মনোনয়নপত্র বাতিলের মধ্যদিয়ে সরকারের মুখোশ উন্মোচিত হয়েছে : রিজভী

473

আজ রবিবার দুপুর ১২ টায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রিয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সহ দলটির অন্যান্য নেতাদের মনোনয়নপত্র বাতিল সরকারের দানবীয় আচরণ এবং এটি তাদের নিখুঁত মাষ্টার প্লানের অংশ । তিনি বলেন, মনোনয়নপত্র বাতিলের মধ্যদিয়ে সরকারের মুখোশ উন্মোচিত হয়েছে। এটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দূরভিসন্ধিমূলক তাদের মাস্টার প্লানেরই অংশ।তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী বলেন, নির্বাচন বানচালের জন্য সরকার দেশব্যাপী ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। ক্ষমতার  মৌতাতে বুঁদ হয়ে থাকার জন্যই অবৈধ শাসকগোষ্ঠী আসন্ন নির্বাচন নিয়ে মাষ্টারপ্ল্যানে ব্যস্ত আছে। তফশীল ঘোষণার শুরু থেকেই নির্বাচনের পরিবেশ যেন আরও অবনতি হয়েছে। নৌকার পক্ষে হালে পানি না পাওয়ায় বিএনপিসহ বিরোধীদলের মনোনয়ন প্রত্যাশী ও নেতাকর্মীদের শুধুমাত্র মিথ্যা মামলা দায়ের ও গ্রেপ্তার করেই সরকারের সাধ মিটছে না, এখন তাদের ভিটে-মাটিতে ঘু ঘু চরিয়ে দিতে তারা সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে। সারাদেশে প্রার্থীসহ বেছে বেছে বিএনপি’র সক্রিয়  নেতাকর্মী ও সমর্থকদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, গুম করা হচ্ছে।

প্রার্থীসহ নেতাকর্মী ও সমর্থকদের বাড়িতে বাড়িতে হামলা চালচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। আর এসব কিছু  নেপথ্য থেকে নিয়ন্ত্রণ করছে দু’টি শক্তিশালী কেন্দ্র একটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও অন্যটি গণভবন।

বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, নির্বাচন কমিশন হুকুম-বরদার মাত্র। কমিশন শুধু ওই দুই কেন্দ্রের সহযোগী হিসেবে কাজ করছে। দেশে বিরোধী দলশুন্য নির্বাচনী মাঠ তৈরী করতেই এসব ঘৃণ্য অপকর্ম সাধন করা হচ্ছে। যেভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিএনপিসহ বিরোধীদলীয়  নেতাকর্মীদেরকে ছোঁ মেরে তুলে নিচ্ছে, গুম করছে, গ্রেপ্তারের পর অস্বীকার করছে, রিমান্ডে নিয়ে অকথ্য নির্যাতন চালাচ্ছে এবং জামিনে মুক্তিলাভের পরও জেলগেট থেকে শ্যোন অ্যারেস্ট করা হচ্ছে, তাতে সারাদেশে এক রক্ত-শীতল করা আতঙ্কজনক পরিবেশ বিরাজমান হয়েছে। জনগণকে  ভোট থেকে দূরে রাখার জন্য তারা পরিকল্পিতভাবে ভোটের পরিবেশ বিনষ্ট করার পাঁয়তারা করছে। পুলিশসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে সরকারী দলের অনাচারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার ঘটনা থেকেই মনে হয়, তারা ভোটারদের ভীতিগ্রস্ত করতে চায়। বাংলাদেশের ইতিহাসে নির্বাচনের সময় এমন ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি কখনো দেখা যায়নি। সুপরিকল্পিত মাষ্টারপ্ল্যানের অংশ হিসেবেই এসব করা হচ্ছে নৌকাকে জালিয়াতির মাধ্যমে বিজয়ী করার জন্য।

নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, নির্বাচন কমিশন হয় অন্ধ, না হয় কানা। প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ কতিপয় কমিশনার সরকারের পক্ষে নিজেদের নিয়োজিত রেখেছেন। নির্বাচন কমিশন, পুলিশ প্রশাসন, আইন-আদালত, বিচারিক প্রক্রিয়া সবকিছুর ওপরই সরকার যেন সিন্দাবাদের জীনের মতো সওয়ার হয়ে আছে। দেশের বিভিন্ন জেলায় রিটার্নিং অফিসার বা সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কাছে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রাপ্ত প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিতে গেলে মনোনয়ন পত্রের দু’পাশ থেকে ধরে আছেন পুলিশের দু’জন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। অর্থাৎ পুলিশ কর্মকর্তারা সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিলেন, তারা আওয়ামী লীগের পক্ষে। অথচ এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন উদাস কবির মতো আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকলো, নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের জন্য  কোন ব্যবস্থা নিলো না।

তিনি আরও বলেন, তফশীল ঘোষণার পর গাজীপুরের ওসি আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে পোশাক পরে উপস্থিত হয়েছিলেন এবং তিনি সেখানে বক্তৃতাও দিয়েছিলেন। নির্বাচন কমিশন এক্ষেত্রে কোন ব্যবস্থা নিয়েছে বলে কারো জানা নেই। অথচ সময়ের অজুহাত তুলে বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের মনোনয়নপত্র জমা নেয়া হয়নি।