ডুমুরিয়াতে মামলার জালে প্রখ্যাত সমাজ সেবক হরিদাস মন্ডল, আটকের ৪ দিনের মাথায় জামিন

403

আবু হামজা বাঁধন, ডেক্স রিপোর্ট।।

গেল ১৫ জুলাই খুলনার ডুমুরিয়ার ধামালিয়াতে কৃষক মোরশেদ সরদারের খড়ের গাদায় ১৫টি বোম সাদৃশ্য বস্তু উদ্ধার করে পুলিশ। উদ্ধার ঘটনার ৭ দিনের মাথায় রহস্যজনক ভাবে ডুমুরিয়া থানায় মামলা দায়ের হয়। আর সেই মামলার বাদি হয় পুলিশ। মামলায় ৬জনকে এজাহার নামীয় আসামী দেখানো হয়েছে। বিস্তর তদন্ত ছাড়াই মামলায় ৪জনকে আটক দেখানো হয়। সেই মামলার জালেই ডুমুরিয়ার প্রখ্যাত সমাজ সেবক ও শিক্ষানুরাগী হরিদাস মন্ডলকে গভীর রাতে র‌্যাব আটক করে।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, রঘুনাথপুর ধামালিয়াতে বিজ্ঞানী শামসুল করিম বাকার ও তাঁর ছোট ভাই মাশরুখ হাসান বুলুর মধ্যে দীর্ঘ দিন যাবৎ বিরোধ চলে আসছে। এ বিরোধে নতুন করে যোগ হয় তাদের আরেক ভাই বাশার সহ আরো কয়েকজন। চলতে থাকে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ, মামলা মোকাদ্দমা। শেষ পর্যন্ত বিজ্ঞ আদালত সহ পুলিশ প্রশাসনের কাছে এ পরিবারটি পরিচিতি লাভ করে মামলা ও হামলার রহস্যজনক নানা কারণে। অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, এস কে বাকার সূদুর প্রবাসে থাকার কারণে তাঁর সকল সামাজিক প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রন ও প্রতিনিধিত্ব করেন ধামালিয়ার ডাক্তার বাবু খ্যাত হরিদাস মন্ডল। যদিও তিনি একজন পল্লী চিকিৎসক। এস কে বাকারের প্রতিনিধি হওয়ার একমাত্র কারণে বিভিন্ন হামলা, মিথ্যা অভিযোগসহ রহস্যজনক মামলার শিকার হন হরিদাস মন্ডল। এখানেই শেষ নয়, হরিদাস মন্ডলকে সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য একটি সিন্ডিকেট সহ বড় ধরনের এক মাস্টার মাইন্ড কাজ করে আসছে দীর্ঘ দিন যাবৎ। যারই অংশ হিসেবে বোমা উদ্ধারের রহস্যজনক মামলায় হরিদাস মন্ডলকে ফাঁসানো হতে পারে বলে মনে করছেন ধামালিয়ার সচেতন মহল।

এস কে বাকার কলেজের অধ্যক্ষ মুঠোফোনে জানান, হরিদাস মন্ডল কলেজের সভাপতি সহ বিভিন্ন পদে আছেন। হয়তো তাকে সরানোর জন্য কোন মহল ষড়যন্ত্র করে আসছে।

মামলার বিবরণ সূত্রে জানা যায়, ৯৯৯ এ কল দিয়ে বোমা সাদৃশ্যর বিষয় কে বা কারা পুলিশকে অবহিত করেন। পুলিশ তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় একের পর এক অভিযুক্তদের আটক করেন। ডুমুরিয়ার থানার ওসি কনি মিয়া বলেন, মামলা দায়ের হয়েছে, তদন্ত সাপেক্ষে আসামীদের আটক করা হয়েছে। এছাড়া বোমা উদ্ধারের ঘটনায় বর্তমান দুজনকে রিমান্ডে আনা হয়েছে।

তবে বিজ্ঞ আইনজীবী ও খুলনা বার কাউন্সিলের সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, বোমা সাদৃশ্যর বিষয়টি নিয়ে যে মামলা দায়ের হয়েছে তা রহস্য জনক। আর মামলার ৪নং আসামী হরিদাস মন্ডলকে আসামী দেখানোর বিষয়টি সম্পূর্ণ হতাশ জনক। তিনি আরও বলেন, বোমা সাদৃশ্য উদ্ধারের ঘটনাস্থল থেকে হরিদাস মন্ডলের বসাবাস প্রায় দেড় কিলোমিটার। কেউ তাকে বোমা বহন, বা সহায়তার বিষয় দেখি নাই। এছাড়া যার বাড়ি থেকে বোমা সাদৃশ্য উদ্ধার হয়েছে তাদের বা আশেপাশের কাউকে স্বাক্ষী দেখানো হয়নি মামলার বিবরনীতে।

মানবাধিকার কর্মী শাহাদাৎ হোসেন বলেন, একটি মামলায় কোন ব্যক্তিকে আটক করার পূর্বে মামলার বিষয়টি পুলিশকে আরও খতিয়ে দেখতে হবে। যাতে কোন নিরপরাধী ব্যাক্তি হয়রানি না হয়। তিনি আরও বলেন, হরিদাস মন্ডল একজন সমাজ সেবক ও হাসপাতাল মালিক। তাঁর এখানে শত শত রোগি বিনামূল্যে চিকিৎসা প্রদান করেন। তাকে আটকের বিষয়ে পুলিশকে আরও সচেতন হওয়া উচিত। কারণ একজন মানবদরদী মানুষ কখনও বোমা ও বিস্ফোরক ঘটনায় নিজেকে জড়াতে পারেন না।

বর্তমান ডুমুরিয়ার ধামালিয়াতে হরিদাস মন্ডলকে রহস্যজনক মামলায় আসামী দেখানোর প্রতিবাদে গণমানুষ ফেপে ফুঁসে উঠেছে। তাদের প্রিয় ডাক্তার বাবুকে এ ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনায় সম্পৃক্ততা দেখানোর কারণে বিভিন্ন প্রতিবাদমূলক কর্মসূচি অচীরেই দিবেন বলে জানা যায়।

উল্লেখ্য, গত ২৭ জুলাই বিস্ফোরক এ মামলা থেকে বিজ্ঞ আদালত হরিদাস মন্ডল ও রিমুকে জামিন প্রদান করেছেন । এছাড়া মামলার অন্যতম প্রধান দুই আসামী ৩দিনের  রিমান্ডে রয়েছে বলে তথ্য পাওয়া যায়।