প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে জনগণ হাসবে না কাঁদবে তা জনগণ ভেবে পাচ্ছে না : রিজভী

392

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যে জনগণ হাসবে না কাঁদবে তা জনগণ ভেবে পাচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুর কবির রিজভী। আজ নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, নির্বাচনের আগের রাতে মহাভোট ডাকাতির পর সেই ভুয়া নির্বাচনকে জায়েজ করার জন্য সরকার যা যা করছে তা চরম হাস্যকর। গতকাল তারা জনগণের কোটি কোটি টাকা শ্রাদ্ধ করে তথাকথিত বিজয়ের উৎসব উদযাপন করেছে। সারাদেশ থেকে বাসভর্তি ভাড়াটে লোকজন এনেও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ভরতে পারেনি। সেখানে ‘নিশুতি রাতের ভোটের প্রধানমন্ত্রী’ ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে তাঁর দলকে বিজয়ী করার জন্য জনগণকে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিজয়ী র‌্যালীতে। তিনি বলেছেন, জনগণ নাকি এবার স্বত:স্ফূর্ভভাবে ভোট দিয়েছে। শেখ হাসিনার এমন বক্তব্যে জনগণ হাসবে না কাঁদবে তা জনগণ ভেবে পাচ্ছে না।

যখন মহাভোট ডাকাতিতে ভোটাধিকারহারা জনগণ ব্যথিত, বিমর্ষ ও বাকহারা, তখন তাদেরকে নিয়ে এ ধরণের বক্তব্য নিষ্ঠুর রসিকতা ছাড়া আর কিছুই নয়। রিজভী বলেন, জনগণ মনে করে-ভুয়া ভোটের সরকারের প্রধানমন্ত্রীর কৃতজ্ঞতা জানানো উচিৎ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। কারণ ভোটের আগের দিন রাতেই আইন শৃঙ্খলা বাহিনী জনগণের ভোটের অধিকারটা নিজের হাতে তুলে নিয়েছে। তারাই অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে রাতভর ব্যালট বাক্সে নৌকা মার্কায় সিল দেয়া ব্যালট পেপারে ভরিয়ে দিয়েছে। ভোট জালিয়াতি করতে পুরো রাষ্ট্রযন্ত্র ক্ষমতাসীনদের পাশে দাঁড়িয়েছে। সুতরাং গোপনে উৎকোচ দেয়া হলেও প্রকাশ্যে সরকারের বিভিন্ন বাহিনীকে ধন্যবাদ দেয়া উচিৎ ছিল প্রধানমন্ত্রীর।
তিনি বলেন, নির্বোধ স্তাবক’রা ছাড়া কে ছিল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পরাধীন মঞ্চে? আপাদমস্তকভীতু, ফন্দিবাজ, পরান্নজীবি, কৃপাপ্রার্থী, উমেদার আর প্রবঞ্চকদের ভিড় ছিল। গতকালকের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনগণের পকেটকাটা টাকায় বর্ণাঢ্য র‌্যালী ছিল রাষ্ট্রের মালিক জনগণের সাথে আরেকটি অবজ্ঞাভরা মশ্করা। এই ঐতিহাসিক সোহরাওর্য়াদী উদ্যানকে গতকাল গণতন্ত্র হত্যার উৎসবে পরিণত করা হলো। গতকাল ভুয়াভোটের সরকারপ্রধান যখন বাংলাদেশে ভোটাধিকার হরণের পর উৎসব করছেন তখন জাতিসংঘ মহাসচিবের বক্তব্য নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে শিরোনাম ছিল বাংলাদেশে নির্বাচন অবশ্যই সঠিক ছিল না। বিবিসি’র হেড লাইন ছিল গণতন্ত্র থেকে ছিটকে পড়েছে বাংলাদেশ। এছাড়া বিশ্ব মিডিয়ায় বলা হয়েছে বাংলাদেশের নির্বাচন ছিল বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ। এই নির্বাচনকে সিএনএন বলেছে প্রহসন, এই বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে বিপজ্জনক যুগে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। পৃথিবীর খ্যাতনামা স্কলার’রা বাংলাদেশের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনকে ইতিহাসের নিকৃষ্টতম নির্বাচন বলে অভিহিত করেছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একজন প্রখ্যাত স্কলার বলেছেন-বাংলাদেশের ক্ষমতাসীনগোষ্ঠী নির্বাচনের ফলাফল চুরি করেছে। ভোট চুরির সব নোংরা কৌশল প্রয়োগ করে শেখ হাসিনা এবং তাঁর দল ৯৭.৬৬ শতাংশ ফলাফল নিজের দলের জন্য ভাগিয়ে নিয়েছেন।
বিএনপির এই নেতা বলেন, মহাভোট ডাকাতির মহা কেলেঙ্কারী আড়াল করতে ভুয়া ভোটের সরকার বৈধতা পেতে এখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেনদরবার শুরু করেছে। এরকম ভুয়া ভোটের নির্বাচন বিশে^র গণতন্ত্রকামী মানুষ ও তাদের নির্বাচিত সরকারের কাছে এর কোন কানাকড়ি মূল্য নেই। গণতন্ত্রের জন্য এদেশের মানুষের লড়াই ও অর্জনকে ম্লান করে দিয়েছে ভুয়া ভোটের এই অবৈধ শাসকগোষ্ঠী গত ৫ জানুয়ারী ২০১৪ এর নির্বাচন এবং ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ এর নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়া কোন সরকার কখনোই টিকতে পারে না, ভয় দেখিয়েও বেশি দিন টেকা যায় না।