ইজতেমা ময়দান রণক্ষেত্র , নির্বাচনের আগে ময়দানে জমায়েত নয় : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

482

টঙ্গিতে বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে তাবলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে দেড় শতাধিক আহত হয়েছে। হামলা সংঘর্ষে মুন্সিগঞ্জের ইসমাইল মন্ডল (৭০) মারা গেছেন বলে এক পক্ষ দাবি করেছে। তবে তার লাশ কোথায় আছে এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

অন্যদিকে নিরাপত্তার স্বার্থে নির্বাচনের আগে ইজতেমা ময়দানে কোন ধরনের জমায়েত হবে না বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। মন্ত্রী আরও বলেন, নির্বাচনের পরে দু’পক্ষের সঙ্গে বৈঠকে করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানানো হবে।

আজ  শনিবার (১ ডিসেম্বর) বিকালে তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের মধ্যেই বিবাদমান দুই পক্ষকে নিয়ে বৈঠকে বসেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। সচিবালয়ে এই বৈঠক শুরু হয়। এতে দিল্লি মারকাজের মাওলানা মোহাম্মদ সাদ কান্ধলভিপন্থী বাংলাদেশে তাবলিগের শুরা সদস্য সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম এবং তাদের বিরোধী মাওলানা জুবায়েরের পক্ষ থেকে মাওলানা আশরাফ আলী, আবদুল কুদ্দুসসহ অন্যান্য নেতারা উপস্থিত রয়েছেন।

দুই পক্ষের বিবাদের কারণে জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য বিশ্ব ইজতেমা পেছানোরও সিদ্ধান্ত হয়। এর মধ্যেই শনিবার টঙ্গীতে পাঁচ দিনের জোড় ইজতেমা নিয়ে দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। দফায় দফায় সংঘর্ষে একজনের মৃত্যু ও দুই শতাধিক মানুষ আহত হয়।

বৈঠকে পুলিশের মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়াসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, মাওলানা ফরিদ উদ্দীন মাসঊদ উপস্থিত রয়েছেন।

উল্লেখ্য এর আগে আজ শনিবার (১ ডিসেম্বর) টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে তাবলিগ জামাতের দু ’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে ইসমাইল নামে এক মুসল্লি নিহত হয়। নিহত ইসমাইল মন্ডলের বাড়ি মুন্সিগঞ্জে।

মাওলানা সাদ আহমাদ কান্ধলভী ও মাওলানা জোবায়ের আহমেদ সমর্থকদের মধ্যে এ ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। দু পক্ষের সংঘর্ষে ইজতেমা ময়দান রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। আহত হন অন্তত তিন শতাধিক মুসল্লি।

সংঘর্ষে নিহত হওয়ার এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার আরিফ। গত ৩০ নবেম্বর শুক্রবার থেকে পাঁচ দিনব্যাপী জোড় ইজতেমার ঘোষণা দিলে মাওলানা জোবায়েরপন্থীরা এর বিরোধিতা করেন এবং জোড় ইজতেমা প্রতিহতের ঘোষণা দেন।

এর পরই এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। আহতরা সবাই টঙ্গী সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে জড়ো হয়েছেন। দেখা গেছে, আহত অধিকাংশ মুসল্লির মাথা, নাক ও পিঠ দিয়ে রক্ত ঝরতে। এ ঘটনায় ইজতেমা ময়দান ও তার আশপাশের এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

সংঘর্ষে দুইপক্ষ একে অন্যের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও লাঠিসোটা দিয়ে আঘাত করে। এতে মো. সাইফুল ইসলাম (৪০), মাওলানা তাওহিদুল ইসলাম (৫৫), হাফেজ আবু বক্কর (৩৫), মো. গোলাম কিবরিয়াসহ (৪২) অন্তত শতাধিক মুসল্লি আহত হন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শত শত আহত মুসল্লির চাপে হাসপাতালের নার্স ও চিকিৎসকরা হিমসিম খেতে থাকেন বিষয়টি নিয়ে টঙ্গী সরকারি হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. পারভেজ হোসেন বলেন, এক সঙ্গে রক্তাক্ত জখমের এত রোগী টঙ্গী হাসপাতালে আর আসেনি। আমরা সবাই মিলে তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছি।

বিষয়টি নিয়ে টঙ্গী পূর্ব থানার অফিসার ইনচার্জ কামাল হোসেন জানান, দুপুরে মুসল্লিদের দুইপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে উভয়পক্ষের বেশ কিছু মুসল্লি আহত হয়েছেন। তাৎক্ষণিকভাবে আহতদের সংখ্য তিনি জানাতে পারেননি।

এর আগে আজ শনিবার (১ ডিসেম্বর) সকাল থেকেই উত্তেজনা বিরাজ করছিল টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানসহ আশপাশের এলাকায়। এক সময় তাবলীগ-জামায়াতের দু’পক্ষের সদস্যরা ইজতেমা ময়দান, ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়ক, আব্দুল্লাহপুর থেকে কামারপাড়া হয়ে আশুলিয়ার দিকে অবস্থান নেন।