ভোট দেয়াকে কেন্দ্র করে নোয়াখালীতে গৃহবধূকে ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত কেউ রেহাই পাবে না বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণসম্পাদক ওবায়দুল কাদের। গতকাল সচিবালয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের বিদায়ী হাইকমিশনার হর্ষবর্ধণ শ্রিংলার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের পর সাংবাদিকদের এ কথা জানান। ওবায়দুল কাদের বলেন, আমি এ ঘটনাটি সেদিনই জেনেছি। ওই নির্বাচনী এলাকা আমার নয়, কিন্তু আমার জেলায়। এ ধরনের ঘটনা অবশ্যই নিন্দনীয় এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ ঘটনার সঙ্গে যারাই জড়িত হোক- কেউ পার পাবে না। তিনি বলেন, আমি এ ব্যাপারে আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনার মনোভাব জানি। অলরেডি পুলিশের আইজির সঙ্গে আমার কথা হয়েছে।
ডিআইজি সম্ভবত স্পটে গেছেন। সেনাবাহিনীর ওই অঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসাররাও বিষয়টি সিরিয়াসলি দেখছেন। প্রশাসনও তৎপর। ওবায়দুল কাদের বলেন, আমি বলতে পারি সরকার এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে আছে। এখানে অপরাধী যেই হোক, শাস্তি তাকে পেতেই হবে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রসঙ্গত, নির্বাচনের দিবাগত রাতে নোয়াখালীর সুবর্ণচরে স্বামী-সন্তানকে বেঁধে রেখে এক নারীকে দল বেঁধে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই নারীর দাবি, ৩০শে ডিসেম্বর রোববার সকালে তিনি তার এলাকার ভোটকেন্দ্রে ভোট দিতে গেলে নৌকার কয়েকজন সমর্থক তাকে নৌকা প্রতীকে ভোট দিতে বলেন। তিনি তখন ধানের শীষে ভোট দেয়ার কথা বললে তাদের সঙ্গে তর্কাতর্কি হয় এবং তাকে দেখে নেয়ার হুমকি দেন। পরে রাতে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এদিকে নির্বাচন সংক্রান্ত নিউজের কারণে মঙ্গলবার বাংলা ট্রিবিউনের খুলনা প্রতিনিধি ও খুলনা থেকে প্রকাশিত দৈনিক প্রবাহের সিটি এডিটর হেদায়েত হোসেন মোল্লাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সাংবাদিক গ্রেপ্তারের বিষয়ে জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিষয়টি এখনও জানি না। খোঁজ নেব।
জনরায়কে মেনে নেয়া উচিত: জনরায়কে মেনে নেয়া উচিত বলে মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচনে বিজয়ী ঐক্যফ্রন্টের সাতজনও সংসদে বিরাট ভূমিকা পালন করতে পারেন। ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচিত এমপিদের শপথ প্রসঙ্গে সড়ক পরিবহনমন্ত্রী বলেন, আমি সেটা আগেও বলেছি। একই কথা আমি বলব, বিষয়টি তাদের পুনর্বিবেচনা করা উচিত। যারা ইলেকটেড হয়েছেন তাদের জনগণ নির্বাচিত করেছেন। কাজেই জনগণের রায়কে তারা সম্মান করবেন- এটিই আমরা আশা করি। গতবার তারা নির্বাচন বয়কট করেছিলেন। এবার তারা অংশ নিয়ে যারা ইলেকটেড হয়েছেন তারা শপথ নেবেন না, তাহলে এটা কি জনরায়কে অসম্মান করা হয় না? আমি মনে করি তাদের জনরায়কে মেনে নেয়া উচিত। তিনি বলেন,সাতজনও একটা বিরাট ভূমিকা পালন করতে পারে পার্লামেন্টে। সংখ্যা কম হলে কণ্ঠস্বর দুর্বল নাও হতে