গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানী বেইলী রোডে নিজ ভবনে নির্বাচন পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় এ দাবি জানান ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন। এ সময় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। ড. কামাল হোসেন বলেন, দেশের প্রায় সব আসন থেকেই ভোট ডাকাতির খবর এসেছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে প্রহসন-ভোট ডাকাতির মহোৎসব মন্তব্য করে অবিলম্বে এ নির্বাচন বাতিলের দাবি জানিয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।
এ পর্যন্ত শতাধিক প্রার্থী ভোট ডাকাতির অভিযোগ করে নির্বাচন বর্জন করেছেন। তাই অবিলম্বে এ প্রহসনের নির্বাচন বাতিল করার জন্য নির্বাচন কমিশনের কাছে দাবি জানাচ্ছে ঐক্যফ্রন্ট। একই সঙ্গে কথিত ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে ড. কামাল বলেন, অবিলম্বে নির্দলীয় সরকারের অধীনে পুনরায় নির্বাচন দিন। এ সময় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এটা আমাদের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া। তারপর আলোচনা করে কি করণীয় তা ঠিক করবো। তিনি বলেন, আজকের (৩০শে ডিসেম্বর) নির্বাচনে পরীক্ষা হয়ে গেছে।
অনেকেই বলতেন, ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করা ভুল ছিল, এ নির্বাচনই প্রমাণ হলো ওই নির্বাচনে না যাওয়ার সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল। দলীয় সরকারের অধীনে আর কোনোদিন সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
লিখিত বক্তব্যে ড. কামাল হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও নির্বাচন কমিশনের দেয়া আশ্বাস ও প্রতিশ্রুতির ওপর বিশ্বাস করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট অতীতের শত তিক্ত ও ভয়াবহ অভিজ্ঞতা সত্ত্বেও সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়। তফসিল ঘোষণার পরে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী, নেতাকর্মীদের হয়রানি, মিথ্যা ও গায়েবি মামলা দায়ের কিংবা গ্রেপ্তার করা হবে না বলে আশ্বস্ত করেছিল। কিন্তু তফসিল ঘোষণার পর থেকে সরকারের দেশব্যাপী ব্যাপক হামলায় ১৭ প্রার্থী আহত এবং প্রায় ১৪ হাজার নেতাকর্মী ও সমর্থক আহত হন। পাইকারি হারে মিথ্যা ও গায়েবি মামলা দিয়ে প্রায় ১১ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ১৮ জন প্রার্থী কারাগারে থেকে নির্বাচন করেছেন। কামাল হোসেন অভিযোগ করে বলেন, নির্বাচনে ভোট দেয়ার জন্য যখন দেশবাসী প্রস্তুত তখনই দেশের বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় গতকাল রাতেই আওয়ামী লীগের দুর্বৃত্তরা এবং নির্বাচনের দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের সহায়তায় নৌকা মার্কায় সিল মেরে বাক্সে ভরে রাখে বলে খবর আসে। কেন্দ্রের বুথ তালা মেরে রাখা হয়, দেশের প্রায় সব কেন্দ্র থেকেই ধানের শীষের এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়, বের না হলে তাদের মারধর করা হয়।
নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারও তার নিজ কেন্দ্রে ভোট দিতে গিয়ে ধানের শীষের কোনো এজেন্ট পাননি বলে অভিযোগ করে বলেছেন, আমার একার পক্ষে করার কিছু নেই। সারা দেশে ব্যাপক নির্বাচনী সহিংসতায় অসংখ্য হতাহতের ঘটনা ঘটে এবং ইতিমধ্যেই ২১ জন নিহত হয়েছেন। এ সংখ্যা আরো বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীসহ শত শত নেতাকর্মী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে বিভিন্ন স্থানে সাংবাদিকদের ওপর হামলা হয়েছে এবং বেশ কয়েকজন সাংবাদিক আহত হয়েছেন। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সদস্য কাফি কামালকে মেরে রক্তাক্ত করেছে। ঐক্যফ্রন্টের এজেন্টদের মারার ছবি তুলতে গিয়ে তিনি আওয়ামী সন্ত্রাসীদের দ্বারা মারাত্মক জখম হন। তার কপাল ফেটে যায়। তাকে দ্রুত মগবাজারের কমিউনিটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে সাংবাদিকদের ভোট কেন্দ্রে ঢুকতে দেয়া হয়নি। নরসিংদী-২ আসনের প্রার্থী সাবেক মন্ত্রী ড. আবদুল মঈন খানের সব এজেন্টকে পুলিশের সহায়তায় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা বের করে দিয়েছে। মঈন খান তার বাড়িতে নেতাকর্মী ও এজেন্টদের নিয়ে অবরুদ্ধ অবস্থায় ছিলেন। চাঁদপুর-১ কচুয়ায় ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থীর এজেন্ট দিতে দেয়া হয়নি। যেসব কেন্দ্রে এজেন্ট গেছে, সেসব কেন্দ্র থেকে এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়। আবার কাউকে কাউকে আঙুলে কালি লাগিয়েই ভোট না নিয়ে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া হয়েছে।
রাতেই ৮০ ভাগ ভোট কেটে রাখা হয়েছে। যে কারণে ভোটারদের কেবল কালি লাগিয়ে ফেরত পাঠানো হয়েছে। কুমিল্লা-১০, হবিগঞ্জ-১, ঢাকা-১৯, ঢাকা-৪, ঢাকা-৬, ৭, ৮, ৯, ৩, ১৩, ১৮, ১৯ সহ ঢাকার প্রতিটি আসনেই ধানের শীষ প্রতীকের এজেন্টদের কেন্দ্রে ঢুকতে দেয়া হয়নি। কিছু কিছু কেন্দ্রে ঢুকলেও সেখান থেকে জোর করে তাদের বের করে দেয়া হয়েছে। প্রায় প্রতিটি কেন্দ্রেই আওয়ামী সমর্থকদের লাইনে মূর্তির মতো দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। ইভিএমযুক্ত নির্বাচনী এলাকাগুলোতে ছাত্রলীগ-যুবলীগের কর্মীরা জালিয়াতি ও প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে অবাধে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছে। দেশের প্রায় সব আসন থেকেই একই রকম ভোট ডাকাতির খবর এসেছে। ফলে এ পর্যন্ত বিভিন্ন দলের শতাধিক প্রার্থী নির্বাচন বর্জন করেছেন। এ অবস্থায় আমরা নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, অবিলম্বে এ প্রহসনের নির্বাচন বাতিল করুন। এ নির্বাচনের কথিত ফলাফল আমরা প্রত্যাখ্যান করছি এবং সেই সঙ্গে নির্দলীয় সরকারের অধীনে পুনঃ নির্বাচন দাবি করছি। এ সময় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি আ স ম আব্দুর রব, গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু, স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।