নরসিংদীতে আওয়ামী লীগের দুপক্ষের সংঘর্ষ : নিহত ৪

449

নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার চরাঞ্চল বাঁশগাড়ি ও নীলক্ষায় পৃথক ঘটনায় ফের আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় প্রতিপক্ষের গুলিতে এক এসএসসি পরীক্ষার্থীসহ ৪ জন নিহত হয়েছে। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছে আরও ১৬ জন। আজ শুক্রবার ভোরে বাঁশগাড়ি ইউনিয়নের বাঁশগাড়ি গ্রামের বালুমাঠ এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এই ঘটনা ঘটে। এসময় তোফায়েল রানা নামে এক স্কুল ছাত্র নিহত হয়। আহত হয় কমপক্ষে ৬ জন। আহতদের মধ্যে আশংকাজনক অবস্থায় ৩ জনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে বেলা ২টার দিকে নীলক্ষায় গোপীনাথপুর, কান্দাপাড়া এলাকায় আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে করে সোহরাব মিয়া ও মরম আলীসহ অজ্ঞাত আরো ১ ব্যক্তি নিহত হয়েছে।

নিহত ছাত্রের নাম তোফায়েল রানা (১৬)। সে একই গ্রামের আবদুল্লাহ ফকিরের ছেলে এবং স্থানীয় বাঁশগাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরিক্ষার্থী। স্থানীয় রাজনীতিতে সে বাঁশগাড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত হাফিজুর রহমান সাহেদ সরকারের সমর্থক হিসেবে পরিচিত।

নিহতের স্বজন ও পুলিশ জানায়, দীর্ঘদিন যাবত আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বাঁশগাড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত হাফিজুর রহমান সাহেদ সরকারের সমর্থক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য ও সাবেক চেয়ারম্যান প্রয়াত সিরাজুল হকের সমর্থকদের মধ্যে দ্বন্ধ চলে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় দুই পক্ষের হামলা ও পাল্টা হামলায় চেয়ারম্যান সিরাজুল হকসহ একাধিক নিহতের ঘটনা ঘটেছে।

এরই জের ধরে শুক্রবার সকালে বাঁশগাড়ি গ্রামের বালুমাঠ এলাকায় বর্তমান চেয়ারম্যান আশরাফুল হক ও বাবুল মেম্বারের সর্মথক ও প্রয়াত হাফিজুর রহমান সাহেদ সরকারের সমর্থক জামাল, জাকির ও সুমনের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ঘটনাস্থলেই গুলিবিদ্ধ হয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থী তোফায়েল রানা নিহত হয়। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয় পেয়েরাকান্দী গ্রামের সফর আলীর দুই ছেলে সুমন মিয়া (২৮), মামুন মিয়া (২৫) ও মির্জাচর গ্রামের আবদুল খালেকের ছেলে সুমন (২৬)সহ ৬ জন।  তাদেরকে নরসিংদী সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়া গুলিবিদ্ধ ৩ জনকে আশংকাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

হাসপাতালে নিহত এসএসসি পরীক্ষার্থী তোফায়েল রানার বাবা আবদুল্লাহ ফকির বলেন, ঝগড়া-বিবাদের জন্য এলাকা ছেড়ে পরিবার নিয়ে নরসিংদী চলে এসেছি। ছেলে পরীক্ষার খোঁজ খবর নিতে গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিল। সেখানে দুই পক্ষের গোলাগুলির মাঝে পড়ে তাকে প্রাণ হারাতে হয়েছে। এভাবে আর কত বাবার বুক খালি হলে থামবে বাঁশগাড়ির এই রক্তক্ষয়ী বিবাদ তা আমাদের জানা নেই। আমি ছেলে হত্যার বিচার চাই।

এ দিকে পৃথক ঘটনায় নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার নীলক্ষার গোপীনাথপুর বীরগাও কান্দাপাড়া গ্রামে  আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে সোহরাব মিয়া (৩০) মরম আলী(৪৫)সহ অজ্ঞাত আরো এক ব্যাক্তি নিহতের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছে অন্তত আরও ১০ জন আহত হয়েছে। শুক্রবার বেলা ১টার দিকে বীরগাও কান্দাপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত সোহরাব মিয়া একই এলাকার ওসমান মিয়ার ও মরম আলী  নাসিরউদ্দিনের ছেলে। নিহত অপর ব্যক্তির পরিচয় পাওয়া যায়নি।

পুলিশ জানায়, দীর্ঘদিন যাবত আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নীলক্ষা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হক সরকার ও বর্তমান চেয়ারম্যান তাজুল ইসলামের সমর্থকদের মধ্যে দ্বন্ধ চলে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার দুপুরে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে আবদুল হক সরকারের সমর্থকদের উপর হামলা চালায় তাজুল ইসলাম সরকারের সমর্থকরা। তবে আবদুল হক সরকার ও তাজুল ইসলাম সরকার দুজনই স্থানীয় আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় সদস্য। হামলার এক পর্যায়ে তাজুল ইসলামের সমর্থক সোহরাব মিয়া,মরমআলী ও অজ্ঞাত ব্যক্তি ঘটনাস্থলেই মারা য়ায়। এতে করে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।

রায়পুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মহসিন উল কাদির ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। পৃথক দুইটি ঘটনাই আধিপত্য বিস্তারের জের ধরে ঘটেছে। এই ঘটনায় থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।