একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে চান বিএনপির মনোনয়নে চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র হওয়া এম. মনজুর আলম। এজন্য শনিবার ঢাকার ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগের কার্যালয় থেকে দলীয় মনোনয়নের ফরমও সংগ্রহ করেছেন তিনি। মনজুর বলেন, ‘‘নির্বাচন করার লক্ষ্যে ঢাকা থেকে দলীয় একটি মনোনয়ন ফরম কিনেছি।’’মনজুর আলমের পক্ষে তার চাচাতো ভাই আবুল কালাম আজাদ মনোনয়ন ফরমটি সংগ্রহ করেন বলে জানান তিনি।২০১০ সালে বিএনপির সমর্থন নিয়ে তিনবারের সাবেক মেয়র ও তারই রাজনৈতিক ‘গুরু’ চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রয়াত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে পরাজিত করে চট্টগ্রামের মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন মনজুর আলম। মেয়র হওয়ার পর মনজুরকে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হলেও তাকে দলীয় কর্মসূচি ও সরকারবিরোধী আন্দোলনে তেমন দেখা যেত না। পরবর্তীতে ২০১৫ সালে আবারও বিএনপির মনোনয়নে মেয়র পদে প্রার্থী হন মনজুর আলম। ভোটের দিন কয়েক ঘণ্টার মাথায় কারচুপির অভিযোগ তুলে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন তিনি। এরপর থেকে চট্টগ্রাম-১০ ডবলমুরিং আসনে সংসদ সদস্য পদে তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন বলে বিভিন্ন সময়ে শোনা যাচ্ছিল।মনজুর এই আসনেই আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। এ আসনে বর্তমানে সংসদ সদস্য হিসেবে আছেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী ডা. আফসারুল আমীন। তিনিও ওই আসনে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। একাদশ নসংসদ নির্বাচনে প্রার্থী করা নিয়ে আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায় থেকে সবুজ সঙ্কেত আছে কি না জানতে চাইলে মনজুর আলম বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, “আওয়ামী লীগ আমার বাবার আমলের দল। সেখান থেকে নির্বাচন করতে চাইছি।“দলের মনোনয়ন বোর্ডের কাছে ফরম জমা দেব, সাক্ষাৎকারও দেব, যখন ডাকবে যাব এবং নির্বাচনে অংশ নিতে চাই।’’মনজুর আলমের বাবা আবদুল হাকিম কন্ট্রাকটর ছিলেন চট্টগ্রামের পাহাড়তলী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিনি নগর আওয়ামী লীগের কার্যকরী সদস্যও ছিলেন। ১৯৯৪ সাল থেকে টানা ১৬ বছর মহিউদ্দিন চৌধুরী চট্টগ্রামের মেয়রের দায়িত্ব পালনকালে মনজুর ছিলেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর। সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় মহিউদ্দিন গ্রেপ্তার হলে ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পান মনজুর।এরপর ২০১০ সালের ১৭ জুন প্রায় এক লাখ ভোটের ব্যবধানে মহিউদ্দিনকে হারিয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (সিসিসি) মেয়র নির্বাচিত হন বিএনপি সমর্থিত মনজুর।মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর মনজুর ঢাকায় এসে খালেদা জিয়ার হাতে ফুল দিয়ে কৃতজ্ঞতা জানান, পেয়ে যান বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টার পদ।মেয়র থাকাকালে মনজুরের ‘ব্যর্থতা’ নিয়ে নানা মহলে সমালোচনা হলেও তাতে কখনো যোগ দেননি মহিউদ্দিন। আর ‘গুরু’ মহিউদ্দিন প্রসঙ্গে মনজুরের কণ্ঠও শ্রদ্ধার কথা শোনা গেছে সব সময়।তাদের দুজনের পারিবারিক সখ্যের কথাও চট্টগ্রামের রাজনৈতিক অঙ্গনে সবার জানা। মেয়র থাকাকালে মহিউদ্দিনের নামে নগরীর একটি সড়কের নামকরণেরও ঘোষণা দেন মনজুর।২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল বিএনপির প্রার্থী হিসেবে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট বর্জনের ঘোষণার পর রাজনীতি ছাড়ারও ঘোষণা দিয়েছিলেন মনজুর আলম।ওই নির্বাচনে জয়ী মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে মহিউদ্দিনবিরোধী শিবিরের নেতা হিসেবে পরিচিত।এরপর ২০১৬ সালের ১ অক্টোবর বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের এক অনুষ্ঠানে এক মঞ্চে পাশাপাশি বসেছিলেন মহিউদ্দিন ও মনজুর আলম।এরপরই চট্টগ্রামের রাজনৈতিক অঙ্গনে জোর গুঞ্জন শুরু হয়, মনজুরকে দলে ফেরাতে আগ্রহী মহিউদ্দিন।
সূত্র : বিডি নিউজ২৪.কম