ডেঙ্গু প্রতিরোধে অভিযান, দুই সিটির ৬১০০০০ জরিমানা, কারাদণ্ড ২

106

ডেঙ্গুর উৎস এডিস মশার বংশ বিস্তার রোধে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) চলমান বাড়িবাড়ি ‘চিরুনী অভিযানের’ দ্বিতীয় দিনে ৫ লাখ ৫০ টাকা জরিমানা আদায় করেছে। এসময় প্রায় তিনশটি বাড়িতে এডিসের লার্ভার উপস্থিতি পাওয়ায় তাদেরকে প্রাথমিকভাবে সতর্ক করা হয়। এছাড়া ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) বাড়িবাড়ি পরিদর্শনে এডিসের লার্ভা পওয়ায় ২জন বাড়ি মালিককে কারাদণ্ড এবং ৬০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। গতকাল দিনভর দুই সিটি তাদের অভিযান কার্যক্রম পরিচালনা করে।
ডিএনসিসি দ্বিতীয় দিনে ৩৬টি ওয়ার্ডের ১০ হাজার ৭২০টি বাড়ি ও স্থাপনা পরিদর্শন করে। এরমধ্যে ২৯৮টি বাড়ি ও স্থাপনায় এডিস মশার লার্ভার পাওয়া যায়। এ সব বাড়ি ও স্থাপনায় ‘এ বাড়ি/স্থাপনায় এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়’ লেখা স্টিকার লাগানো হয়। এ ছাড়া ৫ হাজার ১৩টি বাড়ি ও স্থাপনায় এডিস মশার বংশবিস্তার উপযোগী স্থানে জমে থাকা পানি পাওয়া যায়। এডিস মশার বংশবিস্তারের উপযোগী এ সকল স্থান ধ্বংস করা হয়।

প্রতিটি ওয়ার্ডের কাউন্সিলরগণ ‘চিরুনি অভিযান’ তত্বাবধান করেন। এসময় এডিস মশার লার্ভা পাওয়ায় ডিএনসিসির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাজিদ আনোয়ার ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে গুলশানের ‘এক্সিকিউটিভ ইন লিমিটেড’ প্রতিষ্ঠানকে ৩ লাখ টাকা, ‘মিরাকি রেস্টুরেন্ট’কে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। একই অপরাধে অঞ্চল-৩ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মীর নাহিদ আহসান গুলশানের শান্তা প্রোপার্টিজকে ১ লাখ টাকা, শাহজাদপুরে ‘অনওয়ার্ড প্রোপার্টিজ’কে ৫০ হাজার টাকা এবং শাহজাদপুরে ব্যক্তিগত একটি নির্মাণাধীন ভবনের মালিককে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
গতকাল মোহাম্মদপুরে চিরুনি অভিযানে পরিচ্ছন্নতা ও মশককর্মীদের কাজ পরিদর্শন করেন ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম। তিনি নুরজাহান রোডের ঢাকা স্টেট কলেজের সামনে এলাকা বাড়ি মালিকদের উদ্দেশে বলেন, দুই বাড়ির ময়লা এ বারের মতো ডিএনসিসির পরিচ্ছন্নতাকর্মীগণ পরিষ্কার করে দিচ্ছে। তবে ভবিষ্যতে কমিউনিটির লোকজনকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। বাসার বাইরে কোনোভাবেই ময়লা ফেলা উচিত নয় বলে তিনি বাড়ির মালিকগণ ও সোসাইটির নেতৃবৃন্দকে এ বিষয়ে একসঙ্গে বসতে হবে। চলমান চিরুনি অভিযানে সহযোগিতা করার জন্য মেয়র নগরবাসীকে ধন্যবাদ জানান। মেয়র আরো বলেন, ডিএনসিসির পরিচ্ছন্নতাকর্মীগণ প্রতিদিন সকাল ৯টার মধ্যে শহরকে পরিচ্ছন্ন করে দেয়, কিন্তু দুঃখের বিষয় দোকানের কর্মচারীগণ সকাল ৯টায় দোকান পরিষ্কার করে রাস্তায়, ফুটপাতে ময়লা ফেলে। নিজস্ব স্থাপনার ভিতরে যাতে এডিস মশা বংশবিস্তার করতে না পারে সেজন্য তিনি মেট্রোরেলসহ সকল প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষকে আহবান জানান।
এদিকে, এডিসের বংশবিস্তার রোধে ডিএসসিসি তাদের বাড়িবাড়ি অভিযান ও ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনায় গতকাল ২জনকে কারাদণ্ড ও ৬০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেছে। এসময় মোট ২০৬টি বাড়ি পরিদর্শন করে এডিসের লার্ভা পাওয়ায় ৬জন বাড়ি মালিকককে সতর্ক করে দিয়েছে। এর মধ্যে কলাবাগান সেন্ট্রাল রোডের ৭৩/১ নং বাড়িতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়ায় মো. আব্দুল মালেক এবং মো. ইউসুফ আলীকে ৩ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। এছাড়া সেন্ট্রাল রোডের ৭৩/বি বাড়িতে এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়ায় ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেন অঞ্চল-১ এর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মিজানুর রহমান। অঞ্চল-৩ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বাবর আলি ৪৭টি বাড়ি পরিদর্শন করেন। এরমধ্যে জিগাতলা ১৭/১ হোটেল সুনামীতে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ ও মশার লার্ভা পাওয়ায় ৫০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেন। অঞ্চল-২ এর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শেখ জাহিদ হাসান গতকাল ২৫টি বাড়ি পরিদর্শন করে এরমধ্যে ৩টি বাড়ির এডিসের লার্ভা ধ্বংস করে দিয়েছেন। অঞ্চল-৪ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উদয়ন দেওয়ান ৩৪নং ওয়ার্ডের আলু বাজার এলাকায় ২৭টি বাড়ি পরিদর্শন করেছেন। এরমধ্যে এডিসের লার্ভার উপস্থিতি পাওয়ায় ৬জন বাড়ির মালিককে সতর্ক করে দিয়েছেন। অঞ্চল-৫ এর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইরফান উদ্দিন এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুনিরুজ্জামান গেন্ডারিয়া এলাকায় ৬০টি বাড়ি ইন্সপেকশন করেছেন। এছাড়া ২০নং ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত বাংলাদেশ সচিবালয়ে এবং মতিঝিল পোষ্টাল অফিসার্স কোয়ার্টারে পরিচ্ছন্নতা ও মশার লার্ভা নিধন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। মেয়র সাঈদ খোকনের এডিস মশার লার্ভা নিয়ন্ত্রণে সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহকে টার্গেট ধরে গৃহীত ডিএসসিসির ব্যাপক ও বিস্তারিত এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

সৌজন্যে : মানবজমিন