বাজারে নিত্যপণ্যের দাম চড়া, দর বাড়ছে একের পর এক পণ্যের

31

বাজারে বেশকিছু নিত্যপণ্যের দাম চড়া। দর বাড়ছে একের পর এক পণ্যের। এক সপ্তাহের ব্যবধানে চাল-আটা, ডাল, মুরগি, চিনি, সয়াবিন তেলের পর এবার আলুর দামও বেড়েছে। গত তিন-চার দিনে আলুর দাম বেড়েছে কেজিতে ৬ থেকে ১০ টাকা। এছাড়া বাড়া-কমার মধ্যে রয়েছে পিয়াজের দাম। এদিকে বেড়েছে ডিমের দাম। একইসঙ্গে শীতকালীন সবজি, মাছ, মাংসের বাজারেও স্বস্তি নেই। রাজধানীর কাওরান বাজার, হাতিরপুল বাজার, সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
এদিকে টিসিবির হিসেবে সপ্তাহের ব্যবধানে চাল, সয়াবিন তেল, রসুন, চিনি, আদা, দারুচিনি, আলু ও ডিমের দাম বেড়েছে।
সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর বাজারগুলোতে পিয়াজ আর মুরগির দাম কিছুটা কমেছে।

মুরগির দাম কেজিতে ৫ টাকা কমলেও বাজার এখনো চড়া। আর বেশিরভাগ সবজির দর বাড়তি। রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে ব্যবসায়ীরা পিয়াজের কেজি বিক্রি করছেন ৫০ থেকে ৬০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৬০ থেকে ৬৫ টাকা। কাওরান বাজারের ব্যবসায়ী মালেক বলেন, পূজার সময় ভারত থেকে পিয়াজ কম আসায় দাম বেড়ে গিয়েছিল। তবে দেশি ও আমদানি করা উভয় ধরনের পিয়াজ পর্যাপ্ত পরিমাণে আছে।
অন্যদিকে, ব্যবসায়ীরা ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি করছেন ১৮০ থেকে ১৮৫ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৮৫ থেকে ১৯০ টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে কমেছে ৫ টাকা। এক মাস আগেও এর দাম ছিল ১২০ টাকা। ব্রয়লার মুরগির দাম কমলেও পাকিস্তানি কক বা সোনালি মুরগি এবং লাল লেয়ার মুরগির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। সোনালি মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৩০ থেকে ৩৫০ টাকা। আর লাল লেয়ার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৩০ টাকা।
ব্রয়লার মুরগির দাম কমার বিষয়ে ব্যবসায়ী শহিদুল বলেন, মাঝে বাজারে ব্রয়লার মুরগির সরবরাহ কিছুটা কমে গিয়েছিল। এখন আবার বাড়ছে। গত সপ্তাহে ১১০ টাকা ডজনের ডিম কিনতে এখন ক্রেতাকে ১১৫ থেকে ১২০ টাকা গুনতে হচ্ছে। বিক্রেতারা বলছেন এই দাম আরও বাড়বে। ডিম ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর বলেন, প্রতিবছর এ সময় ডিমের দাম বাড়ে। এবারও সেই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। তাছাড়া মুরগির দাম বেশি হওয়ায় ডিমের চাহিদা কিছুটা বেড়েছে।
এদিকে এসব পণ্য কিনে একটু তেল দিয়ে যে রান্না করে খাবে, সেই উপায়ও নেই। কারণ ভোজ্য তেলের মধ্যে সয়াবিন তেলের দামই এখন ১৫০-১৫৫ টাকা লিটার, বছরের শুরুতে যার দাম ছিল ১১০ থেকে ১২০ টাকা লিটার। পাম তেলের দামও ইতিহাসের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। ১৪০ টাকা লিটারে বিক্রি হচ্ছে এই তেল। এ ছাড়াও দাম বেড়েছে সরিষা, রাইসব্রান, সূর্যমুখীর তেলের।
এদিকে হঠাৎ করে প্রতিকেজি আলু খুচরা বাজারে ২২ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৪ থেকে ৫ দিন আগেও দাম ছিল ১৬ থেকে ২০ টাকা। জানা গেছে, বাজারে হঠাৎ করে আলুর টান পড়েছে। ফলে পাইকারিতে দাম বাড়ার কারণে খুচরা বাজারে এর প্রভাব পড়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
কাওরান বাজারের একজন খুচরা বিক্রেতা বলেন, ৫ থেকে ৬ দিন ধরে বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে আলু। বাজারে আগের চেয়ে কম পরিমাণে আলু দিচ্ছেন পাইকার ও কোল্ডস্টোরেজের মালিকরা। কিন্তু ক্রেতার সংখ্যা তো কমেনি। এ কারণে দাম বাড়ছে আলুর।
