খুলনায় উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি আ. লীগের, সুশাসন ফিরিয়ে আনতে চায় বিএনপি

615

গাজী মাসুম , বিশেষ প্রতিনিধি:

খুলনা সদর ও সোনাডাঙ্গা এলাকা নিয়ে গঠিত খুলনা-২ আসনের নির্বাচনী প্রচারে উন্নয়নের ধারাবাহিতকার কথা বলেছে আওয়ামী লীগ, বিপরীতে বিএপি বলেছে ক্ষমতায় গিয়ে সুশাসন ফিরিয়ে আনার কথা। এই আসনের নৌকা প্রতীকে লড়ছেন প্রধানমন্ত্রীর চাচাতো ভাই শেখ সালাউদ্দিন জুয়েল। আর তার বিপরীতে ধানের শীষ নিয়ে আছেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু। মঞ্জু এর আগে ২০০৮ সালে খুলনার এই আসন থেকে ধানের শীষ নিয়ে সংসদে গিয়েছিলেন। আর পেশায় ব্যবসায়ী জুয়েল এবারই প্রথম নির্বাচন করছে। তার ভাই শেখ হেলাল উদ্দিন বাগেরহাট-১ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য, লড়ছেন এবারও। হেলালের ছেলে শেখ সারহান নাসের তন্ময়ও বাগেররহাট-২ আসনে নৌকা নিয়ে লড়ছেন। প্রচারের শেষ দিন গত বৃহস্পতিবার বিকালে খুলনার হাদিস পার্কে জনসভা করেছেন জুয়েল, অন্যদিকে মঞ্জু এলাকায় নির্বাচনী প্রচারের পাশাপশি মিছিল করেছেন। রাজনৈতিক পরিবারের ছেলে হলেও জুয়েল এবারই প্রথম প্রত্যক্ষ রাজনীতির ময়দানে এলেন; বিপরীতে মঞ্জু রাজনীতিতে পুরনো মুখ। স্বাধীনতার পর খুলনা-২ আসনে আওয়ামী লীগ দু’বার জয় পেয়েছিলো – ১৯৭৩ ও ২০১৪ সালে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে অল্প ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হলেও ২০১৪ সালের বিএনপিবিহীন নির্বাচনে এ আসনে নৌকা নিয়ে সংসদে গিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের মিজানুর রহমান। এবার আওয়ামী লীগ নৌকার বৈঠা দিয়েছে জুয়েলের হাতে। গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, উন্নয়নের ধারা বজায় রাখা এবং দক্ষিণাঞ্চলের পদ্মা ব্রিজ নিয়ে আমরা কথা বলছি। খুলনাকে তিলোত্তমা শহর করার প্রতিশ্রæতি দিচ্ছি। এয়ারপোর্ট করার কথা বলছি। মানুষ আমাদের দেখছে। উন্নয়ন হয়েছে, আরও হবে। আমার প্রচারে সেগুলোই এসেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট ভাইয় আবু নাসেরে ছেলে জুয়েল বলেন, মানুষ বুঝতে পারছে শেখ হাসিনার সরকার আবার দরকার। মানুষকে বলেছি, আপনারা দেখেন, দেখে-বুঝে নৌকায় ভোট দেন। আমরা যেটা বলেছি উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় ভোট দেন। রাজনীতিতে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা না থাকায় কোনো চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ছোটবেলা থেকে রাজনীতি শিখে আসা এক রকম। এর বাইরেও বহু মানুষ রাজনীতিতে আসে। সালাম মুর্শেদী সাহেব (খুলনা-৪ আসনে নৌকার প্রার্থী) এনারা আছেন। এর মানে এই নয় যে তারা বোঝেন না। রাজনীতি পারেন না। প্রথম দিকে হয়তো অসুবিধা হয়। কিন্তু নিয়ম হল সংগঠন সাথে রাখতে হয়। স্থানীয় লোক ছাড়া নির্বাচন করা যায় না। আমি যেহেতু বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য। বাইরে থেকে লোকজন আসে। আমি বলেছি, তাদের কথায় খুলনার জনগণ ভোট দেবে না। অনেকে আছে হইহই পার্টি। ভোট দেবে স্থানীয় মানুষ। তাই প্রচারও করতে হবে স্থানীয়দের নিয়ে। অন্যদিকে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম মঞ্জুর অভিযোগ, আওয়ামী লীগের কর্মী এবং পুলিশের কারণে তিনি কাজ করতে পারেননি না। গত বৃহস্পতিবার খুলনা বিএনপির কার্যালয়ে তিনি বলেন, আমরা ভোটারকে বলছি সুশাসনের কথা। উন্নয়তো হবে কিন্তু আগে দরকার সুশাসন। দেশে এখন যে উন্নযনের কথা বলছে আওয়ামী লীগ, তা শুধু মেগা প্রকল্পের নামে দুর্নীতির কথা। সার্বিক উন্নতি হয়নি। আইনের শাসন নেই বলে এই অবস্থা। আমরা বলছি ভোটে জিতলে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করব। এরপর উন্নয়নতো হবেই। শুধু একদলীয় শাসন নয়, আমরা এই এক ব্যক্তির শাসন থেকে মানুষকে মুক্ত করতে চাই। মঞ্জুর বলেন, প্রত্যেক এলাকায় আমাদের সংগঠনের নেতা-কর্মীদের আটক করছে। কাজ করতে দিচ্ছে না। নির্বাচনী অফিস ভেঙে ফেলছে। পুলিশ গিয়ে আটক করছে, কাজ করব কীভাবে। আমি অফিস বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছি। যাদের জামিন নিয়ে এসেছিলাম তাদের আবার গ্রেফতার করা হচ্ছে। বিএনপির ভোট ব্যাংক যেসব এলাকা সেখানে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। ভোট কেন্দ্রে মানুষ যেতে পারলে ধানের শীষ জিতবে- এই প্রত্যাশা মঞ্জুর। তবে এ ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীকে এগিয়ে আসার আহবানও জানিয়েছেন তিনি। আমরা চাই মানুষ ভোট কেন্দ্রে যাক। কিন্তু তাদের ভয় দেখানো হচ্ছে, সেনাবাহিনী যদি এখানে সেটা নিশ্চিত করতে পারে, তবে সম্ভব। আর মানুষ ভোট কেন্দ্রে গেলে আমি নিশ্চিত জয়ী হব। মঞ্জুর অভিযোগের বিষয়ে জুয়েল বলেন, বিএনপি এবং আমাদের অফিস দুটোই আছে। আমি উনাকে কোনো ডিস্টার্ব করি নাই। ২০০১ সালে বিএনপির সময় মোংলা পোর্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, উন্নয়ন হয়নি। অপারেশন ক্লিন হার্ট করেছিল, আমার আপন মামাতো ভাইকে মেরে ফেলেছিল। মানুষ সব জানে। আমার লোকজনকেও আমি বলেছি। বিএনপিকে যেন মারধর করা না হয়। উনার (মঞ্জু) অভ্যাসই সকাল বেলা উঠে অভিযোগ করা। মামলাতো আগের মামলা, হয়তো পুলিশ সেগুলোকে ধরছে। আমার কোনো ব্যাপার নেই।