যশোর নওয়াপাড়া রেলওয়ের পাশে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ

173
উৎপল ঘোষ,যশোর থেকে
যশোহর অভয়নগর উপজেলার শিল্প বানিজ্যিক বন্দর নওয়াপাড়ার বুক চিরে যশোহর – খুলনা রেল লাইন। ব্যবসা বানিজ্যর সমৃদ্ধির মূলে রয়েছে নওয়াপাড়ার রেলপথ ও ভৈরব নদী। উত্তম যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকার কারণে এখানে অনেক ভারী ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। নৌবন্দর ও শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠার কারনে অনেক বেকার সমস্যা দূরীকরণ হয়েছে। তাছাড়া এই শহরের বুক দিয়ে বয়ে গেছে খুলনা – যশোহর রেলওয়ে লাইন। যা ঢাকা ও ভারত – বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী দেশের বৃহৎ স্থল বন্দর যশোহর বেনাপোল। বেনাপোল স্থল বন্দরের সাথে সংযোগ স্থাপন করে ভারতের সাথে মিলন ঘটিয়েছে। ফলে ব্যবসা বানিজ্যর জন্য রেলওয়ের ভূমিকা যুক্তিযুক্ত। আর দক্ষিঞ্চল রেলওয়ে থেকে সরকার প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেন।আর এ অর্থ দিয়ে দেশের উন্নয়ন মূলক কাজে ব্যবহার করা হয়।
বতর্মানে সারা দেশের সাথে খুলনা – নওয়াপাড়া – যশোহর রেলওয়ে অঞ্চলের উন্নয়নের মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার। মহাপরিকল্পনার ডাবল রেল লাইন স্থাপন। ভারত থেকে সরাসরি পায়রা বন্দরের সাথে সংযোগ স্থাপন। ফরিদপুর হয়ে নড়াইলের মাঝ দিয়ে নির্মিতব্য রেল লাইনের সাথে সংযোগ স্থাপন। পর্যায়ক্রমে বুলেট ট্রেন সংযোগ ও নওয়াপাড়া বৃহৎ ব্যবসা বানিজ্যকে আরও সমৃদ্ধ ও প্রসারিত করতে আমদানিকৃত পণ্য রাখার জন্য ডক ইয়ার্ড নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। আর এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রয়োজন রেলওয়ে জায়গা দখলমুক্ত করা। দেশব্যাপী রেলওয়ের জায়গা থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের মাধ্যমে সরকারের রেভিনিউ আদায়ের পরিমাণ বৃদ্ধির পাশাপাশি উন্নয়নের মহাযজ্ঞ বাস্তবায়নের অংশ হিসাবে নওয়াপাড়া রেলওয়ে লাইনের পাশ দিয়ে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন রেলওয়ে কতৃপক্ষ।
গতকাল থেকে দিনব্যাপী নওয়াপাড়ায় এ অভিযান পরিচালিত হয়। বাংলাদেশ রেলওয়ের পাকশির বিভাগীয় ভূ – সম্পত্তি কর্মকর্তা ও রেলওয়ে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট নূরুজ্জামানের নেতৃত্বে এ উচ্ছেদ অভিযানে শতাধিক এর অধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। সেই সাথে বাংলাদেশ রেলওয়ের জায়গা গড়ে উঠা পশুর হাট, ছাগলের হাট,স্যান্ডেল ও জুতার হাট,বৌবাজার সংলগ্ন মাছ বাজার তাৎক্ষণিকভাবে নিলাম ডেকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। অভিযানে ৪ লাখ ৬৭ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করে সরকারি রাজস্ব ফান্ডে জমা দিয়েছে অভিযানিক দল। এ সময় রেলওয়ের জায়গা অবৈধভাবে দখল করে  পাহাড় সমান উচু করে রাসায়নিক সার ইউরিয়া,এমওপি ,ডিএপি, জীপসাম, পাথর খোয়া অসংখ্য কয়লা সহ বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী ড্যম্পিং করে না রাখার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