চালের দামও বেড়েছে কিছুটা। টিসিবির তথ্য মতে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে মিনিকেট স্বর্ণা ও বিআর-২৮ জাতীয় চালের দাম প্রতি কেজিতে দুই টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। গত সপ্তাহে এই চালের দর ছিল ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা। নাজিরশাইলের কেজিতেও বেড়েছে দুই টাকা। গেল সপ্তাহে ৫৬ থেকে ৬৬ টাকা বিক্রি হলেও বিক্রেতারা এখন দাম রাখছেন ৫৮ থেকে ৬৮ টাকা। আর এক টাকা বেড়ে মিনিকেট চালের দর দাঁড়িয়েছে ৫০ থেকে ৫৬ টাকায়। আটার কেজি ৩৩ থেকে ৩৫ ও ময়দার কেজি ৪৮ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কিছুটা বাড়তি দেখা গেছে মসলা জাতীয় অন্যান্য পণ্যের দামেও। বাজারে প্রতি কেজি দেশি আদা ১০০ থেকে ১১০, আমদানি করা আদা ১৪০ থেকে ১৪৫, দেশি রসুন ৬০ থেকে ৭০ এবং ভারতীয় রসুন ১২০ থেকে ১২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি লাল চিনির দাম ৮০ টাকা। গেল মাসে এ চিনির দাম ছিল ৬৫ টাকা। আমদানি করা মোটা দানার ডালের প্রতি কেজির দাম ৯০ টাকা। গেল মাসেও এই ডালের দাম ছিল ৬০ টাকা।
বাজারে কিছু শীতকালীন সবজি এসেছে। তবে সেগুলোর দাম চড়া। এক কেজি শিমের দাম ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা, টমেটো ১০০ থেকে ১২০ টাকা এবং প্রতি পিস ফুলকপি ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। বাজারে মানভেদে এক কেজি গাজর ১০০ থেকে ১৬০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহের ব্যবধানে এ সবজি দুটির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। ঝিঙের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। ছোট ফুলকপি ও বাঁধাকপির পিস বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৫০ টাকা। মুলার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে এসব সবজির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
এছাড়া সপ্তাহের ব্যবধানে চিচিঙ্গা, বরবটি, ঢেঁড়শ, পটোল, করলার দাম খুব একটা হেরফের হয়নি। করলা বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি, পটোলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা, ঢেঁড়শের কেজি পাওয়া যাচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে, বরবটির কেজি পাওয়া যাচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা। দাম বাড়ার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলেন, বন্যায় সবজি ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। এ কারণে সবজির দাম বেড়েছে।
এদিকে ইলিশ আহরণে বিধিনিষেধ তুলে নেয়া হলেও এখনো রাজধানীর বাজারগুলোতে ইলিশ মাছ তেমন চোখে পড়েনি। বাজারে যেসব ইলিশ আছে এর দামও বেশি বলে ক্রেতারা জানিয়েছেন। ঢাকার বাজারগুলোতে দেশি জাতের চিংড়ি ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। টেংরা ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, বোয়াল ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা, কাচকি মাছ ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, আইড়, চিতল, বেলে মাছ আকারভেদে ৭০০ থেকে ৯০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি আকারের ইলিশ এক হাজার থেকে ১২০০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা যায়। ছোট আকারেরগুলো বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায়।
বাজারের এমন পরিস্থিতিতে অনেকটাই নাকাল স্বল্পআয়ের মানুষেরা। কারও কাছে কোনো অভিযোগ না করলেও ভেতরে ভেতরে ক্ষুব্ধ তারা। রাজধানীর কাওরান বাজারে এসেছেন মো. আলী। তিনি বলেন, কাঁচামালের দামের কথা বলে আর লাভ নেই। কে শুনে কার কথা। ব্যবসায়ীরা একের পর এক পণ্যের দাম বাড়ালেও এর কোনো প্রতিকার নেই। যে যেমনি পারছে ব্যবসা করছে। মাঝখানে স্বল্প আয়ের মানুষের টিকে থাকার লড়াই করতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত।