বটিয়াঘাটা জলমা ইউনিয়ন ভূমি অফিসে দেধারছে চলছে ঘুষ বানিজ্য (অনুসন্ধানী ০১)

1205

আবু হামজা বাঁধন, ডেক্স রিপোর্ট।।

খুলনা শহর  থেকে প্রায় ১১ কিলোমিটার অদূরে বটিয়াঘাটার জলমা ইউনিয়ন ভূমি অফিস। এ ভূমি অফিসের অধীনে ৩৫ টি মৌজা রয়েছে। ফলে প্রতিদিনই শত শত সেবা প্রত্যাশীদের জমির খাজনা দিতে আসতে হয় ।

কাক ডাকা ভোর থেকে বিকাল পর্যন্ত লাইনে দাঁড়িয়ে অনেক সময় খাজনা জমা না দিয়ে বাড়ি ফিরতে হয় অনেকের। তবে দোয়া তদবির জানা থাকলে খাজনা দিতে কোন ভোগান্তি পোহাতে হয় না। সেই দোয়া তদবির হলো হাজার টাকার নোট। যার ঘুষের পরিমান যত বেশি । তার কাজ ততই দ্রুত হবে। এমন মন্তব্য করেছেন বটিয়াঘাটার আলাইপুর  থেকে আগত শামীমা নাসরিন। তিনি অভিযোগ করে আরো বলেন, কোন নিয়ম শৃংখলা এ ভূমি অফিসে নাই। যার ক্ষমতা রয়েছে , সে সরাসরি নায়েবের রুমে ঢুকে কাজ সমাধান করে চলে যায়। আর আমরা লম্বা লাইনে সময়ের প্রহর গুনতে থাকি। শুধু শামিমা নয় বরং আগত শত শত ব্যক্তিদের অভিযোগের সীমা নেই। কারর অভিযোগ নায়েবের বিরুদ্ধে, কারর অভিযোগ দায়িত্বরত অফিস সহায়কদের বিরুদ্ধে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখাযায়, মানদাতা আমলের ভবন নয় বরং আধুনিক নব নির্মিত ভবনে জলমা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এছাড়া পুরো অফিস ঘিরে রয়েছে ৮টি সিসি ক্যামেরা। তবে রেকর্ড রুমের সিসি ক্যামেরা সব সময় থাকে বিচ্ছিন্ন। ফলে রহস্যের কড়া নাড়ে আমাদের অনুসন্ধানী মনের দরজায়। কিছুক্ষন অপেক্ষা করার পর  রেকর্ড রুমের সিসি ক্যামেরা বন্ধের কারণ  ধরা পড়ে। মূলত রেকর্ড রুমের অভ্যান্তরে ঘুষ বানিজ্য চলে। ফলে সিসি ক্যামেরায় যাতে ঘুষ লেনদেনর ভিডিও ধারণ না হয়, সেজন্য বেশিরভাগ সময় এ রুমের ক্যামেরার সংযোগ বিচ্ছিন্ন রাখা হয়। এখানেই শেষ নয়, এই রেকর্ড রুমেই গত ২১ ডিসেম্বর বেলা ১১টা ৫১ মিনিটে অফিস সহকারি বিজন এক সেবা প্রত্যশীকে দ্রুত খাজনার কাজ শেষ করিয়ে দেওয়ার কথা বলে ১হাজার টাকা ঘুষ নেয়। বিষয়টি নিয়ে নায়েব কৃষ্ণপদ দাশ কে অবহিত করা হলে তিনি তার অফিস অভ্যান্তরে ঘুষ লেনদেনের বিষয়টি মানতে নারাজ । তবে এ প্রতিবেদকের ক্যামেরায়  ওই ঘুষ গ্রহনের দৃশ্য দেখালে নায়েব কৃষ্ণপদ দাশের কপালে চিন্তার রেখা ভেসে উঠে। নায়েব ঘুষের ভিডিও ধারন  দেখে অফিস সহায়ক বিজনকে তলব করলে বিজন অকপটে সব স্বীকার করেন। তবে তিনি ঘুষ নয়, বরং মিষ্টি খেতে টাকা নিয়েছেন বলে জানান। অর্থাৎ অফিস সহায়ক বিজন ঘুষ খান না বরং মিষ্টি খেতে যে যা দেয়, তা হাত পেতে নেন । এতো গেলো অফিস সহায়ক বিজনের ঘুষ লেনদেনের চিত্র।

এবার আসা যাক নায়েব কৃষ্ণপদ দাশের অনিয়মের সুরতহাল রিপোর্টে । বেলা ১১ টা গড়িয়ে গেলে তিনি (কৃষ্ণপদ দাশ)  অফিসে প্রবেশ করেন। অফিসের অভ্যান্তরে কোন লেনদেনের বিষয় আলোচনা করেন না। যদি কোন সুবিধার বিষয় থাকে তবে সে আলোচনা অফিসের অভ্যান্তরে নয়, বরং খুলনার গল্লামারী সন্ধ্যার পর দেখা করার কথা জানিয়ে দেন অফিস সহায়কদের মাধ্যমে। সাংবাদিকরা একের পর অনিয়মের বিষয় প্রশ্ন করলে কৌশলে এরিয়ে যেতে খুবই চৌকস এই নায়েব। খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায়, অফিস সহায়ক বিজন হলেন নায়েব কৃষ্ণপদ দাশের একান্ত কাছের লোক। তারই মাধ্যমে বিভিন্ন কেসের আলোচনা করা হয়।

ঘটনার নেপথ্যে থেকে যায় না-জানা আরো অনেক তথ্য। বটিয়াঘাটার জলমা ভূমি অফিসের সামনেই দালালচক্রদের দেখা মেলে। আর সরাসরি এদের পৃষ্ঠপোষকতা করেন স্বয়ং এ ইউনিয়ন ভূমি অফিসের নায়েব কৃষ্ণপদ দাশ এমন তথ্য জানান স্থানীয়রা।

https://youtu.be/SzrzcZMG5vk

কথা হয় বটিয়াঘাটা উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার ভূমি মো. রাশেদুজ্জামানের সাথে। তিনি জানান, ঘুষ লেনদেনের ভিডিওটি জমা দিলে এবং তদন্ত সাপেক্ষে সকল আনিত অভিযোগ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ইতিমধ্যে খুলনার কয়েকটি ইউনিয়ন ভূমি অফিসের অনিয়মের বিষয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে বিধিমোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহন প্রক্রিয়াতে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলে অনিয়মের দৃশ্য অনেকটা কমে যাবে বলে সচেতন মহল মনে করেন।

আগামী প্রতিবেদনে জলমা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কতিপয় অফিস সহায়ক ও দালালদের  দৌরাত্মের ফিরিস্তি তুলে ধরা হবে।  (চলবে)