কাঁদতে আসেনি, ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি : মশিয়ালীবাসি

340

আবু হামজা বাঁধন, ডেক্স রিপোর্ট।।

সবুজ শ্যামল মশিয়ালী গ্রামের প্রতিটি সবুজ কচি ঘাসে এখনও নজরুল, রসুল ও সাইফুলের রক্তের দাগ শুকায়নি। গ্রামটিতে শোকের কালো মেঘ যেন কোন ভাবেই বিলীন হচ্ছে না। এখনও ভোর বেলায় নিহত সাইফুলের মা সন্তানের সদ্য কাঁচা কবরের পাশে গিয়ে অশ্রু ঝড়ায়। শোকে মাতোয়ারা মশিয়ালী গ্রামের প্রতিটি মানুষ। দল মত নির্বিশেষে, অতীতের সকল ভেদাভেদ ভুলে তারা এখন এক সারিতে । এখন তারা কাঁদতে জানে না, চোখের শেষ অশ্রুটুকুও গত ৭ দিনে ফুরিয়ে গিয়েছে। খুনীদের ফাঁসির দাবি নিয়ে মশিয়ালীবাসি আজ ঐক্যবদ্ধ। তাই কবির কবিতা এখন মশিয়ালীবাসির সুরে মিলে গিয়েছে। তারা এখন কাঁদতে আসেনি, ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছে।

আজও গ্রামবাসীর কর্মসূচি ছিল নিহতদের স্মরণে শোক সভা । দুপুর থেকেই বৃষ্টি ও কালো মেঘ জমেছিল। তারপরেও গ্রামবাসির বাধভাঙ্গা জোয়ার থামাতে পারেনি প্রবল বর্ষা। বৃষ্টিতে ভিজেপুরে মশিয়ালী গ্রাম সহ আশেপাশের কয়েকটি এলাকা থেকে শত শত মানুষ শোক সভায় যোগ দিয়েছেন। খুলনা মহানগর আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্মলীগের সাধারণ সম্পাদক রেজোয়ান আকুঞ্জী রাজার সঞ্চালনায় শোক সভা অনুষ্ঠিত হয় শুক্রবার  বিকাল ৫টায় স্থানীয় দারুল উলম দাখিল মাদ্রাসা মাঠ প্রাঙ্গনে।

শোকাহত মশিয়ালী বাসি। ছবি : এম হুসাইন

৩৬ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি ও প্রবীন শ্রমিক নেতা সরদার আব্দুল হামিদের সভাপতিত্বে শোক সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খুলনা মহানগর আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি বেগ লিয়াকত আলী। প্রধান অতিথি বেগ লিয়াকত আলী তার বক্তব্যে স্পষ্টভাবে বলেন, ট্রিপল মার্ডারের সাথে জড়িত জাফরিন , জাকারিয়া ও মিল্টনদের এ হত্যাকান্ডে সাহস যুগিয়েছে পূর্বের হত্যাকান্ড থেকে রেহায় পাওয়ার কারণে। তিনি আরো বলেন, জাকার ও জাফরিন ডাক্তারবাড়ি মমিন মল্লিকের পূত্র সাইফুল হত্যা মামলায় জড়িত থেকেও স্থানীয় প্রশাসনের শিথীলতার কারণে রেহায় পায়। ফলে সেই বলে বলীয়ান হয়ে তারা আজকের হত্যাকান্ড ঘটানোর সাহস পেয়েছে। মমিন ড্রাইভারের পূত্র সাইফুল হত্যা মামলার পুনরায় তদন্তের দাবি জানান বেগ লিয়াকত।

এছাড়া  আগত বক্তারা জাকারিয়া ও মিল্টনকে অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানান। পাশাপাশি কোন কাল বিলম্ব না করে কিলিং মিশনে ব্যবহারিত অস্ত্র উদ্ধারসহ এ ঘটনার প্রকৃত মদদদাতাদের আইনের আওতায় আনার আহবান জানানো হয়। স্বজনহারাদের পক্ষ থেকে হাফেজ মাসুম বিল্লাহ হত্যার স্পট হাড়াতলা নামক স্থানকে স্বাধীনতা চত্বর হিসেবে নামকরণের দাবি জানায় ।

