আবু দাউদ ইমরান, ডেক্স রিপোর্ট
একজন সফল তত্ত্বাবধায়ক ও একজন প্রথম হাসপাতাল পরিচালকের নেতৃত্বে নতুন রুপে দাঁড়িয়েছে খুলনা মেডিকেল কলজে হাসপাতাল । তবে সফল তত্ত্বাবধায়ক ও প্রথম হাসপাতাল পরিচালক একজন ব্যাক্তি। তিনি হলেন ডাঃ এটিএম মঞ্জুর মোর্শেদ। যোগদান করনে তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে, পরবর্তীতে হাসপাতাল পরিচালক হিসেবে পদোন্নতী লাভ করনে।
একসময় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রবেশ করলে দেখা মিলত নোংরা ও স্যাতঁসেতে পরিবেশ। সাথে থাকত দালালচক্রের হাতছাঁনি। এদিকে পিছিঁয়ে ছিল না সরকারি ঔষধ চুরির রমরমা ব্যবসা ও সার্টিফিকেট বাণিজ্যে। হাসপাতালের রোগিদের জন্য বরাদ্দকৃত খাবারের বেশিরভাগই মাঝে মধ্যে গায়েব হয়ে যেত। হাসপাতালটি চালু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত একাধিক তত্ত্বাবধায়কের পরিবর্তন হলেও, তখনও পরিবর্তন হয়নি হাসপাতালের অনিয়মের চিত্র।
তবে ২০১৭ সালের ২৮ জুন হাসপাতালটিতে নতুন তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে ডাঃ এটিএম মঞ্জুর মোর্শেদ যোগদান করলে হাসপাতালটির শনির রাহুগ্রাস অনেকটা কাটতে শুরু করে। মঞ্জুর মোর্শেদ দক্ষ ব্যবস্থাপনা ও সাহসি উদ্যেগে যোগদানের মাত্র ৭ দিনের মধ্যেই পুরো হাসপাতালটির চেহারা বদলে ফেলেন। এরই মধ্যে তিনি দালাল চক্র, সার্টিফিকেট বাণিজ্য, ঔষধ চুরি সহ বিভিন্ন অপকর্মে বাঁধা হয়ে দাড়াঁন ।
বর্তমান পুরো খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটি অবকাঠামগত উন্নয়ন সহ চিকিৎসা সেবার মান অতীতের যেকোন সময়ের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যেগে হাসপাতালটি এখন ৫০০ শয্যার মর্যাদা লাভ করে। সেই সাথে পরিচালক, উপ-পরিচালক ও সহকারি পরিচালকের পদ সৃষ্টি হয়। এদিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানাযায়, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তত্তা¡বধায়ক ডাঃ এটিএম মঞ্জুর মোর্শেদকে হাপাতাল পরিচালক হিসেবে পদোন্নতী দেওয়া হয়। ফলে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইতিহাসে প্রথম পরিচালক হলেন মঞ্জুর মোর্শেদ।
হাসপাতাল পরিচালক মঞ্জুর মোর্শেদ এ প্রতিবেদককে বলেন, যোগদানের ৭দিনের মধ্যেই বিভিন্ন অনিয়ম বন্ধ করা হয়েছে। মূমুর্ষ রোগীদের জন্য আগে বাইরের থেকে অক্সিজেন ভাড়া করে আনতে হতো , আমি আশার পর সরকারিভাবে অক্সিজেন সরবরাহ করছি। এছাড়া ঔষধ চোর, খাবার চোর , সার্টিফিকেট বাণিজ্য সিন্ডিকেট সহ বিভিন্ন প্রতারক সিন্ডিকেটকে ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে। জনবল সম্পর্কে তিনি বলেন, পর্যাপ্ত জনবল সৃষ্টি হলে হাসপাতালটি একটি মডেল হাসপাতাল হিসেবে রুপ নিবে।
৫০০ শয্যা এ হাসপাতালের প্রথম পরিচালক হিসেবে যোগদানে তার অনুুভূতি সর্ম্পকে জানতে চাইলে তিনি বলেন, একজন হাসপাতাল পরিচালক সত্যিকারেই যদি চায়, হাসপাতাল ভালভাবে চলেব, তবে সে পারবে। এটা অসম্ভব কিছু না। আর পরিচালক পদে নিযুক্ত হতে পেরে আমি সর্বপ্রথম মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সচিব , স্থানীয় সংসদ সদস্য শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল সহ সকলের প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা জানাই।
এক প্রশ্নের জবাবে মোর্শেদ বলেন, পদের পরিবর্তন হয়েছে, ব্যক্তির নয়। সুতরাং আমি যতদিন খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আছি কোন প্রকার দূর্নীতি অনিয়ম এর সাথে মাথা নত করব না । অচীরেই খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে দক্ষিনবঙ্গের একটি মডেল হাসপাতাল হিসেবে তুলে ধরব।
উল্লেখ্য, খুলনাসহ দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের পর ১৯৮১ সালের ১৮ জানুয়ারী নগরীর বয়রা এলাকায় ৪৩ দশমিক ২৫ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত হয় খুলনা ২৫০ শয্যার হাসপাতাল। এরপর ১৯৯৪ সালে এটির নামকরণ করা হয় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। ১৯৯৮ সালে হাসপাতালটি ৫০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। যা ২০০৮ সালের ১ জুলাই প্রশাসনিক অনুমোদন পায়। ফলে সর্বশেষ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের চিঠির মাধ্যমে হাসপাতালটি ৫০০শয্যার মর্যাদা লাভ করল।