একজন মানবিক ডাক্তার মুন্সী মো.রেজা সেকেন্দার

355

আবু হামজা বাঁধন (ডেক্স রিপোর্ট)
যখন যে দায়িত্ব পেয়েছেন, নিষ্ঠার সাথে পালন করে আসছেন। দীর্ঘ চাকরি জীবনে এক ফোঁটা অনিয়মের দাগ লাগতে দেয়নি। হাসপাতালে পরিচ্ছন্নতা কর্মী নেই। নোংরা স্যাঁতস্যাঁতে হাসপাতালকে পরিচ্ছন্ন রাখতে প্রতিমাসে নিজের বেতন থেকে টাকা দিয়ে সাময়িক পরিচ্ছন্নতা কর্মী নিয়োগ দিয়েছিলেন। যদিও সেই হাসপাতাল থেকে অনেক আগেই চলে এসেছেন নতুন কর্মস্থল খুমেক হাসপাতালে। তারপরেও এখনও পর্যন্ত নিজের বেতনের টাকা থেকে সেই পরিচ্ছনতা কর্মীর পারিশ্রমিক বা বেতন দিয়ে আসছেন । এছাড়া বর্তমান কর্মস্থলে যোগদানের পর থেকে প্রায় প্রতিদিনই গভীর রাত পর্যন্ত হাসপাতালের প্রতিটি ওয়ার্ড ঘুরে ঘুরে সার্বিক বিষয় নিজেই তদরকি করে যাচ্ছেন। তিনি আর কেউ নন। তিনি হলেন খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ মুন্সী মোহাম্মদ রেজা সেকেন্দার। সদ্য যোগদানকৃত এ পরিচালক শুধু খুলনা শহর নয়। সারা বাংলাদেশে একজন মানবিক ডাক্তার হিসেবে পরিচিত।

বাংলাদেশের প্রথম জনবান্ধব সিজে মডেল হাসপাতালের অন্যতম দুই রূপকার ডাঃ ইমদাদুল হক ও ডাঃ মুন্সী মোহাম্মদ রেজা সেকেন্দার। সারা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন এই দুই চিকিৎসক। চৌগাছা মডেল হেলথ্ কমপ্লেক্সের রুপকার ডাঃ ইমদাদুল হক ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে যোগদান করে তাঁর অন্যতম সহযোদ্ধা ডাঃ মুন্সী মোহাম্মদ রেজা সেকেন্দারকে সাথে নিয়ে নেমে পড়েন এ সদর হাসপাতালটিকে চৌগাছার মত মডেল করার লক্ষ্যে। সকল অপশক্তি ও দূর্নীতি ভেঙ্গে দিয়ে অবশেষে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালকে মডেল হাসপাতালে রুপান্তরিত করতে সক্ষম হন। এছাড়া ডাঃ রেজা সেকেন্দার ঝিনাইদহ ম্যাটস-এর অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। অধ্যক্ষের দায়িত্বে থাকাকালীন ঝিনাইদহ ম্যাটস-এর হোস্টেলের অবকাঠামগত উন্নয়ন করেন। এছাড়া মেয়েদের জন্য হোস্টেলের ব্যবস্থা করেন। ওই সময় শিক্ষক ছিলেন মাত্র ২ জন। রেজা সেকেন্দারের ঐক্যান্তিক প্রচেস্টায় আরো ৭ জন শিক্ষককে এটেচমেন্ট হিসেবে ম্যাটসে আনেন। এছাড়াও তাঁর উদ্যেগে ঝিনাইদহ ম্যাটসে একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়। এখনও ঝিনাইদহ ম্যাটস এর শিক্ষক ও সাবেক ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের প্রিয় স্যার ডাঃ মুন্সী মোহাম্মদ রেজা সেকেন্দারের অবদানের কথা কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করেন। ডাঃ রেজা সেকেন্দার শুধু ঝিনাইদহ ম্যাটস নয়, কুষ্টিয়াতে অল্প কয়েকদিন দায়িত্ব গ্রহণ করেও কুষ্টিয়া ম্যাটস-এর চেহারার পরিবর্তন করেন। রেজা সেকান্দার এ প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার সাথে সাথে পুরো ক্যাম্পাসকে সিসি ক্যামেরা নিয়ন্ত্রনে আনেন। ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়ার মানোন্নয়নে বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। যেমন, শিক্ষকদের লেকচার মনিটরিং করতেন, এছাড়া কোর্স কো-অর্ডিনেটর নিয়োগ দেন। ডিজিটাল হাজিরা পদ্ধতি সহ বেশ কিছু অবকাঠামগত উন্নয়ন ডাঃ রেজা সেকান্দারের প্রচেষ্টায় সম্ভব হয়। অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীদের উৎসাহ প্রদানের জন্য প্রতিবছরই শ্রেষ্ঠ শিক্ষক এ্যাওয়ার্ড প্রদান প্রথা শুরু করেন এবং শিক্ষার্থীদের রেজাল্ট ও উপস্থিতির উপর পুরস্কৃত করতেন । ফলে কুষ্টিয়া ম্যাটস কয়েকদিনের মধ্যে জরা-জীর্ণতা কাটিয়ে উঠে একটি আধুনিক ক্যাম্পাসে পরিনিত হয় ডাঃ মুন্সী মোঃ রেজা সেকান্দারের হাতের ছোঁয়াই। এক কথা বলা যায়, যখন যেখানে এই মানবিক ডাক্তার রেজা সেকেন্দার দায়িত্ব নিয়েছেন। সেই প্রতিষ্ঠানকে এক অদ্ভুত পরিবর্তনের মধ্যে নিয়ে আসেন।

