করোনা হাসপাতালে ব্যতিক্রম শোক দিবস পালন করেছে মৃত্যুর মুখো মুখি পলাশী

162

ডেক্স রিপোর্ট।।

একদিকে করোনায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর মুখো মুখি। অন্যদিকে হাসপাতালের মধ্যেই কাচা ফুল আর মোমবাতি প্রজ্বলন করে জাতির পিতাকে বিনম্র শ্রদ্ধাসহ জাতীয় শোক দিবস পালন করেছে শেখ লুৎফুন নাহার পলাশী নামের এক মুক্তিযোদ্ধার সন্তান । ১৫ আগষ্ট রাত ১২ টা এক মিনিটে খুলনা নুরনগর এলাকায় করোনা হাসপাতালেই ( ডায়াবেটিক হাসপাতাল ) একা একা শোক দিবস পালন করে এই করোনা আক্রন্ত রোগী। তবে এ অনুষ্ঠানে হাসপতালের ডাক্তার, নার্স, ওয়ার্ডবয় সহ স্বাস্থ্য বিভাগের কেউই এগিয়ে আসেননি ।


নগরীর ১৩ নং সিমেট্রি রোডে এলাকার বাসিন্দা শেখ লুৎফুন নাহার পলাশী। তিনি সরকারি এনিমি প্রোপার্টির একটি বাড়ির দ্বিতীয় তলায় বাৎসরিক ভাড়া বাসায় বাবা-মাকে নিয়ে বসবাস করতেন । পলাশীর পিতা শেখ সাঈদ আলী একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা । তিনি স্বাধীন বাংলা বেতারের কণ্ঠ যোদ্ধা ও নিয়মিত পল্লীগীতি শিল্পী ছিলেন। ১৯৭৫ সালে ১০ অক্টবর খুলনায় বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক পরিষদ প্রতিষ্ঠিত করে ছিলেন সাঈদ আলী। তার মাতা বেগম আলেয়া সাঈদ খুলনা মহানগর মহিলা আওয়ামীলীগের প্রচার সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন। ২০১৬ সালের ৭ নভেম্বর ব্রেইন স্ট্রোকে মারা যায় পলাশীর পিতা। এর পর থেকে ভুমিহীন এই পরিবারটি অসহায় হয়ে পড়ে । পরিবারে দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে পলাশী মেজো। তিনি এলজিইডির একটা প্রজেক্টে দীর্ঘ কয়েক বছর চাকুরী করেন। ২০১০ সালে সুপ্রিম কোর্টের রায় পাওয়া সত্বেও এখনো চাকুরী আত্মিকরনের তালিকায় নাম ওঠেনি পলাশীর । দুই ভাই গান বাজনা করে এ সংসার চালায়। শেখ লুৎফুন নাহার পলাশীর গ্রামের বাড়ী গোপালগঞ্জ জেলার জালালাবাদ ইউনিয়নের ছোটফা গ্রামে। খুলনা সরকারি সুন্দরবন আদশর্ কলেজ ছাত্র সংসদের ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে ছাত্রলীগের প্যানেলে মহিলা সম্পাদিকা পদে বিজয় হন পলাশী। পরে তিনি ১৯৯৮ সালে খুলনা জেলা ছাত্রলীগ মহিলা সম্পাদিকা পদে দায়িত্ব পান । বর্তমানে শেখ লুৎফুন নাহার পলাশী বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক পরিষদের (বসাপ) খুলনার ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করছেন । এ ছাড়া খুলনা শিশু হাসপাতাল,বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি ও খুলনা উমেশচন্দ্র

