বিভিন্ন অজুহাতে চালের দাম বেড়ে চলেছে , প্রভাব খুচরা বাজারে

757

গাজী মাসুম, বিশেষ প্রতিবেদক :

দেশে চালের পর্যাপ্ত মুজদেরও নানা অজুহাতে চালের দাম বাড়িয়ে চলেছে ব্যবসায়ীরা। নির্বাচনের আগে আগে পরিবহন সঙ্কটের কথা বলে চালের দাম বাড়ানো হয়। আর দাম বাড়ার ওই ধারা এখনো অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি মিল মালিকরাও চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। তার প্রভাব পড়েছে পাইকারি ও খুচরা বাজারে। ইতিমধ্যে পাইকারি বাজারে ৫০ কেজির প্রতি বস্তা চালের দাম ১২০-১৪৫ বা মণপ্রতি ৯০-১১০ টাকা বেড়েছে। আর খুচরা পর্যায়ে বেড়েছে কেজিতে ৪ টাকা পর্যন্ত। চালের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে মিল মালিকরা এতোদিন লোকসানে চাল বিক্রির কথা বলেছে। আর মিল পর্যায়ে চালের দাম বাড়ার পাশাপাশি পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধিকেও কারণ হিসেবে উল্লেখ করছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা। তাছাড়া তারা সরকারিভাবে চাল সংগ্রহকে আরেকটি কারণ হিসেবে দেখাচ্ছে। বাজার সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দিন দশেক আগেও হাসকিং মিলে ৫০ কেজি ওজনের প্রতি বস্তা মিনিকেট চালের দাম ছিল ১ হাজার ৭৮০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা। একই চাল এখন বিক্রি হচ্ছে ২ হাজারও বেশি দামে। বর্তমানে মিল পর্যায়ে প্রতি বস্তা মিনিকেট চালের দাম বেড়েছে সর্বোচ্চ প্রায় আড়াইশ টাকা। তাছাড়া অটো রাইস মিলে ১০ দিন আগে প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) মিনিকেট চালের দাম ছিল ২ হাজার ২০০ টাকা। বর্তমানে তা সর্বোচ্চ ২ হাজার ৪শ’ টাকার বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। ওই হিসাবে অটো রাইস মিল পর্যায়ে মিনিকেট চালের দাম বেড়েছে বস্তায় ২শ টাকারও বেশি। তবে সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে মোটা চালের, প্রতি বস্তায় (৫০ কেজি) আড়াইশ টাকা। দিন দশেক আগে মিল পর্যায়ে প্রতি বস্তা মোটা চাল ৯৩৩ টাকায় বিক্রি হলেও এখন বিক্রি হচ্ছে দেড় হাজার টাকায়। সূত্র জানায়, মিল মালিকদের দাবি- বাজারে চালের দাম অস্বাভাবিক কমে গিয়েছিল। তাতে তাদের লোকসানে চাল বিক্রি করতে হয়েছে। এখন আর যাতে লোকসান না হয় সেজন্য দাম কিছুটা সমন্বয় করা হয়েছে। মিল পর্যায়ে চালের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব সেভাবে না পড়লেও পাইকারি ব্যবসায়ীরাও দাম বাড়াতে শুরু করেছেন। মিল ও পাইকারিতে মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারেও। রাজধানীর খুচরা বাজারগুলোয় মানভেদে প্রতি কেজি উন্নত মানের সরু চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৮-৬২, সাধারণ মানের ৫৪-৫৮, মাঝারি মানের ৪৪-৫২ ও মোটা চাল প্রতি কেজি ৩৮-৪২ টাকায়। ১০ দিন আগেও এসব চাল কেজিপ্রতি ৩-৪ টাকা কমে বিক্রি হয়েছিল। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী খুচরা পর্যায়ে সপ্তাহের ব্যবধানে বোরো সরু চালের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ৪ টাকা। আর কেজিপ্রতি ২ টাকা বেড়েছে বোরো মাঝারি চালের দাম। গত সপ্তাহে বোরো সরু চাল প্রতি কেজি ৫২ টাকায় বিক্রি হলেও চলতি সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ৫৬ টাকায়। একইভাবে ৪০ টাকা কেজি দরের বোরো মাঝারি চাল বিক্রি হচ্ছে ৪২ টাকায়। সূত্র আরো জানায়, চালের দাম বাড়ার অন্যতম কারণ হিসাবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, নির্বাচনের আগে প্রতিটি ট্রাকের ভাড়া ১০-১২ হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়ে যায়। ওই কারণে চালের দাম বাড়তি ছিল। তাছাড়া কয়েক মাস ধরে বস্তাপ্রতি ৩০০-৪০০ টাকা লোকসানে থাকায় ব্যবসায়ীরা এখন বাড়তি দামেই চাল বিক্রি করছে। তাছাড়া সরকারের চাল সংগ্রহ কর্মসূচির পর মূল্যবৃদ্ধির আশায় অনেক প্রতিষ্ঠানেরই মজুদপ্রবণতা বেড়ে গেছে। ওই কারণে বাড়তি দামেই চাল বিক্রি করছে পাইকারি ব্যবসায়ীরা। তবে এবার ধানের ফলন ভালো হওয়ায় দাম বিগত বছরের মতো অস্বাভাবিক হবে না। এদিকে দেশে চালের বড় অংশ হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি হয়। কিন্তু আমদানি বর্তমানে শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে। তবে ধানের দাম খানিকটা বাড়ায় বেড়েছে চালের দাম। দিন দশেকের ব্যবধানে হিলিতে পাইকারিতে চালের দাম বেড়েছে বস্তাপ্রতি ৭৫-১০০ টাকা। অন্যদিকে ধান-চালের আড়তদাররা বলছেন, বাজারে কিংবা মোকামে ধান-চালের সংকট নেই। তবে ভারত থেকে চাহিদার অতিরিক্ত ১৫-১৭ লাখ টন চাল আমদানি হওয়ায় বাজারে চালের দাম কেজিপ্রতি ১৩-১৮ টাকা পর্যন্ত কমে গিয়েছিল। বর্তমানে দাম বাড়ানো না হলে মিলারদের উৎপাদন খরচ তোলা সম্ভব নয়। ওই কারণে তারা চালের দাম বাড়িয়েছে।