 
এবার আসা যাক খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক হিসেবে ডাঃ মুন্সী মোহাম্মদ রেজা সেকেন্দার কতটুকু সফল! যদিও মাত্র ৫ মাস হলো খুমেক হাসপাতালের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। তিনি কাকডাকা ভোর থেকে শুরু করে মধ্য রাত পর্যন্ত হাসপাতালের প্রতিটি কর্ণার ঘুরে নিজে দাঁড়িয়ে থেকে সব কিছুর তদরকি করেন। ইতিমধ্যে খুমেক হাসপাতালটিকে একটি মডেল হাসপাতালে রুপ দিতে কার্যক্রম শুরু করেছেন। গত ২সেপ্টেম্বর থেকে ডাঃ রেজা সেকন্দার ও তার দীর্ঘ দিনের সহকর্মী ডাঃ ইমদাদুল হককে সাথে নিয়ে হাসপাতালটিকে মডেল হাসপাতালে পরিনিত করতে বিভিন্ন বাস্তবমূখী পদক্ষেপ নিয়েছেন। এছাড়াও খুমেক হাসপাতালের দালালের দৌরাত্ম্য রোধে কঠোর ভূমিকা পালন করছেন সদ্য দায়িত্বে আসা এ পরিচালক। পাশাপাশি হাসপাতালের সেবার মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে হাসপাতাল পরিচালনা কমিটি, ডাক্তার, নার্স সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ সাংবাদিকদের সাথে একাধিকবার মতবিনিময় সভা করেছেন। সম্প্রতি খুমেক হাসপাতাল নিয়ে যে কয়েকটি অভিযোগের তীর ছোড়া হয়েছিল । সেই সকল অভিযোগ ভিত্তিহীন প্রমাণিত করে পুরো খুমেক হাসপাতালকে নতুনভাবে ঢেলে সাজিয়েছেন।
হাসপাতাল সূত্রে জানাযায়, খুমেক হাসপাতালকে মডেল হাসপাতালে রুপ দিতে স্বল্প লজিস্টিক সাপোট নিয়ে কাজ শুরু করেছেন চিকিৎসকরা। এছাড়া খুলনা সিটি মেয়র, স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসক সহ সকলের সহযোগিতা ও সমার্থন পেয়েছেন খুমেক হাসপাতালকে মডেল করার জন্য।