পলাশীর অসুস্থ্য মা
পলাশীর অসুস্থ্য মা

পাবলিক লাইব্রেরী সহ বেশ কিছু সেবা মুলক প্রতিষ্ঠানে জড়িত রয়েছেন তিনি । হঠাৎ করে গত ৬ আগষ্ট শেখ লুৎফুন নাহার পলাশীর মাতা বেগম আলেয়া সাঈদ এর করোনা উপসর্গ দেখা দেয় । এর পর পর একই উপসর্গ দেখা দেয় পলাশীর। মা ও মেয়ে দু”জনেই গত ৯ আগষ্ট ভর্তি হয় খুলনা নূরনগরস্থ করোনা হাসপাতালে (ডায়াবেটিক হাসপাতাল )। সেখনে আইসিইউ রুমের পাশেই চিকিৎসা চলতে থাকে তাদের । এ ভাবে কেটে যায় বেশ কয়েক দিন । করোনা রুগী হয়ে নিজের জীবনের কথা না ভেবে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের কথা মনে পড়ে পলাশীর । প্রতিবছর যে ভাবে জাতিয় শোক দিবস পালন করে, এবার হয়তো সেটা করতে পারবেনা মনের মধ্যে এমন প্রশ্ন জাগে বার বার। মৃত্যুর মুকোমুখি হয়েও নিজের চিন্তা না করে হাসপাতলেই জাতির জনক সহ তার পরিবারের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর সিদ্ধান্ত নেয় পলাশী। জাতীয় শোক দিবস করোনা হাসপাতালে পালনের জন্য কর্তৃপক্ষে কাছ থেকে অনুমতিও নেন তিনি । অসুস্থ্য অবস্থায় হাসপাতালের নীচে বাগান থেকে ফুল ছিড়ে নিয়ে আসেন । এরপর সংগ্রহ করেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি ছাপা একটি সমকাল পত্রিকার বিশেষ সংখ্যা । ১৪ আগষ্ট দিন শেষে রাত সাড়ে ১১টায় হাসপাতালে একটি প্লাষ্টিকের টুলের উপর বঙ্গবন্ধুর ছবিটি রেখে ফুল আর মোমবাতি নিয়ে প্রস্তুত থাকে জাতির পিতাকে বিনম্র শ্রদ্ধা জানাতে। ঘড়ির কাঁটায় যখন রাত ১২টা এক মিনিট, ঠিক তখনই মোমবাতি প্রজ্বলন করে বঙ্গবন্ধু সহ তার পরিবারের সকলকে গভীর ভাবে স্মরন করেন তিনি ।

এ ব্যাপারে মুঠোফনে শেখ লুৎফুন নাহার পলাশী বলেন, জীবনে ভাবতে পারিনি এমন ভাবে জাতিয় শোক দিবস পালন করবো। আমরা সব সময় ব্যাক্তিগত ভাবে ও সংগঠনের ব্যানারে ১৫ আগস্ট পালন করে থাকি। একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসাবে মনে করেছি যে, যত অসুস্থ থাকি না কেন জাতীয শোক দিবস পালন করা দরকার। তিনি বলেন, এই দিনে যদি বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের প্রতি শ্রদ্ধা না জানাই তাহলে এই দেশকে অস্বীকার করা হবে। শহীদের আত্মা কষ্ট পাবে। তাবে নিজের জীবনের কথা চিন্তা না করে বাঙ্গালীর শ্রেষ্ঠ সন্তানের কথা চিন্তা করেছি । পলাশী আরো বলেন, আমি যখন এই উদ্দোগ গ্রহন করেছি হাসপাতালে কেউ আমাকে সহযোগীতা করেনি। এমন কি শোক দিবস পালন করার সময় হাসপতালের ডাক্তার, নার্স, ওয়ার্ডবয় সহ স্বাস্থ্য বিভাগের কেউই এগিয়ে আসেননি । কান্না জড়িত কন্ঠে পলাশী বলেন, আমার মা মাতা বেগম আলেয়া সাঈদ খুলনা মহানগর মহিলা আওয়ামীলীগের প্রচার সম্পাদক । তিনি এখন হাসপাতালে মুত্যু শয্যায় । এ পর্যন্ত দলীয় ভাবে কেউই কোন খোজ খবর নেননি। এমনি কি মোবাইলেও কেউ খোজ রাখেনি। কে শুনবে এই কষ্টের কথা ?