যশোরে ট্রাফিক ব্যবস্থায় শৃংখলা ফিরিয়ে আনতে, সার্জেন্টদের মামলার প্রতিযোগিতা চলছে

549
প্রতিকি ছবি ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহীত।

গাজী মাসুম, বিশেষ প্রতিনিধি

যশোরে ট্রাফিক ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা আনতে নানামুখী উদ্যোগ থাকলেও কার্যত এর তেমন কোন সুফল মিলছে না। উদ্যোগের অংশ হিসেবে যানবাহনকে নিয়ম মানাতে মামলা ও জরিমানা আদায় চলছে জোরেসরে। এক্ষেত্রে অনেকটা প্রতিযোগিতা হচ্ছে ট্রাফিক সার্জেন্টদের মধ্যে। যে যতো বেশি মামলা দিতে পারেন তিনিই ঊর্ধ্বতনদের কাছে ততো বেশি ভালো কর্মকর্তা। তাই সকাল থেকে শুরু হয় ট্রাফিক সার্জেন্টদের মামলা দেয়ার প্রতিযোগিতা। যশোর ট্রফিক পুলিশের ইন্সপেক্টর সাখাওয়াত হোসেনের কাছে প্রতি মাসে মামলার টার্গেট কত জানতে চাওয়া হলে তিনি তেলে বেগুনে জ্বলে উঠেন। বলেন অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন করেন কেন। কোন কিছু জানতে হলে এসপি অফিস থেকে জেনে নেন। অথচ নাম প্রকাশ না করার শর্তে তার উর্দ্ধতন কর্তারা বলেন প্রতিমাসে ট্রাফিক পুলিশের মামলার টার্গেট থাকে। উর্দ্ধতন কর্তাদের বেধে দেয়া টার্গেট দায়িত্বরত সার্জেন্টদের পূরন করতে হয়। তা নাহলে তাকে অদক্ষ অফিসার হিসেবে গন্য করা হয়। ট্রাফিক আইনে যশোরে প্রতি মাসে জরিমানা আদায় করা হচ্ছে প্রায় ৫৫ লাখ টাকা। প্রতি মাসে মামলা হচ্ছে প্রায় ২ থেকে ৩ হাজার। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দাবি, অহেতুক মামলা দিতে কোনো সার্জেন্টকে উৎসাহিত করা হয় না। ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করলেই মামলা দেয়া হয়। মূলত সড়কে নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্যই মামলা দেয়া হয়। গত বছরের (২০১৮) জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মামলা দেয়া হয়েছে ৩৮ হাজার ৬শ’ ১৫টি। বিপরীতে জরিমানা করা হয়েছে ৭ কোটি ৭ লাখ ৭৭ হাজার ১শ টাকা। সবচেয়ে বেশি মামলা হয়েছে মোটরসাইকেল, হালকাযান ও ইজিবাইকের ক্ষেত্রে। যানবাহন আটক করা হয়েছে ৪ হাজার ৭ শ ৭২ টি।

