আসুন বাংলায় গর্ব করি, বাংলিশে নয়

56

আরিফুর রহমান সেতু, সিনিয়র ষ্টাফ রিপোর্টার

আজকের এই দিনে ১৯৫২ সালে পাকিস্তানি  সামরিক জান্তার বুলেটে প্রান দিয়েছিল শুধু নিজের ভাষায় মনের ভাব প্রকাশ করবে বলে। ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনের আমগাছ প্রাঙ্গনে ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে মিছিল বেরিয়েছিল ‘মা’ বলে ডাকার জন্য, নিজের ভাষায় কথা বলার জন্য। কিন্তু আজ ৬৯ বছর পর কি আদৌ পেরেছি আমাদের বাংলা ভাষার অবজ্ঞা থেকে মুক্তি পেতে?  হয়ত বা না!!! তখন পাকিস্তানিরা আমাদের মুখের ভাষা কেড়ে নিতে চেয়েছিল কিন্তু আজ আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মরাই এই সুমধুর ভাষাকে অবজ্ঞা করছে।  কিন্তু কেন এই অবজ্ঞা, বছরে শুধু ২১ শে ফেব্রুয়ারী আসলেই আমরা বাংলার প্রতি দুর্বল হই বাকি ৩৬৪ দিন আমরা বাংলাকে মুর্খ এবং নিম্নবর্গের ভাষা বলে আক্ষায়িত করি কিন্তু কেন?

বড় দুঃখ হয় যখন একুশের ফেব্রুয়ারীর অনুষ্ঠানে তাহেরী সাহেবের কন্ঠের বিকৃত ডিজে মিক্স গান লাউডে বাজে অথবা কোন হিন্দী গান।  বর্তমান প্রজন্ম তো আরো একটু বেশী অগ্রগামী, কথার মাঝে একটু ইংরেজি না হলে তাদের চলেই না, সেটা হোক কোন ভালো শব্দ অথবা খারাপ।
এখনকার সমাজে খাঁটি বাংলা ভাষায় কেউ কথা বললে তাকে সেকেলে বা ক্ষ্যাত বলা হয়। তাই ছেলে বুড়ো সবাই এখন আধুনিক মানে স্মার্ট হতে চায়। ‘আধুনিক’ শব্দটা হয়ত অনেকে বুঝবেন না কিন্তু ‘স্মার্ট’ শব্দটা ঠিকই বুঝবেন। বিশের দশকে অনেকে ‘দুঃখিত’ শব্দটি ব্যবহার করলেও এখন সবাই ‘সরি’ বলে।  ঠিক একই ভাবে ‘প্রাতঃরাশ’ এখন ‘ব্রেকফাস্ট’, ‘দুপুরের খাবার’ এখন ‘লাঞ্চ’ এমন বহু শব্দ বাংলা হয়ে যাচ্ছে। আমরা যতই সামনে উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলার চেষ্টা করছি ততই যেন নিজেদের ভাষাকে হারিয়ে ফেলছি।  প্রতিনিয়তই কোন না কোন শব্দ আমাদের বাংলা ভাষা থেকে বিলুপ্তির কাতারে সামিল হচ্ছে। নিজেদের ভাষাকে অবজ্ঞা করে কি আমরা বিশ্ব দরবারে উন্নত হতে পারব ?
উদাহরণ হিসেবে চীন, জাপান, দক্ষিন কোরিয়া এই দেশগুলোকে একটু দেখুন। জাপান এর কথা যদি বলা হয় তাহলে সবাই বলবে এরা বিশ্বের অন্যতম ভদ্র জাতি। তার পেছনের কারন প্রথমত এদের মাতৃভাষা ও সংস্কৃতির উপর সম্মান ও বিশ্বাস। সেখান থেকেই ঐক্যবদ্ধ হয়ে তারা আজ বিশ্বের অন্যতম একটি ভদ্র ও উন্নত রাষ্ট্র । তেমনি ইতিহাস রয়েছে চীন এবং দক্ষিন কোরিয়ার ক্ষেত্রেও। আমরাও এগিয়ে যাচ্ছি দিন দিন কিন্তু স্মার্ট হয়ে আমরা আমাদের ঐতিহ্য আর গর্বের ভাষাকে হারিয়ে ফেলছি না তো?
আজকাল সরকারি-বেসরকারী যে কোন অফিসে গেলে ইংরেজিতে দুই চারটা শব্দ না বললে সকলে ভাবে লোকটা মনে হয় শিক্ষিত না অথবা নিম্নশ্রেনীর মানে লোয়ার ক্লাসের।আঞ্চলিকতা দূরে থাক কথায় খাঁটি বাংলা থাকলেও অনেকে অবজ্ঞা করে বা অনেক কর্মকর্তারা সহযোগিতা করে না। অনেক শিক্ষকদের মাঝেও এই প্রবণতা দেখা যায় আবার যখন দুই চারটা ইংরেজী বলা হয় তখন আবার চেয়ারটা একটু নড়িয়ে চড়িয়ে বসে। যখন এই অবস্থা দেখি তখন কষ্ট হয় এই ভেবে যে এই জন্যেই কি জীবন দিয়েছিল সালাম, রফিক,জব্বার সহ নাম না জানা শহীদেরা!!!
আমাদের কথায় বাংলা এবং ইংলিশের মিশ্রনে ঘি ঢেলে দিচ্ছে বেসরকারী এফ এম রেডিও স্টেশন গুলো। সেখানে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের রেডিও জকি  হিসেবে যারা আছেন তাদের কথা কিছুক্ষন শুনলেই বুঝতে পারবেন বাংলা কিভাবে বাংলিশ হচ্ছে। এর সাথে সোশ্যাল মিডিয়া তো আছেই সেখানেও বিকৃতি হচ্ছে বাংলা শব্দ।
তাই প্রকৃত ভাবে শহীদদের শ্রদ্ধা করতে হলে বাংলা ভাষাকে নিয়ে গর্ব করুন অবহেলা নয়,
শুদ্ধ ভাষার চর্চা করুন বিকৃতি নয়।