ফেক নিউজ বা ভুয়া খবর ছড়াতে এখন নামী সংবাদ প্রতিষ্ঠানগুলোর ওয়েবসাইটের পুরো নকল ওয়েবসাইট তৈরি করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচনের আগে বেশ কয়েকটি নামী সংবাদ মাধ্যমের ওয়েবসাইটের আদলে ভুয়া ওয়েবসাইট তৈরি হয়েছে।
আসল ওয়েবসাইটের আদলে এসব নকল ওয়েবসাইটে ভুয়া খবর প্রকাশ করে সেগুলো সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে পাঠকদের বিভ্রান্ত করা হচ্ছে।
বেশিরভাগ পাঠক সামাজিক মাধ্যমে পাওয়া এসব খবর দেখে চিনতে পারেন না কোনটি আসল, আর কোনটি নকল।
১. বিশ্বস্ত ওয়েবসাইট মনে রাখুন
ইন্টারনেট দুনিয়ায় কখনোই একনামে দুইটি ওয়েবসাইট হতে পারে না। সুতরাং আসল ওয়েবসাইটের সঙ্গে নামের বা ইউআরএল (ইউনিফর্ম রিসোর্স লোকেটর) পার্থক্য থাকবে।
যেমন বিবিসি নিউজ বাংলার ওয়েবসাইট bbcbangla.com বা https://www.bbc.com/bengali হলেও, যে ভুয়া ওয়েবসাইটটি তৈরি করা হয়েছিল তার ঠিকানায় রয়েছে bbc-bangla.com।
মাঝখানে একটি হাইফেন বাড়তি যোগ করা হয়েছে।
প্রথম আলোর ওয়েবসাইট prothomalo.com হলেও, ভুয়া ওয়েবসাইটের ঠিকানায় একটি অতিরিক্ত a যোগ করা হয়েছে, যেমন prothomaalo.com।
সুতরাং আপনার বিশ্বস্ত সংবাদ প্রতিষ্ঠানটি ইউআরএল বা নামটি মনে রাখুন অথবা ওয়েব ব্রাউজারে বুকমার্কিং করে রাখুন।
২. ডোমেইনটির দিকে তাকান?
আপনার সামাজিক মাধ্যমের ফিডে যদি পরিচিত সংবাদ মাধ্যম থেকে এমন খবর দেখতে পান, যা তাদের সাথে ঠিক খাপ খায় না, অথবা বাস্তবের সঙ্গে মিল নেই, তখনি আপনার সতর্ক হওয়ার দরকার আছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য প্রযুক্তি ইন্সটিটিউটের পরিচালক ড. কাজী মুহাইমিন-আস-সাদিক বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ”যখনই কোন সন্দেহজনক সংবাদ চোখে পড়বে, তখন উচিত ডোমেইনটির দিকে তাকানো।”
বিশেষ করে সামাজিক মাধ্যমে দেখা কোন খবর শেয়ার করার আগে এর উৎস প্রতিষ্ঠানটি ভালো করে দেখা নেয়া উচিত, কারণ এভাবে শেয়ারের মাধ্যমে আপনার কাছের লোকজনকেও বিভ্রান্ত করা হবে।”
তখন ডোমেইনটি পরীক্ষা করে দেখার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
৩. ICANN – এর সাইটে গিয়ে চেক করুন
বিশ্বের ওয়েবসাইট ঠিকানার বিষয়াদি দেখভাল করে থাকে আইক্যান (ICANN)। কোন ওয়েবসাইট নিয়ে আপনার সন্দেহ হলে, আইক্যানের ডোমেইন অনুসন্ধান পাতায় গিয়ে তাদের ওয়েবসাইট ঠিকানাটি লিখে দিন বা পেস্ট করুন।
https://whois.icann.org/en এই পাতায় গিয়ে দেখতে পাবেন, ওয়েবসাইটটি কবে তৈরি হয়েছে, কে তৈরি করেছে।
সাধারণত এরকম ভুয়া নির্মাতাদের পরিচয় লুকানো থাকে। কিন্তু আপনার পরিচিত সংবাদ মাধ্যমটি পুরনো হলে তাদের ওয়েবসাইটও হবে পুরনো।
কিন্তু ফেক ওয়েবসাইট দেখা যাবে কিছুদিন আগে তৈরি করা হয়েছে। যেমন বিবিসির নামে এই ভুয়া ওয়েবসাইটটি তৈরি হয়েছে অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে।
অথচ বিবিসি নিউজ বাংলার আসল ওয়েবসাইটটি তৈরি হয়েছে ২০০৫ সালে।
ভুয়া ওয়েবসাইট আপনার জন্য কতটা হুমকি?
মূলত ফেসবুক, ইউটিউব, ভুয়া ওয়েবসাইট ও গণমাধ্যম ব্যবহার করে এই ভুয়া খবরগুলো ছড়িয়ে থাকে। বিশ্লেষকরা ভুয়া খবর ছড়িয়ে পড়ার পেছনে তিনটি কারণকে প্রধান মনে করেন। যথা:
১. বিরোধী রাজনৈতিক দলকে কোণঠাসা করা;
২. ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়িয়ে দেয়া;
এবং ৩. রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল।
গণমাধ্যম বিশেষজ্ঞ শবনম আযীম বলছেন, ”এটা ভয়ংকর হুমকি। তারা যখন বিশ্বাসযোগ্য কোন প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে, তখন তাদের একটি মিথ্যা খবর ছড়িয়ে দেয়া অনেক সহজ হয়ে যায়।
এটা সংবাদ মাধ্যম এবং পাঠক, উভয়ের জন্যই ভয়ংকর হুমকি।”
সুত্র-বিবিসি