যশোর ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ড্রাইভিং লাইসেন্স, হেলমেট ও ইন্সুরেন্স না থাকা, চালকসহ তিন আরোহীর কারণে বেশি মামলা হয়েছে মোটরসাইকেলের ক্ষেত্রে। অন্যদিকে যথাযথ কাগজপত্র না থাকা, যত্রতত্র পার্কিং, রুট পারমিট ও ফিটনেস না থাকার কারণে মামলা হয়েছে কাভার্ডভ্যান, ও হালকা যানের বিরুদ্ধে। অনেক ক্ষেত্রে একজন মোটর সাইকেল চালকের নামে একাধিক মামলা দেয়ারও নজির স্থাপন করেছে যশোর ট্রাফিক পুলিশ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সার্জেন্ট জানান, মামলা কম হলেই দুশ্চিন্তায় পড়তে হয়। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মনে করেন সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেননি। দিনের পর দিন মামলার সংখ্যা বাড়ছে। আর জরিমানার বিপুল টাকা জমা হচ্ছে সরকারের রাজস্ব খাতে। কিন্তু মামলা দিয়ে জানজট নিরসনে কোন উন্নতি হচ্ছে না। আর মামলার টাকা জমা নিয়ে যানবাহনের চালকদের কোন রিসিট দেয়া হয় না। অভিযোগ রয়েছে চালকদের কাছ থেকে মামলার সর্বোচ্চ জরিমানার টাকা আদায় করা হলেও জমা দেয়া হয় সর্বনিন্ম জরিমানার টাকা। যে কারনে যানবাহনের চালকদের জরিমানা পরিশোধের কোন রিসিট দেয়া হয় না যশোর ট্রফিক অফিস থেকে। অভিযোগে বলা হয়েছে, চালকদের কাছ থেকে সর্বোচ্চ জরিমানার টাকা আদায় করে জরিমানার সর্বনিন্ম টাকা জম করে বাকি টাকা ট্রাফিক সাজেন্টরা হজম করার কারনে জরিমানা পরিশোধের কোন রিসিট দেয়া হয় না। যশোর ট্রাফিক ট্রাফিক বিভাগ থেকে জানা যায়, জনবল কম থাকায় আগে সড়কের শৃঙ্খলা রক্ষায় হিমশিম খেতে হতো। এখন জনবল পর্যাপ্ত থাকায় ঝামেলা কম হয়। বর্তমানে যশোর ট্রফিক বিভাগে ৭৩ জন কর্মরত রয়েছেন। এর মধ্যে ট্রাফিক ইন্সপেক্টরের ৫ টি পদের বিপরীতে ৫ জনই কর্মরত আছেন। সার্জেন্টের ৯ টি পদের বিপরীতে ৫ জন কর্মরত আছেন। টি এস আইয়ের ৩ টি পদের বিপরীতে ২ জন কর্মরত আছেন। এ টি এস আইয়ের ১০ টি পদের বিপরীতে ১০ জন কর্মরত আছেন। এছাড়া কনসটেবল কর্মরত রয়েছেন ৫১ জন। গাড়ি চালক ও মোটরসাইকেল চালক ও আরোহীদের অভিযোগ, যে কোনো একটা সুযোগ পেলেই মামলা ঠুকে দেন সার্জেন্টরা। কখনও কখনও অযথা হয়রানি মূলক মামলাও দেয়া হয়। মোটর সাইকেল চালক সেলিম জানান, শহরের দড়াটানায় মোটর সাইকেল থামিয়ে কাগজপত্র চেক করেন সার্জেন্ট নিশিকান্ত। সবকিছু ঠিক থাকার পরও কাগজ তৎক্ষনাত দেখাতে না পারা, ট্রাফিক সিগন্যাল করা বা সার্জেন্টের সাথে র্দুব্যবহার করা হয়েছে অভিযোগ উত্থাপন করে মামলা দেয়া হয়। একইভাবে প্রতিদিনই ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, মাইক্রোবাস, ও প্রাইভেটকারের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হচ্ছে বলে চালকদের অভিযোগ। যশোর ট্রাফিক বিভাগ থেকে জানা যায়, দিন দিন মানুষের-গাড়ি বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু পর্যাপ্ত রাস্তা নেই। যে কারণে যান চলাচলে শৃঙ্খলা আনতে ট্রাফিক পুলিশকে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। এছাড়াও অনেক নামিদামি স্কুল, শপিংমলের পার্কিং নেই। রাস্তা দখল করে গাড়ি পার্কিং করা হয়। প্রতিনিয়ত ট্রাফিক পুলিশকে এসব ঝামেলা মোকাবিলা করতে হয়। তবে শুধু মামলা দিয়ে শৃঙ্খলা আনা সম্ভব না দাবি করে সচেতন মহল বলেন, শুধু মামলা ও জরিমানা করে মানুষের আচরণের পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। মানুষের মধ্যে শৃঙ্খলাবোধ জাগ্রত করতে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। এক্ষেত্রে অবশ্যই ট্রাফিক পুলিশকে অনভিপ্রেত ব্যবহার পরিবর্তন করে জনবান্ধব হতে হবে। একই সাথে ট্রাফিক ব্যবস্থা যুগোপযোগী করা প্রয়োজন। স্কুল, কলেজ ও শপিংমলে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রাখতে হবে।