চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া কথিত যুবলীগ নেতার প্লট বাণিজ্য

158

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার সরফভাটা ইউনিয়নের ক্ষেত্রবাজার এলাকায় অন্যের কৃষিজমি দখল করে আবাসিক প্লট তৈরি করে বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে খালেদ হোসেন চৌধুরী রাসেল ওরফে কালাইয়া নামে এক কথিত যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে। ওই জমিতে আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও যুবলীগের নাম ভাঙিয়ে প্লট বেচাকেনা করছেন তিনি। এ বিষয়ে থানায় ধর্ণা দিয়েও কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী কৃষকরা।

কৃষকরা জানান, চলতি বছরের ১৩ই নভেম্বর ১২ জন কৃষকের আবেদনের পরিপ্রক্ষিতে ওই জমিতে স্থিতিবস্থায় বজায় রাখতে ১৪৫ ধারায় একটি আদেশ দেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (উত্তর) চট্টগ্রামের একটি আদালত। বিষয়টি তদন্ত করার দায়িত্বে রয়েছেন রাঙ্গুনিয়া উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি)।

একই সঙ্গে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় ও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রাঙ্গুনিয়া থানার ওসিকে নির্দেশও প্রদান করেন আদালত। অভিযুক্ত খালেদ হোসেন চৌধুরী রাসেল সরফভাটা ইউনিয়নের পূর্ব সরফভাটা বড় বাড়ির মৃত হোসেন শরীফ চৌধুরী ছেলে।

ভুক্তভোগী কৃষকরা জানান, রাসেলের ভাই আরিফ হোসেন সবুর একজন দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী। অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী গড়ে তুলে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ছিনতাই ও চাঁদাবাজি করে আসছেন তিনি।  সরফভাটা ক্ষেত্রবাজারের ব্যবসায়ী হত্যা মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামিও তিনি।

ভাইয়ের ভয়ভীতি ও যুবলীগের নাম ভাঙিয়ে রাসেল ওরফে কালাইয়া দীর্ঘদিন ধরে ভুয়া নামজারি খতিয়ান সৃষ্টি করে নিরীহ মানুষের ভিটা ও ফসলি জমি দখল করে তা বিক্রি করে আসছে।

ভুয়া কাগজ তৈরী করে একটি বেকারির মালিক সেজে তা বিক্রি করে দিয়েছে। তার অপরাধ কর্মকা-ে অতিষ্ঠ এলাকার মানুষ।

ভুক্তভোগী কৃষক লিয়াকত আলী চৌধুরী, শাহ আলম, জাহানারা বেগম, মহসিন চৌধুরীসহ কয়েকজন জানান, রাসেল সম্প্রতি সরফভাটা ইউনিয়নের ক্ষেত্রবাজারের পাশে একটি বিলে তাদের বিস্তীর্ণ কৃষিজমি দখল করে ঘেরা-বেড়া দিয়ে আবাসিক প্লট তৈরী করছে। ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে তা বিক্রি করছে। যার প্রতিকার চেয়ে তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে খালেদ হোসেন চৌধুরী রাসেল মুঠোফোনে বলেন, জায়গা দখল সংক্রান্ত আদালতের একটি মিচ মামলার কপি হাতে পেয়েছি। যে জমির বিষয়ে অভিযোগটি আনা হয়েছে, সেটা আমার জমি। যারা আমার বিরুদ্ধে মামলা করেছে, আমিও তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সরফভাটা ইউপি চেয়ারম্যান শেখ ফরিদ আহমদ বলেন, রাসেল নামে যুবলীগে কেউ নেই। তার ভাই সবুর হত্যা মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি হলেও এলাকায় সে বুক ফুলিয়ে হাঁটছে। রাসেলের বিরুদ্ধেও একাধিক মামলা রয়েছে। তাদের ভয়ে কেউ এলাকার কেউ মুখ খোলার সাহস পায় না। কৃষিজমিতে আবাসিক প্লট তৈরিতে সরকারি বিধি-নিষেধ থাকলেও সে তা মানছে না।

জানতে চাইলে রাঙ্গুনিয়ার উপজেলা যুবলীগের সভাপতি শামসুদ্দোহা সিকদার আরজু বলেন, রাসেল বিএনপি কর্মী। যুবলীগে অনুপ্রবেশকারী। তিনি যুবলীগের নাম ভাঙ্গিয়ে এসব অপকর্ম করে আসছেন। রাঙ্গুনিয়া উপজেলা ওয়ার্ড ও ইউনিয়নের কমিটিতে তার কোন পদ নেই। তার বিরুদ্ধে থানায় অনেক অভিযোগ রয়েছে।

রাঙ্গুনিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মাহবুব মিলকী বলেন, সরফভাটা ইউনিয়নের ক্ষেত্রবাজার এলাকায় কৃষি জমিতে জায়গা নিয়ে ১২ জন ব্যক্তি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত থেকে একটি নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এটি তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন এখানকার এসি ল্যান্ডকে। সেখানে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। বর্তমানে প্লটের তৈরির কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।