নিরাপদ সড়কের আন্দোলনের সময় উসকানিমূলক বক্তব্য প্রচারের অভিযোগে তথ্য-প্রযুক্তি আইনের মামলায় তিন মাস ধরে কারাগারে থাকা আলোকচিত্রী শহিদুল আলমকে জামিন দিয়েছে হাই কোর্ট।
তার জামিন প্রশ্নে এক মাস আগে অন্য একটি বেঞ্চের দেওয়া রুল যথাযথ ঘোষণা করে বিচারপতি শেখ আবদুল আউয়ালও বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তীর হাই কোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেয়।
আদালতে শহিদুল আলমের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সারা হোসেন ও জ্যেতির্ময় বড়ুয়া। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
পরে সারা হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, জামিন পাওয়ায় শহিদুল আলমের মুক্তিতে আর কোনো বাধা থাকল না।
“হাই কোর্ট থেকে আজ বলা হল, যেহেতু উনাকে অনেকদিন ধরে আটকে রাখা হয়েছে, ১০২ দিন হয়ে গেছে এবং রিমান্ডে নেওয়ার পরও কোথাও তিনি কখনও স্বীকার করেননি যে এরকম কোনো বক্তব্য তিনি দিয়েছেন; আজ উনাকে জামিন দেওয়া হচ্ছে।
এই আইনজীবী বলেন, শহিদুলের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়ার যে অভিযোগ আনা হয়েছে আর পুলিশ প্রমাণ হিসেবে যা দিয়েছে, সেগুলোর ‘মিল নেই’।
“যেহেতু তিনি এই উপমহাদেশে এমনকি সারা বিশ্বের একজন নামকরা আলোকচিত্রী, এই বিষয়টাও আদালত বিবেচনায় নিয়েছেন। এই মুহুর্তে উনার মুক্তি পেতে বাধা নাই। সরকার যদি আবারও বিরোধিতা করে সেটা পরে দেখা যাবে।”
জামিন আদেশের পর শহীদুল আলমের স্ত্রী রেহনুমা আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, “আমি খুবই খুশি। বাংলাদেশের বিচারালয়ের ওপর আস্থা ফিরে পেয়েছি। এটা (জামিন) হওয়ারই কথা ছিল।”
অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আলী জিন্নাহ বলেন, এই জামিন আদেশের বিরুদ্ধে তারা আপিলে যাবেন।
নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে গত ৩ ও ৪ অগাস্ট জিগাতলা এলাকায় সংঘর্ষের বিষয়ে কথা বলতে বেশ কয়েকবার ফেইসবুক লাইভে এসেছিলেন অধিকারকর্মী শহিদুল। ওই আন্দোলনের বিষয়ে আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি সরকারের সমালোচনাও করেন।
এরপর ৫ অগাস্ট শহিদুল আলমকে তার বাসা নিয়ে যায় গোয়েন্দা পুলিশ। পরদিন ‘উসকানিমূলক মিথ্যা’ প্রচারের অভিযোগে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের মামলা করে তাকে আদালতে তোলা হলে বিচারক তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে পাঠায়।
১১ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ ইমরুল কায়েস শহিদুল আলমের জামিন আবেদন নাকচ করেন। এরপর ১৬ সেপ্টেম্বর তিনি হাই কোর্টে জামিন আবেদন করলে ৩ অক্টোবর শুনানি শুরু হয়।
শুনানি শেষে গত ৭ অক্টোবর হাই কোর্ট শহিদুল আলমের জামিন প্রশ্নে রুল জারি করে। কেন জামিন দেওয়া হবে না- তা জানতে চাওয়া হয় রুলে। এক সপ্তাহের মধ্যে রাষ্ট্রকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
সেই রুলের ওপর বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি এস এম মজিবুর রহমানের হাই কোর্ট বেঞ্চে শুনানি শুরু হলেও গত ১ নভেম্বর মামলাটি ওই বেঞ্চের কার্যতালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়।
এরপর সহিদুল আলমের আইনজীবীরা বিচারপতি শেখ আবদুল আউয়ালও বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তীর হাই কোর্ট বেঞ্চে গিয়ে নিজেদের পক্ষে আদেশ পেলেন।