 

শোকসভায় উপস্থিত ছিলেন, খানজাহান আলী থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি শেখ আবিদ হোসেন, সেক্রেটারী  আনিসুর রহমান, আটরা গিলাতলা ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব শেখ মনিরুল ইসলাম, আব্দুর রউফ খান খোকন, কাজী আজাদুর রহমান হিরক, ওয়ার্কাস পার্টি নেতা আঃ সাত্তার মোল্যা, মোঃ জাকারিয়া রিপন, মনির সিকদার, আয়ুব হোসেন মোল্যা, শেখ কামাল আহম্মেদ, সৈয়দ কিসমত আলী, লিয়াকত মুন্সি, সংরক্ষিত মহিলা আসনের ইউপি সদস্য শিরিনা আক্তার, সাবেক মহিলা মেম্বর শরিফা বেগম,  স্থানীয় ইউপি সদস্য এস এম বখতিয়ার পারভেজ, হুমায়ুন মেম্বর, আলতাফ হোসেন।

অন্যান্যদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন, শেখ শাহিনুর রহমান, আব্দুর রব, যুবলীগ নেতা মনিরুল ইসলাম ছোট্ট, তবিবুর রহমান, ৩৬নং ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মুন্সী শামীম,  শ্রমিক নেতা সালাম গাজী, ইস্টার্ণ জুট মিলের সিবিএ নেতা  নেতা ইউসুফ গাজী, মতিন সরদার, ইমদাদুল মোল্যা, আমিরুল সরদার, মীর আব্দুর রউফ, শেখ রিয়াজুর , খুলনা বিভাগীয় রির্পোটাস ক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক আল আমিন, ন্যাশনাল ক্রাইম অবজারভেশন এন্ড লিগ্যাল এইডের মামুন শেখ, সার্চ মানবাধিকার খুলনা বিভাগীয় কমিটির সহ-সভাপতি ওবায়দুর রহমান চয়ন, সার্চ এর খুলনা জেলার সেক্রেটারী এস এম ইলিয়াজ ।

এছাড়া স্থানীয় সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ সহ শত শত গ্রামবাসি শোক সভায় অংশগ্রহণ করেন।

উল্লেখ্য, গত ১৬ জুলাই খুলনার খানজাহান আলী থানার মশিয়ালী গ্রামে ঘটে যায় বর্বরচিত ও নেক্কারজনক হত্যাকান্ড। কালের সকল ঘটনাকে হার মানায়। সারা বাংলাদেশ থমকে গিয়েছিল। ওই তারিখ রাত সাড়ে আটটার দিকে মশিয়ালী গ্রামের কুখ্যাত সন্ত্রাস জাফরিন হাসান, জাকারিয়া ও মিল্টন বাহিনীর নারকীয় তান্ডব চালায়। গ্রামবাসি সূত্রে, তাদের ছোড়া এলোপাতাড়ি গুলিতে পর পর নিভে যায় তাজা ৩টি প্রাণ। এ ঘটনায় ‍মামলার অন্যতম আসামী জাফরিন হাসান সহ মোট ৪ জন গ্রেফতার হয়।

তবে পুলিশ এখন পর্যন্ত এ হত্যা মামলার নাটেরগুরু বলে খ্যাত জাকারিয়া ও মিল্টনকে ধরতে ব্যার্থ হয়েছে। প্রধান আসামীদের গ্রেফতার করতে কাল বিলম্ব হওয়ার কারণে আগামী ২৭ জুলাই সোমবার সকালে মানবন্ধনের ডাক দিয়েছেন স্থানীয়রা। যতক্ষন না পর্যন্ত দোষিদের আইনের আওতায় না আনা হয় ততক্ষন পর্যন্ত মশিয়ালীবাসি রাজপথ থেকে ঘরে ফিরবে না বলে জানান। তারা একের পর এক লাগাতার তীব্র কর্মসূচির পরিকল্পনা রেখেছে।