কথা হয় সিজে মডেল এর রূপকার ডাঃ ইমদাদুল হকের সাথে। তিনি জানান, আমি যখন ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট হিসেবে ছিলাম, তখন ডাঃ রেজা সেকেন্দার তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। এক কথায় ডাঃ রেজা অসাধারন একজন মানুষ। তিনি কখনও কোন অন্যায়ের সাথে আপোষ করেনি। তিনি হেল্পফুল থাকার কারণেই ঝিনাইদহ সদরকে মডেল হাসপাতাল হিসেবে রূপান্তরিত করা সম্ভব হয়েছে। ডাঃ ইমদাদুল হক আরো বলেন, চৌগাছা ও ঝিনাইদহ’র পর খুমেক হাসপাতাল মডেল রূপ দিতে ডাঃ রেজা সেকেন্দার বদ্ধপরিকর। আশাকরি আমাদের সকলের সমন্বয়ে খুমেক হাসপাতালও অচীরেই মডেল হাসপাতালে রূপ নিবে।

ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার আয়ুব আলী বলেন, ডাঃ রেজা সেকেন্দার কাজের ব্যাপারে খুবই সিনসিয়ার। এছাড়া তিনি প্রশাসনিক দৃষ্টিতে খুবই কঠোর। দীর্ঘদিনেও তাঁর বিরুদ্ধে কোন অনিয়মের চিত্র দেখি নাই।
ডাঃ অশোক কুমার সাহা মুঠোফোনে এ প্রতিবেদককে বলেন, খুমেক হাসপাতালের বর্তমান পরিচালক রেজা সেকেন্দার শুধুমাত্র ঝিনাইদহ মডেল সদর হাসপাতালের রূপকার নন, বরং তিনি ছিলেন কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ ম্যাটস-এর উন্নয়নের রূপকার। তার নেতৃত্বে শৈলকূপা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সও আমূল পরিবর্তনে আসে।

খুমেক হাসপাতালের আরএমও ডাঃ মিজানুর রহমান জানান, বর্তমান পরিচালক ডাঃ রেজা সেকেন্দার স্যার যোগদানের পর থেকে আমরা সকলেই স্বপ্ন দেখছি খুমেক হাসপাতাল একটি মডেল হাসপাতাল হবে। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য আমরা সকলে পরিচালক স্যারের সারথী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছি। পরিচালক স্যার নিঃসন্দেহে একজন ভাল মানুষ। আশা করি খুব শ্রীঘই তার হাত ধরে আমরা একটি নতুন রুপে খুমেক হাসপাতাল পেতে যাচ্ছি।

কথা হয় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাপাতালের পরিচালক ডাঃ মুন্সী মোহাম্মদ রেজা সেকেন্দারের সাথে। তিনি বলেন, কাজ করতে গেলে সমালোচনা বা আলোচনা হবে। তবে সব কিছু উপেক্ষা করে ভাল কাজ করে যেতে হবে। ক্ষমতার চেয়ার একদিন হয়তো থাকবে না। তবে আমার ভাল কাজগুলো আজীবন বেঁচে থাকবে। এখন শুধু একটাই আশা যেন, খুমেক হাসপাতালকে মডেল হিসেবে গড়ে তুলতে পারি। এ জন্য কেসিসি মেয়র, স্থানীয় সাংসদ, খুলনা বিভাগীয় কমিশনার, বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক, জেলা প্রশাসক, পুলিশ প্রশাসন, সিভিল সার্জন, স্বাচিপ নেতৃবৃন্দ সহ প্রতিটি ডাক্তার, নার্সদের ঐক্যান্তিক সহযোগিতা প্রয়োজন। এছাড়া গণমাধ্যমকর্মীদেরও সহযোগিতা প্রয়োজন ।

স্থানীয়রা মত প্রকাশ করে বলেন, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্বিক উন্নয়নে সৎ ও কর্মতৎপর পরিচালক রেজা সেকান্দারের বিকল্প নেই । তাই খুমেক হাসপাতালের এই পরিচালককে হাসপাতালের উন্নয়নের স্বার্থে যে কোন ধরনের সহযোগিতা করতে আমরা খুলনাবাসি পাশে থাকব।

উল্লেখ্য, ডাঃ মুন্সী রেজা সেকেন্দার ১৯৮৫ সালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করার পর সরকারি চাকুরিতে যোগদান করেন। চাকুরি জীবনে ঝিনাইদহসহ বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সএ মেডিকেল অফিসার, শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক, খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের দপ্তরের উপ-পরিচালক, কুষ্টিয়া ম্যাটস-এর অধ্যক্ষ এবং সর্বশেষ ঝিনাইদহ সরকারি মেডিকেল এসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুলের অধ্যক্ষ হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।