উজিরপুরে সড়কের নির্মাণ কাজ শেষ না হতেই বেহাল দশা

143
বরিশালের উজিরপুর উপজেলায় জনগুরুত্বপূর্ণ ধামুড়া-সাতলা আঞ্চলিক সড়কের নির্মাণ কাজ শেষ না হতেই বেহাল দশায় পরিনত হয়েছে। ইতোমধ্যে সড়কটির রামেরকাঠীসহ বেশ কয়েকটি স্থানে সড়কের অংশ ধ্বসে পরেছে। আবার কোথাও কোথাও সড়কের মাঝের কার্পেটিং উঠে গেছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) উপজেলা দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জনগুরুত্বপূর্ণ ওই সড়কটি পূনঃনির্মানের জন্য ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এলজিইডি’র ফ্লাট ড্যামেইজ রিপেয়ারিং প্রকল্প থেকে ৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। সেই মোতাবেক বরিশালের আমির ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানী নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সড়কের নির্মান কাজের দ্বায়িত্ব পায়। ২০১৯ সালের ৩০ জুন সড়ক নির্মানের কাজ শেষ করা হয়।
সহকারী উপজেলা প্রকৌশলী এস.এম জিয়াউল হক জানান, ‘কাজের শুরুতেই সড়ক ব্যবহারকারী যানবাহনের শ্রমিক ও স্থানীয় জনসাধারন নির্মান কাজে নিন্মমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ করেন। তাদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে চলতি বছরের এপ্রিল মাসে সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আকস্মিক সড়ক এলাকা পরিদর্শন করেন। ওই সময় সড়ক নির্মান কাজে পচা গলা ইটের খোয়া দিয়ে রোলার চাঁপা দেওয়ার সময় কর্মকর্তারা তাৎক্ষনিক সড়কের সকল কাজ বন্ধ করে দেয়।’ স্থানীয় একাধিক বাসিন্দারা জানান, এ ঘটনার কয়েকদিন পরেই মে মাসে উপজেলা প্রকৌশলীর যোগসাজসে তরিৎগতিতে সেই নিন্মমানের সামগ্রী ব্যবহার করেই সড়কের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। জুন মাসের মধ্যেই চলাচলের জন্য সড়কটি উন্মুক্ত করে দেয়া হয়।
স্থানীয়রা আরও জানান, চলতি মাসের ১২ আগস্ট প্রথম সড়কের রামেরকাঠি অংশের মাঝখান থেকে কার্পেটিং উঠে যেতে থাকে এবং ১৫ আগস্ট একই এলাকার ৩টি স্থানে বড় বড় ফাঁটল ধরে জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কটি ভেঙ্গে যায়।
স্থানীয় শিক্ষক মোঃ দেলোয়ার হোসেন, ব্যবসায়ী কবির হাওলাদার, শিক্ষক পিটু মজুমদারসহ একাধিক বাসিন্দারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘কাজের শুরুতেই ঠিকাদার নিন্মমানের সামগ্রী ব্যবহার করায় কাজ শেষ হতে না হতেই এ বেহাল দশার সৃষ্টি হয়েছে।’
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকৌশলী ইউনুস আলীর সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক আমির হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘সড়কটি নির্মানের জন্য অনেক উঁচু করে ডিজাইন করা হয়েছে কিন্তু প্রস্তাবিত দরপত্রে সড়ক সংরক্ষনের জন্য কোন প্রকার প্রটেকশন ওয়ার্ক (বাজেট) ধরা ছিলোনা। ফলে সড়কের দুই পাশে যদি কোনো নদী, পুকুর বা ডোবা থাকে সেখানে সড়ক ভেঙ্গে যাওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়।’
সড়কের মাঝখান থেকে কার্পেটিং উঠে যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এ রকম হওয়ার কথা নয়, তবে যদি এ রকম হয়ে থাকে সে ক্ষেত্রে আগামি এক বছরের মধ্যে সড়কের যাবতীয় ক্ষয়-ক্ষতি তার মেরামত করে দিতে হবে। এছাড়াও ভেঙ্গে যাওয়া অংশগুলো ইতোমধ্যে মেরামতের কাজ শুরু করা হয়েছে।’
উল্লেখ্য, উজিরপুর উপজেলার ধামুড়া-সাতলা সড়কের ধামুড়া ডিগ্রি কলেজ থেকে চেরাগ আলী মার্কেট পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটারের জনগুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটি প্রায় ৫ বছর পর্যন্ত সকল প্রকার যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী ছিলো। প্রতিনিয়ত সাতলা-বরিশাল রুটে চলাচলরত যাত্রীবাহি বাসসহ ছোট-বড় যানবাহন এ সড়কে দুর্ঘটনা কবলিত হয়েছে। এসব দূর্ঘটনায় অসংখ্য মানুষ আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরন করেছেন।