পারে। নতুন মন্ত্রিসভায় কারা আসছেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়টি আমার জন্য অ্যাম্ব্রাসিং, বিকজ এটা অ্যাবসিলিউটলি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এখতিয়ার, এ এরিয়াতে কারো অনুপ্রবেশের সুযোগ নেই। এটা একেবারেই তার নিজস্ব সিদ্ধান্তের ব্যাপার। তিনি প্রয়োজন মনে করলে কারো সঙ্গে আলাপ করতে পারেন। সেটাও তার ব্যাপার। এবার মন্ত্রিসভা বড় হবে নাকি, আগের মতোই হবে- এ বিষয়ে তিনি বলেন, সেটা আমি এ মুহূর্তে বলতে পারছি না। বাড়তেও পারে। প্রথমে একবারে বাড়বে সেটাও তো বলা যাচ্ছে না।
কেবিনেটে তো প্রথম কিছু হওয়ার পর, পরে সম্প্রসারিত হয়। এখন প্রথম কীভাবে করবেন তা প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার। এটাও কি রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের সরকার হবে- জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, নট ইয়েট ডিসাইডেড। এসব বিষয়ে ফাইনালি কোনো সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি। ১০ তারিখের মধ্যেই সব হয়ে যাবে- এটা আমি মোটামুটি জানি। বিরোধী দল কে হবে- এ বিষয়ে সড়ক পরিবহনমন্ত্রী বলেন, অপজিশন কে হবে, সেটা তো…। অপজিশন তো আছেই। গতবার তো অপজিশন ছিল তারাও তো আছেন। সেটা ঐকমত্যের সরকার ছিল। এবার ঐক্যফ্রন্ট আছে, তারা শপথ নেবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন, এটা চূড়ান্ত কি না সেটাও তো দেখার অপেক্ষা আছে। সাতজনের মধ্যে গণফোরাম আছে, তাদের আবার ভিন্ন কোনো সিদ্ধান্ত আছে কি না, সেটাও দেখার বিষয়। কাজেই ২-৩ দিনের মধ্যে সব ক্লিয়ার হয়ে যাবে। পার্লামেন্টারি কমিটির মিটিং সম্ভবত কালকে (বৃহস্পতিবার) না-ও হতে পারে। পরেও হতে পারে। মেজরিটি পার্টি লিডার অব দ্য হাউজ হিসেবে শেখ হাসিনাকে যখন আমরা ইলেক্ট করব, তখন প্রেসিডেন্ট তাকে সরকার গঠনে শপথ নেয়ার জন্য আহ্বান করবেন। এটাই নিয়ম। বিপুল ভোটে বিজয়ী সরকারের চ্যালেঞ্জ কী হবে- জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, চ্যালেঞ্জ হচ্ছে নির্বাচনী ওয়াদা পূরণ করা। ইশতেহারে যে প্রতিশ্রুতিগুলো আমাদের লিডার শেখ হাসিনা জাতির সামনে ঘোষণা করেছেন। সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নই হলো চ্যালেঞ্জ।
বিশাল বিজয়ের সঙ্গে বিশাল দায়িত্বও জড়িয়ে আছে। ঐক্যফ্রন্ট আইনের আশ্রয় নেবে এবং আন্দোলনে যাবে- এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, লিগ্যাল ব্যাটল আমরা ফেইস করব। আর আন্দোলনের আওয়াজ তো শুনে আসছি ১০ বছর ধরে। দেখি এবার যদি কোনো আন্দোলন তারা বাস্তবে করতে যান তবে তা আমরা রাজনৈতিকভাবেই মোকাবিলা করব। নন-ভায়োলেন্ট মুভমেন্ট আমরা পলিটিক্যালি ফেস করব। ভায়োলেন্ট হলে সেটার জবাব দেয়ার জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা আছে। এ সময় ভারতের হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা সাংবাদিকদের বলেন, আমি নতুন বছরের শুভেচ্ছা, একই সঙ্গে নির্বাচনে জয়লাভ করায় শুভেচ্ছা জানাতে এসেছিলাম। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শুভেচ্ছা জানিয়েছেন সেটাও জানিয়েছি।