বিতর্কের মুখে রাজাকারের তালিকা স্থগিত, ২৬শে মার্চ চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে

119

প্রকাশের চার দিনের মাথায় রাজাকারের বিতর্কিত তালিকা স্থগিত করেছে সরকার। যাচাই বাছাই করে আগামী ২৬শে মার্চ চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে বলে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। সন্ধ্যায় রাজাকার, আলবদর, আলশামস, শান্তিকমিটি ও স্বাধীনতাবিরোধীদের প্রকাশিত তালিকা স্থগিত করে প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাঠায় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। তালিকা নিয়ে তুমুল বিতর্কের মধ্যে বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রীকে এ বিষয়ে নির্দেশনা দেন। তিনি তালিকাটি যাচাই বাছাই করতে বলেন। পরে মন্ত্রণালয় তালিকাটি স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয়। বিকালে মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট থেকে তালিকা সরিয়ে নেয়া হয়।

মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য অফিসার সুফি আব্দুল্লাহিল মারুফ স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ১৫ই ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস, শান্তিকমিটি ও স্বাধীনতাবিরোধী ১০ হাজার ৭৮৯ জনের তালিকা প্রকাশ করা হয়। তালিকা প্রকাশের পর বিভিন্ন মহল থেকে অভিনন্দিত করা হয়েছে, আবার তালিকায় কিছু ভুল-ত্রুটির জন্য তীব্র সমালোচনাও হয়েছে।

স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তির মধ্যে যাতে কোন ভুল বোঝাবুঝি না হয় সেজন্য রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস, শান্তিকমিটি ও স্বাধীনতাবিরোধীদের প্রকাশিত তালিকা স্থগিত করেছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।

মোজাম্মেল হক জানান,  ইতিমধ্যে  প্রধানমন্ত্রী এ তালিকা যাচাই-বাছাই করে সংশোধনের নির্দেশ দিয়েছেন। কি প্রক্রিয়ায় দ্রুততম সময়ে দেশব্যাপী যাচাই-বাছাই সম্পন্ন করে প্রকৃত তালিকা প্রকাশ করা যায় সে ব্যাপারে বিভিন্ন মহলের সঙ্গে আলোচনা প্রয়োজন। আগামী ২৬শে মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসে এ তালিকা প্রকাশের প্রচেষ্টা থাকবে বলে মন্ত্রী জানিয়েছেন।

মহান বিজয় দিবসের আগের দিন ১৫ই ডিসেম্বর সংবাদ সম্মেলন করে রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। এ তালিকায় মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ পরিবারের সদস্য, মুক্তিযুদ্ধে শহীদের স্ত্রী, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকসহ অনেকের নাম আসে যারা স্বাধীনতা আন্দোলনে বিভিন্ন পর্যায়ে ভূমিকা রাখেন। এ তালিকা প্রকাশের পর চার পাশ থেকে নানা প্রতিক্রিয়া আসতে থাকে। ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকেরা। এমন অবস্থায় তালিকার ভবিষ্যৎ নিয়েও প্রশ্ন দেখা দেয়। তোপের মুখে মন্ত্রণালয় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানায়, আবেদন করলে রাজাকারের তালিকায় আসা মুক্তিযোদ্ধাদের নাম বাতিল করা হবে। সমালোচনার মুখে মন্ত্রী নিজেই দুঃখ প্রকাশ করেন। তবে তিনি জানিয়েছিলেন, তারা কোন তালিকা করেননি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে নেয়া তালিকাই প্রকাশ করেছেন।

প্রবীণ আইনজীবী ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, নিজের নাম বাদ দেয়ার জন্য তিন মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন।

এদিকে, গতকাল বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের প্রধান কার্যালয় জাতীয় সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানান, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রকাশিত রাজাকারের তালিকা নতুন করে যাচাই-বাছাই করে সংশোধন করতে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, রাজাকারের তালিকায় ভুল-ত্রুটি নিয়ে ইতিমধ্যেই দুঃখ প্রকাশ করেছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী। সেই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীও এ তালিকা নতুন করে যাচাই-বাছাই করে সংশোধনের নির্দেশও দিয়েছেন। সুতরাং এটি নিয়ে আর কোনো প্রশ্ন নেই। অন্যদিকে গতকাল বিকালে সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়কে আমরা রাজাকার, আলবদর ও আল শামসের কোনো তালিকা দেইনি। তিনি বলেন, আমাদের দেয়া তালিকাটি দালাল আইনের অভিযুক্তদের তালিকা।

ওদিকে সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ওই তালিকা নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, এটি খুব খারাপ একটি কাজ হয়ে গেছে। এই ঘটনায় মুক্তিযোদ্ধা বা তাদের পরিবারের কেউ কষ্ট পেয়ে থাকলে তারা যেন ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখেন। কারণ এমন একটি তালিকায় মুক্তিযোদ্ধাদের নাম আসাটা দুঃখজনক।