কেডিএ সেবার পরিবর্তে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে: সংবাদ সম্মেলনে এ্যাড. সাইফুল

226

নিজস্ব প্রতিবেদক:
খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্লট বরাদ্দ, হস্তান্তর ফি ও ফরমের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় নগরবাসী নাজেহাল হয়ে পড়েছে। কষ্টার্জিত অর্থ দিয়ে বাড়ি করার অধিকার থেকে শ্রমজীবী, কর্মজীবী মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে। কেডিএ নিউ মার্কেটের দোকানের ভাড়া বাড়িয়ে এবং বিভিন্ন খালের উপর রাস্তা তৈরি করে স্বাভাবিক পানির প্রবাহ নগরীতে ব্যাহত করছে। ফলে সেবার পরিবর্তে কেডিএ এখন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।
রোববার (০৭-০৪-১৯) দুপুরে স্থানীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে সম্মিলিত নাগরিক সমাজ, খুলনার আহবায়ক এ্যাড. মো. সাইফুল ইসলাম এ অভিযোগ করেন।
তিনি সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেন, গত কয়েক মাস ধরে কেডিএ ২০ ফুট রাস্তা না থাকলে কোন নকশার অনুমোদন দিচ্ছে না। হঠাৎ করে ১২ ফুট থেকে ২০ ফুটের রাস্তায় অনুমোদন দিতে গেলে খুলনার সিংহ ভাগ মানুষের পক্ষে কেডিএ’র অনুমোদন পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ৮০’র দশকে উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ৬ ফুট রাস্তায় বাড়ি তৈরির অনুমোদন দিয়েছে। পরবর্তীতে ৯০’র দশকে ১২ ফুট রাস্তা থাকলেও কেডিএ নকশার অনুমোদন দিয়েছে। হঠাৎ করে ২০ ফুট রাস্তার বাধ্যবাধকতা করায় খুলনার মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। শত শত ফাইল কেডিএ বন্দি করে রেখেছে। আধুনিক খুলনা গড়তে আগামী নতুন প্রকল্পগুলো ২০ ফুট রাস্তা নকশা অনুমোদনের বাধ্যবাধকতা করা যেতে পারে। এ ব্যাপারে রিহ্যাব খুলনার সাথে সভা করে নতুন নীতিমালা তৈরি করা যেতে পারে। পুরাতন আবাসিক এলাকা এবং জমা দেওয়া নকশাগুলোর অবিলম্বে অনুমোদনের দাবি তিনি করেছেন।
তিনি কেডিএ’র জমি ক্রয়ের মূল্য নির্ধারণ সম্পর্কে বলেছেন, প্রতি কাঠা জমির মূল্য কয়েকগুণ বাড়ানো হয়েছে। সোনাডাঙ্গা এলাকায় প্রথম ফেজে প্রতি কাঠা ২ লাখ ৬৫ হাজার টাকার পরিবর্তে ২৫ লাখ টাকা, দ্বিতীয় ফেজে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকার পরিবর্তে ২৫ লাখ টাকা, নিরালা এলাকায় ২ লাখ ৫০ হাজার টাকার পরিবর্তে ২০ লাখ টাকা, এম এ বারি সড়কে ৩ লাখ টাকার পরিবর্তে কেডিএ ৩৫ লাখ টাকা জমির মূল্য নির্ধারণ করেছে। খালি জমি ১০ শতাংশ, বাণিজ্যিক ১৫ শতাংশ, ভ্যাট ১ দশমিক ৫ শতাংশ, ভবন থাকলে ৫ শতাংশ, বাণিজ্যিক ৫ শতাংশ (যেটা বেশি) ও ভ্যাট ১ দশমিক ৫ শতাংশ। বিভিন্ন ধরনের ফরমের মূল্য দুই-তিনগুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ২০০৯ সালে নতুন সেবা ফি চালু করেছে। আবাসিক এলাকায় ৫-৬ কাঠা জমির ফরমের মূল্য ৪-৬ হাজার টাকা সাথে ১৫ শতাংশ ভ্যাট, বাণিজ্যিক এলাকায় ৫-৬ কাঠা জমির ফরমের মূল্য ৭ হাজার টাকা সাথে ১৫ শতাংশ ভ্যাট, ক্ষুদ্র শিল্প এলাকায় ৫-৬ কাঠা জমির ফরমের মূল্য ২০ হাজার টাকা সাথে ১৫ শতাংশ ভ্যাট, বৃহৎ শিল্প ৫-৬ কাঠা জমির ফরমের মূল্য ৬০ হাজার টাকা সাথে ১৫ শতাংশ ভ্যাট।
তিনি উল্লেখ করেন, কেডিএ নিউমার্কেট দোকান মালিকদের সাথে চুক্তি শেষ হওয়ার আগেই উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ২-৩ গুণ ভাড়া বৃদ্ধির নোটিশ দিয়েছে। এখানকার দোকান মালিকদের সাথে কর্তৃপক্ষের চুক্তির ২০২৫ সাল পর্যন্ত। এখানেও বড় অনিয়ম হয়েছে। সেবা বলতে খুলনার মানুষ কিছুই কেডিএ’র কাছ থেকে পাচ্ছে না। সোনাডাঙ্গা বাস ষ্ট্যান্ড থেকে জয় বাংলার মোড় পর্যন্ত রাস্তাটির দুর্দশার শেষ নেই। রূপসা মোড় থেকে পীর খানজাহান আলী (রহঃ ) সেতু পর্যন্ত ৪ লেনের কাজ ছয় বছর ঝুলে আছে। এখন এ রাস্তা নির্মাণ করতে গেলে সরকারের অতিরিক্ত ৫০ কোটি টাকা ব্যয় হবে। খুলনাবাসীর এ সংকট নিরসনে তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। নগরবাসীর বাস্তব অবস্থা বিবেচনা করে মেয়র ও খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্যের সাথে আলোচনা করে বর্ধিত ফি বাতিলের জন্য তিনি কেডিএ কে পরামর্শ দিয়েছেন। অন্যথায় আগামী ১৩ এপ্রিল পিকচার প্যালেস মোড় বেলা ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত জনগণের অবস্থান কর্মসূচি ও ১৫ এপ্রিল বেলা ১১টায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর মেয়র ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের কাছে স্মারকলিপি দেওয়ার কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে স্থানীয় রাজনীতিক শ্যামল সিংহ রায়, সম্মিলিত নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব মিজানুর রহমান বাবু, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক কে এম ইকবাল হোসেন, রিহ্যাব খুলনার সভাপতি শেখ আবেদ আলী, কমার্স কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি জামাল উদ্দিন বাচ্চু, শেখ জাকিউর রহমান, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রফিকুর রহমান রিপন, আহসান আহম্মেদ রোড দোকান মালিক সমিতির সভাপতি শামসুদ্দিন শ্যাম, ক্রীড়া সংগঠক ইউসুফ আলী প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন