ফেরদৌস খন্দকারকে নিয়ে বিতর্কের নেপথ্যে কি আছে ?

46

নিউ ইয়র্কে বসবাসকারী ডা. ফেরদৌস খন্দকার  কয়েক মাস ধরেই আলোচনায়। ইউটিউব ও ফেসবুকে তিনি নানা পরামর্শ দিয়ে আসছিলেন। ডা. ফেরদৌস খন্দকার ক’ দিন আগেই জানান দেশে আসছেন তিনি। দাঁড়াবেন করোনা রোগীদের পাশে। শনিবার বিমানে ওঠে বসেন তিনি। কিন্ত ঢাকায় নামার আগেই তাকে নিয়ে দেখা দেয় বিতর্ক। ফেসবুকে একটি পক্ষ থেকে বলা হয়  তিনি   খুনি মোশতাক-রশিদের আত্মীয়।

এর জবাবে সরব হয় আরেকটি পক্ষ। তারা প্রমাণ হাজির করে মেডিকেলের শিক্ষার্থী থাকার সময় তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। শিবিরের হাতে নির্যাতিতও হয়েছেন। প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকা ডা. ফেরদৌস খন্দকার নিজেও একাধিক স্ট্যাটাসে এর জবাব দিয়েছেন। এরই মধ্যে প্রশ্ন ওঠেছে তার সাবেক ছাত্রলীগ পরিচয় কেনো সামনে আনতে হলো।

ফেরদৌস খন্দকার কী বলছেন

উদ্ভুত বিতর্ক নিয়ে ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে ফেরদৌস খন্দকার লিখেছেন, দেশে আসার জন্য যখন এয়ারক্রফটে চড়ে বসি তখনও ভাবিনি, আমার জন্য এতো লজ্জাজনক তিক্ত অভিজ্ঞতা অপেক্ষা করছে। যা দেশের মানুষের কাছ থেকে আমার প্রাপ্য ছিল না। এমন কোনো অন্যায়,অপরাধ আমি করিনি। আমি দেশের মন্ত্রী এমপি কিংবা উচ্চপদে আসীন হতে চাইনি। কোভিড-১৯ নিয়ে গত তিনমাস যুক্তরাষ্ট্রে অমানুষিক পরিশ্রম করেছি। দেশেও এসেছি দেশের মানুষের কোনো কাজে নিজেকে লাগানো যায় কিনা সেই উদ্দেশ্য নিয়ে। কেউ আমার সেবা না চাইলে আমি আবার যুক্তরাষ্ট্রে চলে যাবো। আমার জন্মভূমি বাংলাদেশ। এই দেশের জনগণের ট্যাক্সের টাকায় আমি ডাক্তার হয়েছি। দায়িত্ববোধ থেকেই বার বার দেশে আসি। মানুষের জন্য কাজ করি। কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থেকে আসি না। এই দেশ থেকে ডাক্তারি পাশ করে বিদেশ গিয়ে ৯০ শতাংশই দেশে আসেন না। আমার অপরাধ আমি দেশে বার বার আসি। প্লেন থেকে নেমেই জানলাম আমাকে বঙ্গবন্ধুর খুনি খন্দকার মোশতাকের ভাতিজা উপাধি দেয়া হয়েছে। আরেক খুনি রশিদের খালাতো ভাই বানানো হয়েছে। আরো বলা হয়েছে, আমি নাকি পলাতক তারেক রহমানকে নিয়মিত টাকা পয়সা দেই।
এইসব নিয়ে আসলেই আমি বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। আমার বাড়ি কুমিল্লা, নামের সাথে খন্দকার আছে। তাই হয়তো মোস্তাক-রশিদ গংদের আত্মীয় উপাধি দেয়া হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া হলে হয়তো গোলাম আযমের আত্মীয় বানানো হতো। গোপালগঞ্জ বাড়ি হলে হয়তো বলতো আমি মুফতি হান্নানের আত্মীয়। যারা এইসব অপবাদ দিচ্ছেন জানিনা তাদের আমি কি ক্ষতি করেছি। আমি যা না আমারে তা বানিয়ে দিচ্ছেন। কিন্তু আমি যা ছিলাম তা বলছেন না কেন আপনারা ? ১৯৯১ সালের পর চট্টগ্রাম  মেডিকেলে শিবির ছাত্রদলের তোপের মুখে ছাত্রলীগের শ্লোগান দিয়েছি। শিবিরের মা’র খেয়ে ক্যাম্পাসও ছাড়তে হয়েছিল । শিবিরের সাথে যুদ্ধ করে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগকে পুনর্প্রতিষ্ঠিতও করেছি। এই বিষয়ে তথ্য নেয়া খুব সহজ। আপনারা চাইলেই খবর নিতে পারেন। আমরা যখন শিবিরের বিরুদ্ধে ফাইট করেছি তখন আজকের সমালোচকরা কই ছিলেন আমার জানা নাই। বেশি কথা বলতে চাই না। আমি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলাম। আমার সম্পর্কে যদি এই অপবাদের একটাও প্রমাণ করতে পারে তাহলে যে শাস্তি দিবে আমি তা মাথা পেতে নেবো।আর যারা অপবাদ দিচ্ছেন তাদের প্রতি কোনো অনুরোধ কিংবা অভিযোগ নাই। শুধু এই টুকু বলবো, নিজের বিবেকের কাছে দায়বদ্ধ থাকবেন। আমার সম্মানহানির এই অপচেষ্টার জন্য রোজ হাশরের ময়দানে আপনাদেরকে জবাবদিহি করতে হবে। নিয়তির বিচার অনেক কঠিন। এটা কাউকেই ছাড়বে না।

