কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে কয়লাভর্তি ট্রাক উল্টে ঘুমন্ত ১৩ শ্রমিক নিহত হওয়ার ঘটনায় শোকের মাতম চলছে নীলফামারি জেলার জলঢাকা উপজেলায় নিহতদের গ্রামের বাড়িতে। জীবিকার তাগিদে তারা চৌদ্দগ্রামের গোলপাশা ইউনিয়নের নারায়ণপুরের একটি ইট ভাটায় কাজ করছিলেন। কিন্তু রোজগার শেষে আর বাড়ি ফিরতে পারলেন না। মর্মান্তিক দুর্ঘটনা কেড়ে নিলো তাদের প্রাণ।
জানা গেছে, নিহতদের মধ্যে ৯ জন জলঢাকার পাঠানপাড়ার এবং অপর ৪ জন ঘুঘুমারী গ্রামের বাসিন্দা। এ দুর্ঘটনার খবর শোনার পর থেকেই নিহত শ্রমিকদের বাড়িতে চলছে কান্না রোল আর আহাজরি। সংসারের একমাত্র উপার্জনকারীকে হারিয়ে পরিবারের সদস্যরা এখন দিশেহারা। নিহত শ্রমিকদের বাড়িতে বাড়িতে ছুটে আসেন প্রতিবেশী ও স্বজনরা।
এরইমধ্যে ১৩ শ্রমিকের প্রত্যেকের পরিবারের জন্য কুমিল্লা জেলা প্রশাসন থেকে ২০ হাজার টাকা ও ইট ভাটার মালিকের পক্ষ থেকে ১০ হাজার টাকা অনুদানের ঘোষণা করা হয়েছে।
পরিবারগুলোকে সহায়তার কথা জানিয়েছে নীলফামারী জেলা প্রশাসনও।
জেলা প্রশাসক নাজিয়া শিরিণ শ্রমিকদের পরিবারের প্রতি শোক ও সমবেদনা জানিয়ে বলেন, মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনায় আমরা প্রত্যেকে মর্মাহত। নিহত শ্রমিকদের প্রতিটি পরিবারকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেয়া হবে। এরই মধ্যে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনকে নিহত শ্রমিকদের বাড়িতে পাঠানো হয়ছে বলেও জানান তিনি।
জলঢাকা থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ওই দুই ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যানরা নিহতদের পরিচয় ও নামের তালিকা সংগ্রহ করছেন।
মীরগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হুকুম আলী জানান, নিহতদের মধ্যে ৯ জন তার এলাকার পাঠানপাড়ার বাসিন্দা। অপরদিকে শিমুলবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হামিদুল ইসলাম জানান, তার এলাকার ঘুঘুমারী গ্রামের ৪ জন নিহত হয়েছেন।
প্রসঙ্গত, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার গোলপাশা ইউনিয়নের নারায়ণপুর এলাকায় কাজী অ্যান্ড কোং নামক ইট ভাটায় শুক্রবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে ইট ভাটার জন্য আনা একটি ট্রাক থেকে কয়লা নামানো সময় হঠাৎ তা উল্টে গিয়ে ভাটার লেবার শেডের ঘুমন্ত শ্রমিকদের ওপর পড়ে। এতে চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই ১২ শ্রমিকের মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে স্থানীয় লোকজন, ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার অভিযান শুরু করে। এ সময় মারাত্মক আহতদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার পর আরও একজনের মৃত্যু হয়।
নিহতরা হলেন- জলঢাকা উপজেলার নিজপাড়া গ্রামের সুরেশচন্দ্র রায়ের ছেলে রঞ্জিত চন্দ্র রায় (৩০), মানিক চন্দ্র রায়ের ছেলে তরুণ চন্দ্র রায় (২৫), কিশর চন্দ্র রায়ের ছেলে সংকর চন্দ্র রায় (২২), অমল চন্দ্র রায়ের ছেলে দিপু চন্দ্র রায় (১৯) ও কামাক্ষা রায়ের ছেলে অমিত চন্দ্র রায় (২০), পাঠানপাড়া গ্রামের নূর আলমের ছেলে মো. মোরসালিন (১৮), ফজলুল করিমের ছেলে মো. মাসুম (১৮), জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে মো. সেলিম (২৮) ও রামপ্রসাদের ছেলে বিল্লব (১৯), শিমুলবাড়ি গ্রামের মনোরঞ্জন রায় (১৯) ও দিনেশ চন্দ্র রায়ের ছেলে মিনাল চন্দ্র রায় (২১) এবং রাজবাড়ি গ্রামের খোকা চন্দ্র রায়ের ছেলে বিকাশ চন্দ্র রায় (২৮) ও ধলু রায়ের ছেলে কনক চন্দ্র রায় (৩৪)।