অভিযান চলাকালীন  সরকারি কাজে বাঁধা দেওয়ার অভিযোগে হান্নান সরদার নামে একজন ঘাট সর্দারকে ৭ দিনের কারাদন্ড দিয়ে জেলে পাঠিয়েছেন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট। এদিকে শিল্প শহর বন্দর নগরীর নওয়াপাড়া রেলওয়ে লাইনের পাশ ঘেষে দুই পাশে গড়ে উঠা বস্তি উচ্ছেদ শুরু হলে দরিদ্র মানুষের ব্যাপক  ক্ষয় ক্ষতি হবে বলে চিন্তা করে মানবিক বিবেচনায় এনে তাদেরকে অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নিতে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পযর্ন্ত সময়  বেধেঁ দিয়েছেন বাংলাদেশ রেলওয়ে পাকশীর বিভাগীয় ভূ – সম্পত্তি কর্মকর্তা ও রেলওয়ের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট নুরুজ্জামান। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারির পর ১ লা মার্চেই আবারও চুড়ান্ত অভিযান শুরু হবে বলে জানান তিনি। তিনি আরও বলেন, ১ লা মার্চের পরে নওয়াপাড়া রেলওয়ে লাইনের দুই পাশের ৩০ ফুটের মধ্যে কোন স্থাপনা থাকবে না। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বতর্মান সরকারের মহা পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মাননীয় প্রধান মন্ত্রী দেশ রত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী রেল লাইনের দুই পাশে ৩০ ফুটের মধ্যে কোন জায়গা ইজারা দেয়ার সুযোগ নেই। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, উচ্ছেদের পরে পূণরায় সেই জায়গা যদি কেউ অবৈধভাবে দখলের চেষ্টা করে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে সাফ জানিয়ে দেন। অভিযানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন যশোহর জেলার প্রশাসকের প্রতিনিধি সুবোল চন্দ্র গোলদার, অভয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, অভয়নগর থানা পুলিশের একটি টিম,জি আরপি পুলিশের একটি বিশেষ টিম। অভিযানের বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের পাকশীর বিভাগীয় ভূ – সম্পত্তি কর্মকর্তা ও রেলওয়ের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট নুরুজ্জামানের সাথে কথা বললে তিনি বলেন,বাংলাদেশ রেলওয়ের উন্নয়নে সরকার মহা পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। ভারতের সাথে পায়রা বন্দরের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে ব্যবসা বানিজ্যকে আরও গতিশীল করতে এবং রাজস্ব বৃদ্ধি করতে বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধান মন্ত্রী এ রেলওয়ে লাইনকে ডাবল লেনে উন্নীত করার পরিকল্পনা নিয়েছে। সেই সাথে এই অঞ্চলে বুলেট ট্রেন যুক্ত করারও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা রয়েছে প্রধান মন্ত্রীর। তাছাড়া নওয়াপাড়া বন্দরে রেলওয়ের নিজস্ব ডক ইয়ার্ড নির্মাণের প্রস্তাবও রয়েছে। আর এ কারণে যুগ যুগ ধরে অবৈধ দখলে থাকা রেলওয়ের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন মাননীয় প্রধান মন্ত্রী এবং বাংলাদেশ রেলওয়ে মন্ত্রণালয়। সরকারের এ বৃহৎ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে দেশের উন্নয়নের স্বার্থে সকলকে উচ্ছেদ অভিযানে সহায়তার আহবান জানিয়ে এ কর্মকর্তা বলেন, মানবিক কারণে বস্তিবাসীকে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পযর্ন্ত  সময় দেয়া হয়েছে। ১ লা মার্চ থেকে আবারও চুড়ান্ত অভিযান শুরু হবে এবং দুই পাশে ৩০ ফুটের মধ্যে কোন অবৈধ স্থাপনা থাকবে না। তিনি আরও প্রকাশ্যে বলেন, ৩০ ফুটের মধ্যে কোন ইজারা দেয়ারও সুযোগ নেই। যদি রেলওয়ের কোন কর্মকর্তা আজকের পর থেকে ইজারা দেয় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।