পক্ষে-বিপক্ষে বিতর্ক

ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম লিখেছেন, আহ্ ফেরদৌস ভাই !!!!!!!!!!আভ্যন্তরীণ কোন্দলের সর্বশেষ ছোবলটা আপনি খেলেন । হয়তোবা এতদিন পরে এসে !!!!!!!!!। আমি নিশ্চিত যে সিনিয়ররা আপনাকে নিয়ে মিথ্যা লিখেছে তারা অন্যদের দ্বারা বায়াসড হয়ে লিখেছেন । আপনি তো ফেসবুকে তাদের উদ্দেশ্যে চ্যালেন্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন। এখন পারলে তারা প্রমান করুক আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ সত্য ।
তবে কি একটা মানুষের বর্নাঢ্য ক্যারিয়ার নিয়ে হুজুগে বিরুদ্ধে লিখাটা অনেক বড় অন্যায় কারণ আজকে ১৭ কোটি মানুষের কাছে সে খন্দকার খুনি মোস্তাকের ভাগিনা হিসেবে ঘৃনার পাত্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করলো হয়তোবা কয়েক দিনের মধ্যেই ঘটনার তদন্ত হয়ে সত্য/ মিথ্যা জিনিসটা বের হয়ে আসবে তখন কিন্তু এত ভাইরাল হবেনা কিংবা ফেরদৌস ভাই জনে জনে ব্যাখ্যাও দিতে পারবেনা । ফেরদৌস ভাইকে আমি চিনতামনা করোনাকালীন সময়েই তারে চিনেছি । তবে আজকে সারাদিন তার সময়কার ছাত্রলীগ করা যতো বড় ভাইদের ফোন করলাম সবাই বিষয়টা নিয়ে খুব আপসেট এবং কেউ কেউ অসহায়ের মতো বললেন কেনো কিছু লিখছোনা ? অবশ্য কারোর কথায় নয় নিজের বিবেকের জায়গা থেকে লিখতেছি । মোস্তাক নামে তার মামা আছেন খবর সঠিক তবে সেই মামা থাকেন বোস্টনে এবং তিনি একজন ফার্মাসিষ্ট ।
আমি কিছুটা ধারনা করি ফেরদৌস ভাইয়ের ছাত্রলীগের ব্যাকগ্রাউন্ড দেখে হয়তোবা কোন গুরুত্বপূর্ণ চেয়ারের জন্য সুপারিশকৃত হয়েছেন যে চেয়ারের জন্য অনেকেই স্বপ্ন দেখেছেন দীর্ঘদিন ।
যে সমস্ত প্রভাবশালীরা এমন নোংরামির খেলায় মেতে উঠেছেন মনে রাখবেন ইতিহাস ক্ষমা করবেনা আপনাদের ।
রাজনীতিতে আমাদের প্রার্থনার জায়গা বলেন প্রাপ্তি প্রত্যাশার জায়গা বলেন স্বপ্ন বাস্তবায়নের জায়গা বলেন তা হচ্ছেন একমাত্র দেশরত্ন শেখ হাসিনা । তাই আমার বিশ্বাস দেশরত্ন শেখ হাসিনার নির্দেশেই তদন্তের মাধ্যমে সত্য উদঘাটিত হবে ।
গুজবের বিরুদ্ধ লড়াই করতে করতে আমরা নিজেরাই গুজবে নিমজ্জিত হচ্ছিনা তো ?
ফেরদৌস ভাই মন খারাপ কইরেননা ……………….।
সাংবাদিক আকবর হোসেন লিখেছেন, আমেরিকা প্রবাসী ডা. ফেরদৌস খন্দকারের সমর্থনে বাংলাদেশের  কিছু অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং কিছু ব্যক্তি লেখালেখি করছে। এতে ফেরদৌস খন্দকারের বিরাট উপকার হচ্ছে! এসব নিউজ পোর্টাল এবং ব্যক্তি আপ্রাণ প্রমাণ করার চেষ্টা করছে যে ফেরদৌস খন্দকার ছাত্রলীগ করতো। তাকে ছাত্রলীগ প্রমাণ করতে হবে কেন? ছাত্রলীগ না করলে কেউ কি তার নিজ দেশে ঢুকতে পারবেনা? ছাত্রলীগ প্রমাণিত না হলে কেউ কি তার নিজ দেশে কাজ করতে পারবে না?

সৌজন্যে : মানবজমিন