দুর্নীতি ঢাকতে ভুল তথ্য সরবরাহ করলেন হিজলা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আবিদ হাসান

48
মোঃ জাকারিয়া, বরিশাল অফিস
২০২২-২০২৩ অর্থবছরের অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসূচীর আওতায় ই জি পি পি বা
চল্লিশ দিনের কর্মসূচীর ১ম পর্যায়ে বরিশালের হিজলা উপজেলায় মোট  ২২ টি
ওয়েজ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এ প্রকল্পের নামের তালিকা চাইলে সেখান থেকে
একটি অস্পষ্ট এবং অসম্পূর্ণ ভূল তালিকা সরবরাহ করা হয় । তালিকায় কোন
ইউনিয়নের বরাদ্দ তা উল্লেখ না করেই সাংবাদিকের কাছে তথ্য সরবরাহ করা হয়।
তালিকার ১২ নম্বর প্রকল্পের নামে দেয়া আছে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের
মাঠ ভরাটসহ বিদ্যালয় হইতে এইচ বি বি পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণ এবং পুনঃ
নির্মাণ। কিন্তু প্রকল্পের নাম হলো উত্তর নরসিংহপুর সরকারী প্রাথমিক
বিদ্যালয়ের মাঠ ভরাটসহ বিদ্যালয় হইতে এইচ বি বি পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণ
এবং পুনঃ নির্মাণ। তেমনি একই ভাবে তালিকার ২০ নম্বরে মসজিদ হতে জনতা
বাজার , তালিকার ২১ নম্বরে মসজিদ হতে মকবুল মাঝির বাড়ি হয়ে সরকারী
প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত লেখা।  তাহলে প্রশ্ন হলো দুর্নীতির চিত্র
ঢাকতে ইচ্ছে করেই এই ভুল তথ্য দিলেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা? এ বিষয়ে
হিজলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আবিদ হাসানের সাথে কথা বলতে চাইলে
তিনি ব্যস্ততা দেখিয়ে সরে পরেন ।
এবারে সরেজমিনে দেখা গেলো তালিকার ১২ নম্বরে উল্লেখিত প্রকল্পের চিত্র।
উত্তর নরসিংহপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হলেন এই
প্রকল্পের সদস্য সচিব এবং উপজেলার গুয়াবারিয়া ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের ইউ
পি সদস্য হলেন সভাপতি। প্রকল্পের সদস্য সচিব তিনি জানেন না কতজন শ্রমিক
কাজ করবেন বা এখানে বরাদ্দ কত টাকা । তিনি ( প্রধান শিক্ষক) জানালেন
মাসখানেক আগে ১২-থেকে ১৫ জন শ্রমিক বেশ কিছুদিন কাজ করেছে । তবে কতদিন
কাজ করেছে তা তিনি জানেন না। বিদ্যালয়ের জমিদাতা পরিবারের সদস্য জানালেন
রাস্তায় কাজ হয়েছে জানি কিন্তু কত জন শ্রমিক বরাদ্দ ছিলো তা জানেন না।
যখন তারা উভয়েই জানতে পারলেন এই প্রকল্পে ৪৭ জন শ্রমিক ৪০ দিন কাজ করার
কথা তখন তারা অনেকটাই অবাক হলেন। নিয়ম অনুযায়ী একজন শ্রমিক ৪০০ টাকা করে
দৈনিক ৪০ দিনে ১৬০০০ টাকা পাবেন । সেই হিসেব অনুযায়ী এই প্রকল্পে মোট ৭
লক্ষ ৫২০০০ টাকা শ্রমিক মজুরী এবং ২০০০ টাকা সর্দারি সহ মোট ৭লক্ষ ৫৪
হাজার টাকা বরাদ্দ । এ বিষয়ে প্রকল্পের সভাপতি ইউ পি সদস্য ফয়সাল প্রথমে
কাজ শেষ হয়েছে জানালেও পরে তিনি বলেন কাজ এখন অসমাপ্ত। আমরা এখনো
সম্পূর্ণ বিল পাইনি ।
উপজেলার আরও একটি প্রকল্প ১১ নং সিরিয়ালে এর তথ্য দেয়া হয়েছে ।
প্রজ্ঞাপনে শ্রমিক দিয়ে করার কথা থাকলেও  তারা কাজটি করেছেন স্কেবেটর
মেশিন বা ভেকু মেশিন দিয়ে। যেহেতু বিল সরকার জি টু পি পদ্ধতিতে দিচ্ছেন
তাহলে এই মেশিন দিয়ে কাজ করিয়ে বিল দিচ্ছেন কোন উপায়ে? এখানেও একটি বড়সড়
প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
এবারে আসি বিল প্রদানের বিষয়ে। আগের অর্থ বছরে বরাদ্দের টাকা উপজেলা থেকে
দেয়া হতো । এবার সরাসরি জি টু পি পদ্ধতিতে প্রদান করা হচ্ছে। এখন প্রশ্ন
হলো ৪৭ জনের বরাদ্দের কাজ যদি ১২ -১৫ জন করে তাহলে বাকি ৩০ থেকে ৩২ জন
শ্রমিকের বিল নিচ্ছে কারা? এবং এই যে বিল এবং কাজের ব্যাপারে এত লুকোচুরি
কেন ? তাহলে উপজলায় ২২ টি প্রকল্পে ১৩৫০জন শ্রমিক যার মোট মজুরী ২ কোটি
১৬ লক্ষ টাকা যার বেশীরভাগই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা এবং জনপ্রতিনিধিদের
পকেটে।