খুলনায় চাঞ্চল্যকর জাকির মুহুরির হত্যার রহস্য উম্মোচন করলো পিবিআই

127
মোঃ আল আমিন খান, সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার 
সোমবার রাতে গ্রেফতারের পর আজ মঙ্গলবার বিকালে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর প্রেসব্রিফিংয়ে জানানো হয়, প্রায় ১০ বছর পর খুলনা মহানগরীর চাঞ্চল্যকর খান মোহাম্মদ জাকির হোসেন ওরফে জাকির মুহুরি হত্যার রহস্য উম্মোচন করেছে পিবিআই। নারী ঘটিত বিষয় ও জমিজমা সংক্রান্ত বিষয়ে মনোমালিন্যের জেরে জাকির মুহুরিকে ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের দিয়ে গুলি করে হত্যা করান স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা কাজী খন্দকার বাহাউদ্দিন। এ হত্যকান্ডের অর্থের যোগানদাতা ও পরিকল্পনাকারী তিনি নিজেই। পিবিআই খুলনার মুখপাত্র পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান জানান, ২০১২ সালের ২০ মে সন্ধ্যায় নগরীর কেসিসি মার্কেটে নিজ কার্যালয় থেকে বের হওয়ার সময় হেলমেট পরা কয়েকজন তার গতিরোধ করে। মুহুর্তেই গুলি করে বোমা ফাটিয়ে চলে যায় তারা। খুলনায় অবস্থার অবনতি হলে ওই রাতেই যশোর সিএমএইচ এ নেয়ার পথে তিনি মারা যান। জাকির হোসেন বাংলাদেশ দলিল লেখক সমিতির ছিলেন কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব। ওই সময়, জাকির মুহুরির সহকারী হিসেবে কাজ করত বাহাউদ্দিন। জাকির হোসেনের তৃতীয় স্ত্রীর সাথে অবৈধ সম্পর্ক ছিল। এটা জানতে পেরে তাদের সম্পর্কের অবনতি হয়। একপর্যায়ে বাহাউদ্দিন তাকে হত্যার পরিকল্পনা করতে থাকে। এক সময়ে সুযোগও এসে যায়। ভাড়াটে খুনী ঠিক করে বাহাউদ্দিন। ২০ মে সন্ধ্যায় কয়েকজন দুর্বৃত্ত অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে তার চেম্বারের সামনে যায়। অ‌ফিস বন্ধ করে বাড়ি যাওয়ার প্রস্তুতির সময় সন্ত্রাসীরা তাকে গুলি করে। বোমা ফাটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হয়। মারত্মক জখম অবস্থায় মার্কেটের অন্যান্য সদস্যরা তাকে নিয়ে খুলনা জেনারেল হাসপাতালে পরে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরবর্তীতে অবস্থা খারাপ হলে তাকে যশোর সিএমএইচ-এ প্রেরণ করা হয়। পথিমধ্যে তিনি মারা যান। নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে খুলনা থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। তিনি আরও বলেন, ঘটনাটি ঘটার দু’দিন আগে বাহাউদ্দিন নেপালে চলে যায়। পাঁচ দিন পর তিনি দেশে ফেরে। ফিরে তিনি উচ্চ আদালত থেকে গ্রেপ্তারসহ হয়রানি না করার জন্য মিস পিটিশন মামলা ক‌রেন। যার নং ৭০৫৯/১২। মামলা দায়ের করে সময় বর্ধিত করে আসছিল সে মিসপিটিশনটি দীর্ঘ শুনানি শেষে গত ২০২১ সালে নিস্পত্তি করা হয়। নিস্পত্তি আদেশ পাওয়ায় সোমবার রাতে বয়রা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। মামলাটি পিবিআই এর আগে সদর থানা পুলিশ, পরে ডিবি, এরপর সিআইডি গ্রহণ করে। সাত বছর তদন্ত করে চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করেন। পরবর্তীতে বাদীর না রাজি পিটিশনে মামলাটি তদন্তের জন্য আদালত পিবিআইকে নির্দেশ দেয়। বাহাউদ্দিন গ্রেপ্তার হওয়ার পর পুলিশের নিকট গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। হত্যাকান্ডে জড়িত আছে এমন আরও এক ব্যক্তির নাম বলেছে। তাকে সাতদিনের রিমান্ডের আবেদন করে আদালতে প্রেরণ করা হবে বলে জানিয়েছে পি‌বিআই। ২০১৯ সালে মামলাটি গ্রহণ করে পিবিআইয়ের এসআই পলাশ চন্দ্র রায়। তিনি বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করেন। তারপর এর ক্লু বের করতে সক্ষম হন। প্রসঙ্গত, কাজী খন্দকার বাহাউদ্দিন। খুলনায় একজন ভূমিদস্যু হিসেবে পরিচিত ব্যক্তি। জাল জালিয়াতি ও জোর পূর্বক খুলনার বাইপাস সড়ক, বয়রা, রায়েরমহল আশে পাশেসহ বিভিন্ন এলাকায় কয়েক শ কোটি টাকার সম্পত্তি  দখলের অভিযোগ তার বিরুদ্ধে রয়েছে। তিনি নগরীর ১৬ ওয়ার্ড আ’লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক।