জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বিএনপি বাদে ৪ শরিক দল দেড় শ আসনে প্রার্থী দেওয়ার কথা ভাবছে। প্রতিটি দলই মনে করছে নিজেদের ‘যথেষ্ট’ ভোট রয়েছে মাঠে। তবে শেষ পর্যন্ত বিএনপি কতটি আসনে জোট শরিকদের ছাড় দেয়, তা দেখার অপেক্ষায় রয়েছে সকলে।
২০১৪ সালের নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পাঁচ দলের কেউই অংশ নেয়নি। এবার বিএনপি, গণফোরাম, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, জেএসডি, নাগরিক ঐক্য মিলে গঠিত ঐক্যফ্রন্টের সবচেয়ে বড় দল বিএনপি চারদলীয় জোট নিয়ে ২০০৮ সালের নির্বাচন করে। সেবার দলটি তাঁর শরিকদের জন্য ৪১টি আসন ছেড়েছিল। বিএনপি এবার একই সঙ্গে দুটি জোটভুক্ত। ২০–দলের সঙ্গে সম্প্রতি নতুন তিনটি দল যোগ হয়ে এটি এখন ২৩-দলীয় জোট। অন্যদিকে গত অক্টোবরে গঠিত হওয়া জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের জোটেও তারা সবচেয়ে বড় দল।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এবার বিএনপিকে অন্যবারের চেয়ে বেশি আসন ছাড়তে হবে। দুই জোটের শরিকদেরই আসনের চাহিদা বেশি। আজকে থেকেই ঐক্যফ্রন্টের শরিকেরা নিজ দলের প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ শুরু করেছে। আজ রোববার বিকেল থেকে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের বাসায় দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের ডাকা হয়েছে। চলবে আগামীকাল পর্যন্ত। অন্য দলগুলোও দু–এক দিনের মধ্যে প্রার্থীদের সঙ্গে বসবে।
সূত্র জানায়, তারা মনে করে ঐক্যফ্রন্টের মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম দল গণফোরাম। এবারের নির্বাচনে তাদের চাওয়া থাকবে ৭০ থেকে ৭৫টি আসন। ইতিমধ্যে প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ শুরু হয়ে গেছে। খুব দ্রুতই তারা আসন ধরে প্রার্থী ঠিক করবে। গণফোরামের মিডিয়া উইং কর্মকর্তা লতিফুল বারী হামিম প্রথম আলোকে বলেন, আগামীকাল তফসিল পেছানোর দাবি নিয়ে ঐক্যফ্রন্ট থেকে ইসিতে একটি প্রতিনিধিদল যাবে। তারপরই জোটের স্টিয়ারিং কমিটির একটি বৈঠক হবে। সেখানই আসনসহ অন্যান্য বিষয়ে আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি আরও জানান, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু ঢাকা-২ ও ৩ আসন থেকে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
জেএসডি এবার ৩০ থেকে ৩৫টি আসন চাইবে। দলটির একজন শীর্ষ নেতা জানান, ঐক্যফ্রন্টের প্রায় সব কটি দলেরই গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। সব দলই নিজেদের ভালো অবস্থান জানান দিতে চাইবে। এই নেতা বলেন, জেএসডি পুরোনো একটি দল। ভোটেও তারা পিছিয়ে থাকবে না। সে হিসাব করেই তারা সাধ্য অনুযায়ী আসন নেওয়ার চেষ্টা করবে।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে সর্বশেষ যোগ দেওয়া দল কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ। দলের যুগ্ম সম্পাদক ইকবাল সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, আগামীকাল থেকে তাঁরা মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করবে। আলোচনা করে আসনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এই দলটিও ২০টির মতো আসন চাইতে পারে।
নির্বাচন কমিশন থেকে নিবন্ধন পায়নি নাগরিক ঐক্য। জোটভুক্ত হয়েই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন দলটির নেতারা। নাগরিক ঐক্যের নেতা শহীদুল্লাহ কায়সার বলেন, এখনো কিছুই ঠিক হয়নি। তবে তিনি জানান, তাঁদের দলে ২০ থেকে ৩০ জন প্রার্থী আছেন নির্বাচনে জিতে আসার মতো।
স্বাভাবিকভাবেই এবার বিএনপিকে বেশি আসন ছেড়ে দিতে হবে। বিএনপির এক সূত্র জানায়, গুরুত্বপূর্ণ আসনগুলোর ব্যাপারে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করা হবে। নিজেদের ঘাঁটি যেসব জায়গায় সেখানে বিএনপি আসন ছাড়বে না। তবে জোটের কোনো গুরুত্বপূর্ণ নেতা সেসব আসনের কোথাও নির্বাচন করতে চাইলে বিবেচনা করা হবে। তবে সবকিছুই নির্ভর করবে প্রার্থী দেখে।
বিএনপির ২০–দলীয় জোট ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করার জন্য ইসিতে চিঠি দিয়েছে। দলের এক সূত্রে জানা যায়, ঐক্যের প্রতীকে নির্বাচন করতে হলে সেটা ধানের শীষই হবে। অনেকের সেটাই চাওয়া। তাহলে কোনো জটিলতা থাকবে না। এদিকে গণফোরাম আজ ইসিকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে, তারা দলীয় প্রতীক উদীয়মান সূর্য অথবা ঐক্যফ্রন্টের প্রতীকে নির্বাচন করবে। কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ তাদের নিজস্ব প্রতীক গামছাতেই নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিএনপির এক নেতা জানান, এবার শরিকদের জন্য দলটি ৬০ থেকে ৭০টি আসন ছাড়ার কথা ভাবছে। কারণ শেষ পর্যন্ত প্রার্থী ও মাঠে ভোট কার কতটুকু আছে, সেটাই বিবেচ্য হবে। আগামীকাল সোমবার থেকে তাঁরা মনোনয়নপত্র বিক্রি শুরু করবেন।
ঐক্যফ্রন্টের চারটি দলেরই নিজস্ব প্রতীক রয়েছে। আজ প্রেসক্লাবের সংবাদ সম্মেলনে জোটের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেনের কাছে প্রতীকের ব্যাপারে সাংবাদিকেরা জানতে চান। এ বিষয়ে পরে জানানো হবে বলে জানান তিনি। তবে ঐক্যফ্রন্টের একাধিক নেতা বলছেন, জোটের জন্য যদি একটি প্রতীক ঠিক করা হয়, সেটা বিএনপির প্রতীক ধানের শীষ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। জোটের এক গুরুত্বপূর্ণ নেতা বলেন, জোটের একটি বড় দল হিসেবে বিএনপির প্রতীক এগিয়ে। তবে দলীয় প্রতীক ও জোটের প্রতীক থাকতে পারে। সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতে জোটভুক্ত দলের কোনো এক প্রতীককেই বেছে নেওয়া হবে।