আগুন সন্ত্রাস আবার শুরু হয়েছে: আওয়ামীলীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা

408

আজ বৃহস্পতিবার ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভার সূচনা বক্তব্যে ‘সাজাপ্রাপ্ত ও খুনিদের’ সঙ্গে ঐক্য করা নেতাদেরও সমালোচনা করে আওয়ামলীগ সভানেত্রী বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ‘আগুন সন্ত্রাস আবার শুরু হয়েছে’।

তিনি বলেছেন, “আমি তাদেরকে বলব, নির্বাচনে যেহেতু আসবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নির্বাচনটা যেন সুষ্ঠভাবে হয় সেটাই চেষ্টা করা। অন্তত নির্বাচন বানচালের চেষ্টা যেন তারা না করে।” ভোটের তোড়জোড়ের মধ্যে ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে পুলিশের সঙ্গে দলটির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের পরদিন শেখ হাসিনার এ প্রতিক্রিয়া এলো।

নির্বাচন সামনে রেখে মনোনয়ন ফরম বিক্রির কার্যক্রমের মধ্যেই বুধবার দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় দলটির নেতাকর্মীরা।

এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে ওই সংঘর্ষে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। আহত হন পুলিশ সদস্যসহ অর্ধশতাধিক।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কাঁদুনে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে। অন্যদিকে বিএনপি কর্মীরা বেশ কিছু যানবাহন ভাংচুর করে এবং পুলিশের দুটি গাড়িতে আগুন দেয়।

বিএনপি ওই ঘটনার জন্য সরকারকে দায়ী করে বলেছে, পুলিশ বিনা উসকানিতে তাদের নেতাকর্মীদের ওপর ‘হামলা’ চালিয়েছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ বলেছে, নির্বাচন ‘বানচালের ষড়যন্ত্র’ থেকেই বিএনপি হামলায় ‘উসকানি’ দিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এই চেষ্টা তারা ২০১৪ তে করেছে, সফল হতে পারেনি। আগামীতেও পারবে না। কারণ জনগণ আমাদের সাথে আছে। জনগণ চায়, একটা উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন হোক। যে নির্বাচনে তারা ভোট দিয়ে তাদের মন মত সরকার গঠন করবে।”

সরকারপ্রধান বলেন, নির্বাচনে সব দল আসার ঘোষণায় দেশে যখন একটি উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়েছে, তখনই নয়াপল্টনের ওই ঘটনা ঘটল।

“জনগণ যখন উৎসবমুখর হয় তখনতো বিএনপির খুব খারাপ লাগে। তারা সেই উৎসবে পানি ঢালে। সেটাই কালকে আমরা দেখলাম।… কোনো কথা নেই বার্তা নেই। সেখানে বিএনপির এক নেতা তার মিছিল নিয়ে এলো। যেটা মিছিল নিয়ে আসার কথা না। তারপরও নিয়ে এসে সেখানে মারপিট… অনেকগুলো পুলিশ আহত। তিনটা গাড়িও পোড়ালো।”

শেখ হাসিনা বলেন, “২০১৪ সালে তারা যে অগ্নিসন্ত্রাস করেছিল, ২০১৫ সালে অগ্নিসন্ত্রাস করেছে, আবার ঠিক সেই অগ্নিসন্ত্রাস শুরু করল। মানে অগ্নিসন্ত্রাস ছাড়া, মানুষকে আগুন দিয়ে পোড়ানো ছাড়া বিএনপি কোনো কাজ করতে পারে না- এটাই প্রমাণ।”

দশম সংসদ নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়ে ২০১৩ সালের শেষ দিকে নির্বাচন প্রতিহত করতে আন্দোলনে নামে বিএনপি-জামায়াত জোট। এরপর ভোটের বর্ষপূর্তিতে ২০১৫ সালের প্রথম তিন মাস তাদের টানা হরতাল-অবরোধ চলে।

ওই আন্দোলনের মধ্যে সারা দেশে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। পেট্রোল বোমা হামলায় বহু মানুষের প্রানহানি ঘটে, আহত হন আরও অনেকে। শত শত যানবাহন পোড়ানো হয়, বিভিন্ন স্থাপনারও ক্ষয়ক্ষতি হয়।

নয়া পল্টনের ঘটনায় ক্ষমতাসীনদের দায়ী করে বিএনপি যে অভিযোগ করেছে, তা নাকচ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এ ধরনের কাজ করার পর উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে দেওয়া, মানে একজনের দোষ আরেকজনের ওপর দেওয়া- এই কাজে তারা পারদর্শী।

“যেখানে একেবারে ভিডিও ফুটেজসহ দেখাচ্ছে, সেখানে একেবারে চট করে বলে ফেলল (অগ্নিসংযোগকারীরা) আমাদের ছাত্র লীগের…। ছাত্রলীগ, যুবলীগ বিএনপির অফিসের সামনে যাবে কেন? আর চেহারাতো দেখাই যাচ্ছে। সবইতো বিএনপির গুণ্ডারা এবং সন্ত্রাসী বা জামায়াতের গুণ্ডা সন্ত্রাসীরা।”

সংঘর্ষের সময় পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “পুলিশকে মারা এটাতো আমরা ২০১৪ সালেও দেখলাম, ১৫ সালেও দেখলাম। আবার গতকালও। পুলিশকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তারা খুব সহনশীলতা দেখিয়েছে। দুইটা গাড়ি সম্পূর্ণ পুড়ে ভষ্মীভূত, একটা আংশিক।

“এভাবে মানুষের জানমাল নষ্ট করা এবং যখন মানুষের একটা আনন্দ উৎসব, সেই সময় এই ধরনের ঘটনা ঘটানো অত্যন্ত দুঃখজনক, আমি নিন্দা জানাই।”

আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভায় ‘এক সময় বড় বড়’ কথা বলা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতাদেরও সমালোচনা করেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “সাজাপ্রাপ্ত আসামি, তাদের নিয়ে তারা দল করে। তাদের (বিএনপি) দলের গঠণতন্ত্রের সাত অনুচ্ছেদও এখন তারা অস্বীকার করে। যে কোনো সাজাপ্রাপ্ত, খুনি, ডাকাত, দুর্নীতিবাজ সবাই তাদের নেতা হতে পারে। আর এদের সাথে যারা এখন যুক্ত হয়েছে, তারা বড় বড় কথা বলে এখন দেখা যাচ্ছে তারা এই দলের সাথেই যুক্ত।”

নির্বাচন সামনে রেখে সম্প্রতি বিএনপির সঙ্গে গণফোরাম, জেএসডি, নাগরিক ঐক্য মিলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নামে একটি জোট গঠন করেছে, যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন আওয়ামী লীগেরই সাবেক নেতা কামাল হোসেন। ঐক্যফ্রন্ট বিএনপির প্রতীক ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন করারও ঘোষণা দিয়েছে।

বিএনপির নেতৃত্বের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “দেশের এগিয়ে যাওয়াটা তারা নস্যাৎ করতে চায়। সাধারণ মানুষ যখন সুখে থাকে, বিএনপির মনে তখন দুঃখ দেখা দেয়। নইলে এতিমের অর্থ আত্মসাত করতে পারে না। এতিমের অর্থ আত্মসাত করেই কারাগারে তাদের নেত্রী। আরেক জনতো গ্রেনেড হামলা, মানি লন্ডারিং… নানান অপকর্ম, তার জন্য সাজাপ্রাপ্ত।”

তারপরও নির্বাচনে আসার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় বিএনপিকে সাধুবাদ জানান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। সেই সঙ্গে জনগণকে তিনি সতর্ক থাকার আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “তাও ভালো। আমি চাই নির্বাচনটা হোক। মানুষ যেন স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারে সেই পরিবেশটা থাক।… দেশবাসীকে আমি অনুরোধ জানাব, যে কোনো ধরনের সন্ত্রাস, অগ্নিসন্ত্রাস, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড তাদেরকে রুখে দাঁড়াতে হবে। ভোটের, গণতন্ত্রের ও সাংবাবিধানিক অধিকার রক্ষা করতে হবে। নেজন্য আমরা জনগণের পাশে আছি এবং সবসময় আমরা পাশে থাকব।”

শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ গত ১০ বছরে যে উন্নয়ন করেছে, তাতে আগামী নির্বাচনেও জনগণের ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে নির্বাচিত করবে বলে তার বিশ্বাস।

“নির্বাচনে জনগণ নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে তাদের জীবনমান, উন্নয়নের গতিধারা অব্যাহত রাখবে, সে বিশ্বাস আমার আছে। জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ আমরা গড়ব।”

এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছে প্রায় চার হাজার মনোনয়ন প্রত্যাশী। এতজনের মধ্যে থেকে ‘বাছাই করাও কঠিন কাজ’ বলে মন্তব্য করেন দলীয় প্রধান।

শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সংসদীয় বোর্ডের সভা শুরু হয় বিকাল সাড়ে ৩টায়। বোর্ডের সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, ওবায়দুল কাদের, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কাজী জাফরউল্লাহ, অধ্যাপক ড. আলাউদ্দীন, রশিদুল আলম, ড. আব্দুর রাজ্জাক ও ফারুক খান বৈঠকে উপস্থিত রয়েছেন। সূত্র : বিডি নিউজ ২৪.কম