য করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, সাত দফার সঙ্গে জাতি ঐক্যবদ্ধ। প্রথম সংলাপে সমাধান হয়নি। এবার না হলে আন্দোলন চলবে।
সংলাপ ও তফসিল ঘোষণার তারিখ ঠিক করে সরকার পরস্পরবিরোধী অবস্থানে কাজ করছে বলে উল্লেখ করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য মওদুদ আহমদ। তিনি বলেন, সরকার আন্তরিক হলে তার প্রতিফলন হবে। প্রথম সংলাপে ঐক্যফ্রন্ট কিছুই পায়নি। দ্বিতীয় সংলাপে সমঝোতার মাধ্যমে কিছু না হলে মাঠে নামা ছাড়া কোনো বিকল্প থাকবে না। তিনি নেতা-কর্মীদের প্রস্তুত থাকার জন্য বলেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের খালেদা জিয়াকে প্যারোলে মুক্তি কথা বলা প্রসঙ্গে মওদুদ আহমদ বলেন, খালেদা জিয়া ২০০৮ সালে প্যারোলে মুক্তি নেননি। এবারও নেবেন না।
প্যারোল প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, খালেদা জিয়া নয়, আওয়ামী লীগকে প্যারোল নিয়ে কবরে যেতে হবে। এ ছাড়া বলেন, সাত দফা না মানা হলে দেশে কোনো নির্বাচন হতে পারবে না।
জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সদস্য সুলতান মোহাম্মাদ মনসুর বলেন, ঘরে ঘরে ঐক্য গড়ে উঠবে। ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনার জন্যই এ লড়াই।
বেলা দেড়টায় শুরু হওয়া এ জনসভা চলে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত। জনসভায় আরও বক্তব্য দেন গণফোরাম নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য জমিরউদ্দিন সরকার, রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের শহীদুল্লাহ কায়সার, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম প্রমুখ।