১৬৯ কোটি টাকা পাটকল শ্রমিকদের মজুরি ও বোনাস দিল সরকার, মিলকলোনীতে আনন্দের জোয়ার

319

ডেক্স রিপোর্ট, সিআইএনটিভি২৪

আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতর সামনে রেখে পাটকল শ্রমিকদের জন্য ১৬৯ কোটি ১৪ লাখ টাকা ছাড় করেছে সরকার। ফলে জুট মিল শ্রমিক কর্মচারি কলোনীতে বয়ছে আনন্দের  জোয়ার। শ্রমিকদের মুখে ফিরে এসেছে হাসি। নতুনভাবে বাঁচার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে শ্রমিক পরিবার।

চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত বকেয়া মজুরি, মে ও জুন মাসের মজুরি এবং উৎসব বোনাসে ব্যয়ের জন্য সোমবার এ অর্থ ছাড় করেছে অর্থ বিভাগ। তবে পাটকল কর্মকর্তারা এ থেকে কোনো টাকা পাবেন না। অ্যাকাউন্ট পে চেকের মাধ্যমে শ্রমিকদের অ্যাকাউন্টে সরাসরি এ অর্থ চলে যাবে। পাটকল শ্রমিকদের জন্য ছাড়কৃত অর্থসহ গত ১০ অর্থবছরে বিজেএমসির অনুকূলে সরকারের ব্যয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে সাত হাজার ৬৪৬ কোটি ৪৬ লাখ টাকা।

অর্থ ছাড়ের ক্ষেত্রে অর্থ বিভাগ ছয়টি শর্ত দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বরাদ্দকৃত অর্থ বিজেএমসির কারখানাগুলোর জন্য যে খাতে দেওয়া হয়েছে, এর বাইরে অন্য কোনো খাতে ব্যয় করা যাবে না। এ অর্থ সুনির্দিষ্ট ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট পে চেকের মাধ্যমে দিতে হবে। অর্থ ব্যয়ের সাত দিনের মধ্যে মিলভিত্তিক শ্রমিকদের তালিকাসহ বিস্তারিত বিবরণী অর্থ বিভাগে পাঠাতে হবে। এ অর্থ সরকারের বিধি-বিধান অনুসারে ব্যয় করতে হবে। বিধিবহির্ভূতভাবে অর্থ ব্যয় হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা দায়ী থাকবেন।

অফিস আদেশে আরো বলা হয়, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়, বিজেএমসি ও অর্থ বিভাগের মধ্যে সমঝোতা স্মারকে (এমওইউ) বর্ণিত শর্ত যথাযথভাবে পালন করতে হবে। বরাদ্দকৃত অর্থ বিজেএমসির অনুকূলে ‘পরিচালন ঋণ’ হিসেবে গণ্য হবে। এ অর্থ আগামী ২০ বছরে ৫ শতাংশ সুদে প্রতি ছয় মাসের কিস্তিতে পরিশোধ করতে হবে। আর এ জন্য অর্থ বিভাগের সঙ্গে বিজেএমসিকে একটি ঋণ চুক্তি করতে হবে বলেও এতে জানানো হয়েছে। সবশেষে বলা হয়েছে, বরাদ্দ দেওয়া অর্থ শুধু শ্রমিকদের বকেয়াসহ মজুরি এবং উৎসব ভাতা হিসেবে পরিশোধ করতে হবে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকার ২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছর পর্যন্ত বিজেএমসির অনুকূলে সাত হাজার ৪৭৭ কোটি ৩২ লাখ টাকা ব্যয় করেছে। এবার এর সঙ্গে আরো ১৬৯ কোটি ১৪ লাখ টাকা যোগ হলো। ২০০৯-১০ অর্থবছরে কাঁচা পাট কিনতে এক হাজার ১০০ কোটি টাকা দেওয়া হয়।

২০১০-১১ অর্থবছরে বেতন, ভাতা ও ঈদ বোনাস বাবদ দেওয়া হয় ৭০৮ কোটি ৭০ লাখ টাকা। ২০১১-১২ অর্থবছরে গ্র্যাচুইটি, প্রভিডেন্ট ফান্ড এবং অন্যান্য খাতে ৬২৯ কোটি ৮৩ লাখ টাকা দেওয়া হয়। ২০১২-১৩ অর্থবছরে বিদ্যুৎ বিলসহ অন্যান্য বিল পরিশোধে দেওয়া হয় ১২৫ কোটি পাঁচ লাখ টাকা। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বন্ধ হয়ে যাওয়া দুই মিল আবার চালু করতে সরকারের ব্যয় হয় ১০৫ কোটি ২৯ লাখ টাকা। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বিজেএমসির অনুকূলে বন্ড ছাড়ার জন্য ব্যাংকের পেমেন্ট হিসেবে দেওয়া হয় দুই হাজার ৩৮৯ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে রূপালী ব্যাংকের বকেয়া পরিশোধে ৪৩৮ কোটি ২৬ লাখ টাকা দেওয়া হয়।

২০১৬-১৭ অর্থবছরে সরকারি গ্যারান্টির বিপরীতে কাঁচা পাট কিনতে ছাড় করা হয় ৫০০ কোটি টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বেতন কমিশনের বকেয়া পরিশোধে দেওয়া হয় ৪০০ কোটি টাকা। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে গুলশানে বিজেএমসির ১০ দশমিক ৩৩ বিঘা জমি কেনা বাবদ দেওয়া হয় এক হাজার ৮০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। সর্বশেষ সোমবার চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট থেকে বকেয়া বেতন, দুই মাসের বেতন এবং উৎসব ভাতা হিসেবে দেওয়া হল ১৬৯ কোটি ১৪ লাখ টাকা। সূত্র ও সৌজন্যে : বাংলা আওয়ার