সাংবাদিক শেখ বেলাল উদ্দিনের ১৪তম শাহাদাৎবার্ষিকী আগামীকাল

456

মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন খুলনার সাবেক সভাপতি, খুলনা প্রেসক্লাবের সাবেক সহ-সভাপতি ও দৈনিক সংগ্রামের ব্যুরো প্রধান শেখ বেলাল উদ্দিনের ১৪তম শাহাদাৎ আগামীকাল সোমবার পালিত হবে।

২০০৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি শনিবার রাত সোয়া ৯টার দিকে খুলনা প্রেসক্লাবের অভ্যর্থনা কক্ষের দরজার সামনে রাখা মোটরসাইকেলের হ্যান্ডেলে সন্ত্রাসীদের রাখা রিমোট কন্ট্রোল বোমায় শেখ বেলাল উদ্দিন গুরুতর আহত হন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে পরের দিন ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১১ ফেব্রুয়ারি সাংবাদিক শেখ বেলাল উদ্দিন শাহাদাৎবরণ করেন। এর আগে ঘটনায় ওই রাতেই খুলনা সদর থানার এস আই আমিনুল ইসলাম বাদি হয়ে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে সাংবাদিক আহত ও বিস্ফোরক আইনে পৃথক দু’টি মামলা দায়ের করেন। নিহত হওয়ার পর দায়ের করা মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়। ঘটনার পরের দিন রাতে রিক্সা চালক ইউনুস মৃধা ওরফে গদা ইউনুসকে নগরীর গোবরচাকা এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছিল খুলনা থানা পুলিশ। পরে ১৪ ফেব্রুয়ারি রাতে সাংবাদিক দীপ আজাদের ওপর বোমা হামলার ঘটনায় ধৃত মোফাজ্জেল হোসেন ও চরমপন্থী নেতা স্বাধীন, হাসান, মেরাজুল, টল বাবু ও এখলাসুর রহমানকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। এদের মধ্যে চরমপন্থী নেতা হাসান, স্বাধীন ও মেরাজুল ইসলামকে সাংবাদিক বেলাল উদ্দিন হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। এরপর রিক্সা চালক গদা ইউনুস, চরমপন্থী নেতা স্বাধীন ও এখলাসুর রহমান হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দেয়। মামলার তদন্তকালে ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ২০০৫ সালের ২৫ এপ্রিল খুলনা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ইকবাল হোসেন চরমপন্থী নেতা হাসান, স্বাধীন, মেরাজ ও রিক্সা চালক গদা ইউনুসকে আসামি করে আদালতে বিস্ফোরক অংশের চার্জশীট দাখিল করেন। এ সময় সাংবাদিকরা দাখিলকৃত চার্জশীট প্রত্যাখান করেন।
অপরদিকে দীর্ঘ তদন্ত শেষে সাহাবুদ্দিন লস্কর ধীরা ও এখলাসুর রহমান এখলাস, চরমপন্থী নেতা রফিকুল ইসলাম ওরফে হাসান, ইকবাল হোসেন স্বাধীন ও মেরাজুল ইসলাম মেরাজ এবং রিক্সা চালক গদা ইউনুসকে অভিযুক্ত করে একই বছর ১৭ নবেম্বর হত্যা মামলার চার্জশীট দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা। পরে ২০০৬ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর ওসি আব্দুল হামিদ রিকশাচালক গদা ইউনুসকে বাদ দিয়ে বাকী ৫ জনের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অংশের সম্পূরক চার্জশীট দাখিল করেন। পরবর্তীতে সিএমএম আদালত থেকে মামলাটি খুলনার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ তৃতীয় আদালতে প্রেরণ করা হয়। ২০০৬ সালের ২৯ জুন আদালতের বিচারক মশিউর রহমান উপরোক্ত ৬ আসামির বিরুদ্ধে চার্জগঠন করেন। এরপর হত্যা মামলাটি ২০০৭ সালের ১৭ জুন খুলনা বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে প্রেরণ করা হয়। এখানে ১১১ কার্যদিবস শেষে ২০০৭ সালের ২৯ নবেম্বর ট্রাইব্যুনালের বিচারক আব্দুস সালাম শিকদার হত্যা মামলায় আসামি চরমপন্থী নেতা হাসান, স্বাধীন ও মেরাজকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড, ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও দুই বছর সশ্রম কারাদন্ড দেয়।
এদিকে, বিস্ফোরক অংশের মামলাটি একই বছরের ১০ জুলাই দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে প্রেরণ করা হয়। এখানে মাত্র ৯৫ কার্যদিবসে উপরেল্লিখিত আসামিদের বিরুদ্ধে একই সাজা দেয়া হয়। দু’জন সাফাই সাক্ষীসহ ৩১ জন সাক্ষ্য দেন। রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন পিপি এসএম আবু জাদা, আসামি পক্ষে ছিলেন এডভোকেট মোস্তফা ইউনুস। দু’টি মামলার রায়ে দন্ডাদেশপ্রাপ্ত চরমপন্থী নেতা হাসান, স্বাধীন ও মেরাজ কারাভোগ করছে।

দুই দিনের কর্মসূচি গ্রহণ ঃ সোমবার মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন (এমইউজে) খুলনার সাবেক সভাপতি শেখ বেলাল উদ্দিনের ১৪তম শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষ্যে এমইউজের উদ্যোগে দুই দিনের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ১১ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৯টায় মরহুমের কবর জিয়ারত ও তার রুহের মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়া মোনাজাত। ১২ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার আসর বাদ খুলনা প্রেসক্লাবের পার্শ্বে অবস্থিত মতি মসজিদে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। গত শনিবার এমইউজে’র নির্বাহী কমিটির সভায় এসব কর্মসূচি নেয়া হয়। এ সব কর্মসুচি সফল করতে এমইউজের সকল সদস্যসহ কর্মরত সাংবাদিকদের যথাসময়ে উপস্থিত থাকার আহবান জানিয়েছেন ইউনিয়নের সভাপতি মো. আনিসুজ্জামান ও সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) আবুল হাসান হিমালয়।