দিশেহারা যশোর গদখালির ফুলচাষিরা

41
মোঃ আল আমিন খান, ব্যুরো চিফ খুলনা
করোনা ভাইরাসের কারনে প্রতিটা ব্যবসায় ধস নামতে শুরু করেছে। ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে যশোরের গদখালির ফুলচাষিরা। মাঠের ফুল মাঠেই পচে যাচ্ছে। কেটে খাওয়াতে হচ্ছে গরু ছাগলকে। ভরা মৌসুমে এমন দশায় শত কোটি টাকা ক্ষতির আশঙ্কা করছেন তারা। এমন পরিস্থিতিতে মাথায় হাত উঠেছে এ অঞ্চলের ফুলচাষিদের দেশের ফুলের রাজ্য খ্যাত যশোরের গদখালী। এখানেই ফুল বেচাকেনার জন্য গড়ে উঠেছে বড় পাইকারি বাজার। প্রতিদিন পূর্ব আকাশে লাল সূর্য উঁকি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জমে উঠতো ফুলের বাজার। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছোট-বড় পাইকাররা ফুল কিনে নিয়ে খুচরা বিক্রেতার মাধ্যমে ফুলের রঙ ছড়িয়ে দিতেন বিভিন্ন বয়সী মানুষের মনে। কিন্তু এখন ভিন্ন চিত্র। বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের কারণে ঘটেছে ছন্দপতন। করোনার প্রাদুর্ভাবে গদখালীর ফুলের বাজার মানবশূন্য। ফুল বেচাকেনা বন্ধ থাকায় চাষিরা বাগান থেকে ফুল কেটে গরু-ছাগল দিয়ে খাওয়াচ্ছেন। যশোরের গদখালী বাজার ও স্থানীয় মাঠ ঘুরে এমন দৃশ্যই দেখা গেছে। গদখালী এলাকার কৃষক শাহজাহান জানান, এবার তার আড়াই বিঘা জমির গোলাপ ফুলের খেত ছাগলের খাদ্যতে পরিণত হয়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে ১২ দিন ধরে ফুলের বেচাকেনা নেই। এদিকে বাগান থেকে প্রতিদিনই দেড় থেকে দুই হাজার গোলাপ কেটে ছাগল-গরু দিয়ে খাওয়াতে হচ্ছে। কারণ গোলাপ না কাটলে বাগান নষ্ট হয়ে যায়। একদিকে ফুলের বেচাকেনা নেই। অন্যদিকে ফুল কাটার জন্যে শ্রমিক খরচ হচ্ছে। প্রতিদিনই দুই হাজার টাকা লোকসান হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, অত্যন্ত খারাপ অবস্থার মধ্যে আছি আমরা। আমার মতো এই এলাকার হাজারো ফুলচাষি এমন বিপাকে পড়েছেন। তাদের বাগানের রজনীগন্ধা, গ্লাডিওলাস, জারবেরা ফুল কেটে গরু দিয়ে খাওয়াচ্ছে। গদখালী ফ্লাওয়ার সোসাইটি সূত্রমতে, ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালি-পানিসারার প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কৃষক ৬ হাজার হেক্টর জমিতে ফুলের আবাদ করছেন। ফুল চাষে আবহাওয়া ভালো থাকায় এবার রেকর্ড পরিমাণ ফুলের উৎপাদন হয়েছিল। ছাড়িয়ে ছিলো দামও। দেশের সবচেয়ে বড় ফুলের বাজার গদখালি বাজারে প্রায় ১২ রকমের ফুল বেচাকেনা হয়। প্রতিবছর জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ফুলের ভরা মৌসুম। কিন্তু করোনা ভাইরাসে ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস ও বাংলা বর্ষবরণ উৎসব ঘিরে ফুল চাষি ও ব্যবসায়িদের অন্তত ১শ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি গদখালী ফ্লাওয়ার সোসাইটির। বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে গদখালীর পাইকারি ফুলের বাজার ২৪ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে। চাষিরা ফুল বিক্রি করতে পারছেন না। আবার খেতে ফুল রাখতেও পারছেন না। ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস ও ১৪ এপ্রিল বাংলা বর্ষবরণ উৎসব ঘিরে যশোর অঞ্চলে ফুলচাষি ও ব্যবসায়িদের অন্তত ১শ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এখনই কৃষকদের খাদ্য সরবারাহ ও বিনা সুদে সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে।