খুলনা সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়নমুখী অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা

258
মোঃ আল আমিন খান, খুলনা ব্যুরো   
বুধবার দুপুরে কেসেসির শহীদ আলতাফ মিলনায়তনে সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) ২০১৯-২০ অর্থবছরের ৮৬৫ কোটি ৫৪ লাখ ৩ হাজার টাকার বাজেট ঘোষণা করেন। বিগত অর্থবছরে বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৩৭ কোটি ৯ লাখ ৮৬ হাজার টাকা। সংশোধিত বাজেটে এর আকার দাঁড়িয়েছে ২৯৮ কোটি ৮৩ লাখ ১৪ হাজার টাকা। লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের হার ৪৬ দশমিক ৯০ শতাংশ। এবারের ঘোষিত বাজেটে রাজস্ব ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬৯ কোটি ৮২ লাখ ২৬ হাজার টাকা ও উন্নয়ন খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৯৫ কোটি ৭১ লাখ ৭৭ হাজার টাকা। এর মধ্যে বর্তমানে কেসিসির হাতে রয়েছে ৮৬ কোটি ৫১ লাখ ৫ হাজার টাকা। ঘোষিত বাজেটকে উন্নয়নমুখী বাজেট উল্লেখ করে সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, এ বাজেটে নতুন কোনো করারোপ করা হয়নি। বকেয়া পৌরকর আদায়, নবনির্মিত সকল স্থাপনার ওপর প্রচলিত নিয়মে কর ধার্য ও নিজস্ব আয়ের উৎস সম্প্রসারণ, যেমন- মার্কেট, দোকানঘর, আয়বর্ধক স্থাপনা নির্মাণ ও করপোরেশন এলাকা সম্প্রসারণের মাধ্যমে কেসিসির আয় বৃদ্ধির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এ বাজেটে নগরীর সড়ক ও ড্রেনেজ, তথা জলাবদ্ধতা নিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এছাড়া শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে বাজেটে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। অবকাঠামো উন্নয়নের সঙ্গে এগুলো রক্ষণাবেক্ষণের ওপরও বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এবারের বাজেটে নাগরিক সেবা সম্প্রসারণ ও সেবার মান উন্নীতকরণ, অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন, পার্ক, ধর্মীয় উপাসনালয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন ও কেসিসির বিভিন্ন দফতর আধুনিক প্রযুক্তির আওতায় আনাসহ জবাবদিহিতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এ বাজেটে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া রোগ প্রতিরোধে মশক নিধন ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে যে ক্ষতি হচ্ছে, তা মোকাবিলা, অবকাঠামো গড়ে তোলা ও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের স্বনির্ভর করে গড়ে তোলাসহ এলাকার রাস্তাঘাট, ড্রেন, ল্যাট্রিনসহ শিক্ষার মান সম্প্রসারণ করার দিক নির্দেশনা রয়েছে এ বাজেটে।কেসিসির নিয়মিত ও মাস্টার রোল কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধিজনিত কারণে করপোরেশনের সংস্থাপন ব্যয় প্রতিবছরই বাড়ছে। নিজস্ব সংস্থাপন ব্যয় মিটিয়ে ও ব্যয় সংকোচন করে নগরীর বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের জন্য রাজস্ব খাত থেকে এ বাজেটে ৬১ কোটি ৪১ লাখ ৪২ হাজার টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এর ভেতরে অবকাঠামো ও রাস্তাঘাট উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে এগুলো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য রাজস্ব তহবিল থেকে ১৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। মেয়র আরো বলেন, এ বছর উন্নয়ন বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৭১ কোটি ৯৯ লাখ ২০ হাজার টাকা। এ বরাদ্দ থেকে পূর্ত খাতে ৪২ কোটি ২৫ লাখ টাকা, ভেটেরিনারি খাতে ২৫ লাখ টাকা, জনস্বাস্থ্য খাতে ১০ কোটি ৪০ লাখ টাকা, কঞ্জারভেন্সি খাতে ১৬ কোটি ৫৯ লাখ ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। নগরীতে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের দায়িত্ব খুলনা ওয়াসার হলেও বিশেষ প্রয়োজনে নগরবাসীর দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে গভীর ও অগভীর নলকূপ সাবমারসিবল পাম্পে রূপান্তর করার জন্য এ খাতে ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। নির্বাচনী অঙ্গীকারের কথা উল্লেখ করে সিটি মেয়র বলেন, ২০১৯-২০ অর্থবছরে জাতীয় এডিপিতে কেসিসির দু’টি প্রকল্পে ৪০২ কোটি ৫৬ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যা চলতি বছরে পাওয়া যাবে। এর মধ্যে কেসিসির গুরুত্বপূর্ণ ও ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা মেরামত ও উন্নয়ন প্রকল্পটি ২০১৮-১৯ অর্থবছর থেকে ২০২০-২১ সালের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হবে। বর্তমান অর্থবছরে এ প্রকল্পের জন্য ১৮৪ কোটি ৮৮ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নের কথা তুলে ধরা তিনি বলেন, নগরীর দরিদ্র জনগণের উন্নয়নে বস্তি এলাকায় রাস্তা, ড্রেন, কালভার্ট, টয়লেট নির্মাণ ও উন্নয়নের পরিকল্পনা গ্রহণ, দরিদ্র ও মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের আর্থিক সহায়তাসহ পুস্তক কেনার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এ প্রকল্পে ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এতে নগরীর স্বল্প আয়ের মানুষের জীবনযাত্রার মানের উন্নয়ন ঘটবে।