খুলনায় প্রথম ধাপে করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক ১৬ হাজার ৮শ টিকা আসছে

55

“সংরক্ষণে ৩০টি হিমায়িত বাক্স ও ১৭টি টিকাদান কেন্দ্র প্রস্তুত, খুলনায় প্রথম ধাপে ১৬ হাজার টিকা আসছে কাল”

বিশেষ প্রতিনিধি :

আগামীকাল রবিবার খুলনায় প্রথম ধাপে করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক ১৬ হাজার ৮শ টিকা আসছে । এতে ১ লাখ ৬৮ হাজার ডোজ রয়েছে, যা ৯৭ হাজার ২শ ৩০ জন মানুষকে দেয়া সম্ভব হবে। টিকা সংরক্ষণে ৩০টি হিমায়িত বাক্স, ১৭টি টিকাদান কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। টিকা দেওয়ার জন্য ১৩২ জনকে প্রশিক্ষণের হয়েছে। প্রতিটি টিকাদানকারী টিমে দুই জন টিকা প্রয়োগকারী ও চার জন স্বেচ্ছাসেবী থাকবে। টিকাদান কর্মসূচির কার্যক্রম পরিচালনায় জেলা, সিটি করপোরেশন ও উপজেলা পর্যায়ে পৃথক কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ৭ জানুয়ারী থেকে টিকা দেয়া শুরু হবে । এদিকে টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ভীতি দূর করতে ও সাধারন মানুষের আতংক কাটাতে খুলনায় প্রথম টিকা নিতে চান সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার ( রোগ নিয়ন্ত্রন ) ডাঃ শেখ সাদিয়া মনোয়ারা ঊষা। স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, প্রথম ধাপে করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক ১৬ হাজার ৮শ টিকা রবিবার দুপুর ১টার মধ্যে খুলনায় পৌছাবে। নগরীর স্কুল হেলথ ক্লিনিকে টিকা বুঝে নিবেন সিভিল সার্জন ডাঃ নিয়াজ মোহাম্মদ। টিকা সংরক্ষণে ৩০টি হিমায়িত বাক্সের মধ্যে সংরক্ষণের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এর মধ্যে স্কুল হেলথ ক্লিনিকে ১৩টি ও ৯টি উপজেলায় ১৭টি আইএলআরে টিকা সংরক্ষণে থাকবে। প্রতিটিতে ৭ হাজার করে ভ্যাকসিন (টিকা) রাখা যাবে। নগরের টিকাদান কর্মসূচির কার্যক্রম পরিচালনা করবে খুলনা সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগ। এ কার্যক্রম বাস্তবায়নে সিটি করপোরেশনের মেয়রকে সভাপতি ও একই সংস্থার চিফ মেডিক্যাল অফিসারকে সদস্য সচিব করে ১৩ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানকে উপদেষ্টা, সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) সভাপতি ও উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তাকে সদস্য সচিব করে কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন সহকারী কমিশনার (ভূমি), থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), পৌরসভার মেয়র (পৌরসভা থাকলে), উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা, আইসিটি অধিদফতরের সহকারী প্রোগ্রামার, দু’জন গণ্যমান্য ব্যক্তি (উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনোনীত), স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে কাজ করে এমন দুটি এনজিও’র প্রতিনিধি (উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনোনীত)। খুলনা সিভিল সার্জন নিয়াজ মোহাম্মদ জানান, খুলনায় করোনা ভাইরাসের টিকা সংরক্ষণ, কেন্দ্র নির্ধারণ, কর্মীদের প্রশিক্ষণসহ কর্মসূচি বাস্তবায়নে সব ধরনের প্রস্তুতি প্রায় শেষের দিকে। টিকাগুলো আগামী রবিবার দুপুরে খুলনায় পৌঁছাবে । আগামী ৭ ফেব্রæয়ারী থেকে টিকা দেয়া শুরু হবে। তিনি বলেন,টিকা গ্রহন করতে সিভিল সার্জনকে সভাপতি করে ৬ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। ডাঃ নিয়াজ মোহাম্মদ বলেন, টিকা নেয়ার জন্য অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। রেজিস্ট্রেশন অনুযায়ী একটি কার্ডের নমুনা স্ব স্ব ব্যাক্তির মোবাইলে ম্যাসেজের মাধ্যমে চলে যাবে । সেটা প্রিন্ট করে নিয়ে গেলেই টিকা নিতে পারবে । তিনি আরো বলেন, প্রথমধাবে খুলনা মহানগরীর সদর হাসপাতাল, খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, বক্ষব্যাধি হাসপাতাল, পুলিশ হাসপাতাল, রেলওয়ে হাসপাতাল, বিজিবি হাসপাতাল, তালতলা হাসপাতাল ও লাল হাসপাতালে করোনার টিকা দেওয়া হবে। আর উপজেলা পর্যায়ে স্ব স্ব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এ টিকা দেওয়া হবে। প্রথম ধাবে টিকা নেয়ার পর ৮ সপ্তাহ পরে আবার ২য় ধাপে তাদের টিকা নিতে হবে বলেও জানান সিভিল সার্জন ডাঃ নিয়াজ মোহাম্মদ । সিভিল সার্জন কার্যলয়ের মেডিকেল অফিসার ( রোগ নিয়ন্ত্রন ) ডাঃ শেখ সাদিয়া মনোয়ারা ঊষা জানান, প্রথম ধাপের টিকা প্রদান করার জন্য সিভিল সার্জনের নির্দেশে খুলনা জেলায় ৯৭ হাজার ২৩০ জন সম্মুখ সারির জনগোষ্ঠীর চাহিদা পাঠানো হয়েছে। ডাঃ ঊষা বলেন. ‘টিকা দেওয়ার পর টিকার স্থান এই টিকা দুই ডোজে নিতে হবে, ৪ থেকে ১২ সপ্তাহের ব্যবধানে। টিকা দেওয়ার পর কারও কারও মধ্যে মৃদু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। টিকা দেওয়ার স্থানে ব্যথা, সামান্য ফুলে যাওয়া, শরীর ম্যাজম্যাজ, কাঁপুনি, জ্বর জ্বর ভাব, ফ্লুতে আক্রান্ত হওয়ার মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে, যা স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। করোনার টিকা দেওয়ার পর যথেষ্ট রোগ প্রতিরোধক্ষমতা গড়ে উঠতে খানিকটা সময় লাগতে পারে। তাই টিকা দেওয়ার পরও করোনা প্রতিরোধে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলা উচিৎ বলে মনে করেন সিভিল সার্জন অফিসের এই মেডিকেল অফিসার। যে কোন উপসর্গ দেখা দিলেই স্বাস্থ্য বিভাগের মেডিকেল টিমের সাথে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ জানান তিনি।ডাঃ শেখ সাদিয়া মনোয়ারা ঊষা আরো বলেন, টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ভীতি দূর করতে ও সাধারন মানুষের আতংক কাটাতে খুলনায় প্রথম টিকা নিতে চান তিনি । একজন চিকিৎসককে টিকা নিতে দেখে সাধারন মানুষের মধ্যে অনেকটা ভীতি দূর হবে বলেও জানান এই মেডিকেল অফিসার । তবে প্রথম টিকা দেয়ার ব্যাপারে এখনও পর্যন্ত চূড়ান্ত করতে পারেনি স্বাস্থ্য বিভাগ । উল্লেখ্য ,করোনাভাইরাস প্রতিরোধে প্রথম ধাপে খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় ৪৯ কার্টুনে ৫ লাখ ৮৮ হাজার ডোজ টিকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ।