আজ থেকে দিনে ১ ঘণ্টা লোডশেডিং শুরু

31

বিদ্যুৎ সংকট মোকাবিলায় দেশজুড়ে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আজ মঙ্গলবার থেকে প্রতিদিন এক সপ্তাহ জোনভিত্তিক এক ঘণ্টা করে লোডশেডিং করা হবে। তবে এতে যদি সাশ্রয় কম হয়, তাহলে আরও এক ঘণ্টা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। সাশ্রয়ের জন্য ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখা হবে। এ ছাড়া রাত ৮টার পর শপিং মলসহ দোকানপাট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত কার্যকর এবং উপাসনালয়ে প্রার্থনার সময় ছাড়া এসি ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে সরকারের তরফে।

গতকাল মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এসব কথা বলেন। সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠকের পর প্রতিমন্ত্রী মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান। বৈঠকের পর বিভিন্ন এলাকার জন্য লোডশেডিংয়ের শিডিউল প্রকাশ করেছে ঢাকা শহর ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় বিদ্যুৎ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি)।

বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, মঙ্গলবার থেকে সারা দেশে এক ঘণ্টা করে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং করা হবে। আমরা এক সপ্তাহ এক ঘণ্টা করে লোডশেডিং দিয়ে পরিস্থিতি দেখবো। এভাবে পরিস্থিতি সামাল দেয়া না গেলে পরে দুই ঘণ্টা করে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং দেয়ার চিন্তাভাবনা রয়েছে। ডিজেলে বিদ্যুৎ উৎপাদন আজ মঙ্গলবার থেকে বন্ধ থাকবে।

প্রতিমন্ত্রী উপাসনালয়ে এসি বন্ধের বিষয়ে বলেন, শুধু মসজিদ নয়, উপাসনালয়ে (মসজিদ, মন্দির ও গির্জা) সবখানে প্রচুর এসি লাগানো হয়েছে। তারা যেন মিতব্যয়ী হয়ে এসিটি চালান। প্রার্থনা শেষ হলে তারা যেন এসি সময়মতো বন্ধ করেন, আমার সাজেশন এটাই থাকবে। আমাদের এভাবে আলোচনা হয়েছে। মসজিদে নামাজের সময় ছাড়া এসি বন্ধ রাখার অনুরোধ জানান প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, মসজিদে সবসময়ের জন্য এসি বন্ধ রাখতে বলা হয়নি। নামাজের সময় এসি চালু রাখা যাবে। আসলে উপাসনালয়গুলোতে আমরা বিপুলসংখ্যক এসি ব্যবহার করছি, এক্ষেত্রে কিছুটা সাশ্রয়ী হওয়া দরকার। আপনারা কেবল নামাজের সময়টুকুতে এসি ব্যবহার করুন, বাকি সময়ে বন্ধ রাখুন। এক প্রশ্নের জবাবে নসরুল হামিদ বলেন, অনেক জায়গায় দেখেছি, নামাজের সময় বাদেও এসি চালানো হয়। এ জন্য আমি অনুরোধ করবো, আপনারা একটি নির্দিষ্ট সময়ে এসি ছাড়ুন। পরবর্তী সময়ে যতটুকু সম্ভব বিদ্যুৎ সাশ্রয় করুন, এটিই আমার অনুরোধ।

নসরুল হামিদ বলেন, পেট্রোল পাম্প সপ্তাহে একদিন বন্ধ রাখার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। বিপিসি পেট্রোল পাম্প ওনার্স এসোসিয়েশনের সঙ্গে বসে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে। বিশ্বে জ্বালানি সংকটের কথা তুলে ধরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সংকটের কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ নানা রকম সাশ্রয়ী নীতি গ্রহণ করেছে। কিছু কিছু দেশ দাম বৃদ্ধি করেছে। কেউ কেউ সাশ্রয়ী নীতি নিয়েছে। তিনি বলেন, দেশে যে পরিমাণ ডিজেল আমদানি হয়, তার ১০ ভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার হয়। আর বাকি ৯০ ভাগ ব্যবহার হয় অন্য খাতে। এখন যদি আমরা ১০ ভাগ বিদ্যুৎ বন্ধ করার পর যদি অন্য খাত থেকে আরও ১০ ভাগ বাঁচাতে পারি তাহলে আমাদের বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে। ডিজেলের বিদ্যুতের দামের বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এখন ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুতের ইউনিট প্রতি উৎপাদন ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৪০ টাকা। কিন্তু আমরা বিক্রি করে এই অর্থ পাচ্ছি না। তিনি বলেন, আমরা এখন গ্যাস প্রতি এমএমবিটিইউ ৩৯ ডলারে কিনে এনে ৭ টাকায় বিক্রি করছি।

প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, রাত ৮টার পর দোকানপাট, মার্কেট, শপিংমল খোলা থাকলে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হবে। তিনি বলেন, রাত ৮টা থেকে কোনোরকম দোকানপাট, শপিংমল, আলোকসজ্জা-সব বন্ধ থাকবে। বিশেষ করে বিদ্যুৎ বিভাগকে বলা হয়েছে, তারা খুব কঠিনভাবে এ বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করবেন। যদি কেউ অমান্য করেন তাদের বিদ্যুতের লাইন আমরা বিচ্ছিন্ন করে দেবো। প্রতিমন্ত্রী বলেন, অফিস সময়ের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এটা নিয়ে এখনো পুরোপুরি সিদ্ধান্ত হয়নি। এটা নোটিশ আকারে যাবে।

জ্বালানি তেল সাশ্রয়ের বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা যদি যানবাহনগুলো খুব হিসাব করে ব্যবহার করি, আমাদের সরকারি মিটিং যতগুলো হয়, আমাদের মন্ত্রণালয়ে বা অন্য অফিসে হয়, সেগুলো যদি আমরা অনলাইন করে ফেলি। এরই মধ্যে আমরা এতে অভ্যস্ত। গত দুই বছর তো আমরা করেছি। এতে আমাদের বাহনে অনেকখানি (জ্বালানি তেল) সাশ্রয় হবে।

এর আগে গতকাল সকালে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানিবিষয়ক সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিংসহ নানা সিদ্ধান্তের কথা সাংবাদিকদের জানান প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী। উপদেষ্টা বলেন, খরচ কমাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর উৎপাদন আজ থেকে সাময়িক বন্ধ থাকবে। এ সিদ্ধান্ত সাময়িক। বিশ্ব পরিস্থিতির উত্তরণ হলে আগের অবস্থানে ফিরে আসা হবে। জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, পৃথিবীতে একটা যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে। ইউক্রেনের যে যুদ্ধ, সে যুদ্ধ কিন্তু আমাদেরও যুদ্ধ। ওই যুদ্ধের প্রভাব পড়ছে আমাদের ওপর। তিনি আরও বলেন, যাদের অর্থের অভাব নেই, তারাও কিন্তু লোডশেডিং করছে। যুক্তরাজ্যে হচ্ছে, অস্ট্রেলিয়ায় হচ্ছে। উৎপাদনকে কমিয়ে খরচ যাতে সহনশীল হয়, সে পর্যায়ে নিয়ে আসার চেষ্টা করছি। ডিজেলের বিদ্যুৎ উৎপাদন আপাতত স্থগিত করলাম, তাতে অনেক টাকা সাশ্রয় হবে। মনে রাখতে হবে, ডিজেলের দাম আকাশচুম্বী হয়ে গেছে। তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী বলেন, আমাদের ধারণা, এক থেকে দেড় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি হবে। এতে দিনে এক থেকে দেড় ঘণ্টা এবং কোনো কোনো জায়গায় দুই ঘণ্টাও লোডশেডিং হতে পারে। কিন্তু দেশের বৃহত্তর স্বার্থে এবং পৃথিবীর এই দুর্যোগপূর্ণ সময়ে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

ওদিকে সাংবাদিকদের সামনে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, কোন এলাকায় বিদ্যুতের লোডশেডিং হবে, তা আগে থেকে গ্রাহককে জানিয়ে দেয়া হবে। আমরা সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছি শিল্প খাতকে। বন্দর এলাকায় সপ্তাহে দুইদিন পেট্রোল পাম্প বন্ধ রাখার বিষয়ে ভাবা হচ্ছে বলেও জানান নসরুল হামিদ।

সভায় বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে সরকারি-বেসরকারি অফিস ভার্চ্যুয়ালি করারও সিদ্ধান্ত হয়েছে। সরকারি অফিসগুলোয় কীভাবে সময় কমিয়ে আনা যায়, সেটাও ভাবা হচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস। বৈঠকে জানানো হয়, সরকারি অফিসগুলো ভার্চ্যুয়ালি পরিচালনার বিষয়টি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সমন্বয় করবে।