খুলনায় মায়ের ডাক ও হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার নেটওয়ার্ক’র মানববন্ধন

52

প্রেস বিজ্ঞপ্তি :
‘গুম এখনই বন্ধ করুন এবং গুম হওয়া তাদের খুঁজে বের করে অবিলম্বে স্বজনদের কাছে তাদের ফিরিয়ে দিন’। তাহলে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের সুনাম ক্ষুন্ন হবে। আর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা (স্যাংশন) আসতে থাকবে। এতে করে দেশের সাধারণ জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
‘গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্মরণে আন্তর্জাতিক সপ্তাহ’ উপলক্ষে শুক্রবার (২৬ মে) খুলনায় আয়োজিত আলোচনা সভা, মানববন্ধন ও র‌্যালিতে অংশ নিয়ে বক্তারা তারা এ দাবি জানান। বেলা সাড়ে ১১টায় মহানগরীর খানজাহান আলী রোডস্থ জাতিসংঘ পার্কের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’ ও মানবাধিকার কর্মীদের সংগঠন ‘হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার নেটওয়ার্ক’ যৌথভাবে এ কর্মসূচির আয়োজন করে। মানবাধিকার কর্মী ও সাংবাদিক কেএম জিয়াউস সাদাত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। দিবসের ঘোষণাপত্র পাঠ করেন
মানবাধিকার কর্মী ও সাংবাদিক মুহাম্মদ নূরুজ্জামান।
মানববন্ধনে কর্মসূচীতে অংশ নিয়ে যশোরের বেনাপোলের মেধাবী কলেজ ছাত্র মো. রেজোয়ান হোসেনের বড় ভাই মো. রিপন হোসেন বলেন, ‘তার ছোট ভাই মো. রেজোয়ান হোসেনকে ২০১৬ সালের ৪ আগষ্ট বেনাপোল থানা পুলিশ আটক করে। পরবর্তীতে ওসি অপূর্ব হাসানের নেতৃত্বে তাকে গুম করা হয়। এ ঘটনায় তারা ভয়ে মামলা করার সাহস পাননি। দীর্ঘ ৭ বছরেও তার ভাইয়ের সন্ধান না পেয়ে তার বৃদ্ধ মা-বাবা অসুস্থ্য হয়ে পড়েছেন। ভাইয়ের সন্ধান দাবি করেন তিনি।
সাতক্ষীরার হোমিও চিকিৎসক মোখলেসুর রহমান (জনি)’র পিতা শেখ আব্দুর রাশেদ বলেন, ‘২০১৬ সালের ৪ আগষ্ট সাতক্ষীরা সদর থানার এসআই হিমেলের নেতৃত্বে পুলিশ জনিকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। কিন্তু থানায় কয়েকদিন রেখে তাকে গুম করা হয়। গত ৭ বছরেও তার সন্ধান দিতে পারেনি পুলিশ। ছেলের সন্ধান না পেয়ে তারা বৃদ্ধ পিতা-মাতা অসুস্থ্য হয়ে পড়েছেন। তিনি অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তি এবং তার ডা. জনিকে ফিরিয়ে দিতে সরকারের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
কর্মসূচীতে বক্তৃতা করেন ও উপস্থিত ছিলেন নাগরিক ঐক্যের খুলনা মহানগর শাখার সদস্য সচিব সিনিয়র সাংবাদিক কাজী মোতাহার রহমান বাবু, গণঅধিকার পরিষদ খুলনা জেলা শাখার আহবায়ক মো. বিল্লাল হোসেন, গণসংহতি আন্দোলনের খুলনা জেলা সমন্বয়কারী মুনীর চৌধূরী সোহেল, মানবাধিকার কর্মী শেখ আব্দুল হালিম, সাতক্ষীরার মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট শেখ আলমগীর আশরাফ, সাবেক নৌ বাহিনী কর্মকর্তা ডা. নূরুল ইসলাম, সাতক্ষীরার হোমিও চিকিৎসক মোখলেসুর রহমান (জনি)’র পিতা শেখ আব্দুর রাশেদ, যশোরের বেনাপোলের মেধাবী কলেজ ছাত্র মো. রেজোয়ান হোসেনের বড় ভাই মো. রিপন হোসেন, পুলিশ কর্তৃক দু’ চোখ উপড়ে ফেলা খুলনার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ি মো. শাহাজালাল হাওলাদার, তার স্ত্রী রাহিলা বেগম, গণঅধিকার পরিষদ বটিয়াঘাটা উপজেলা শাখার আহবায়ক মো. বিদার শিকদার, ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফারহাদ হাসান রাজ, খুলনা জেলা ব্লাড ব্যাংকের সভাপতি শেখ ফারুক, সাধারণ সম্পাদক মো. জাহিদুল ইসলাম, মানবাধিকার কর্মী জি এম আজিজুল ইসলাম, এস এম নাজমুল হুদা মিন্টু, এ্যাড. মো. শহিদুল ইসলাম, এম এ আজিম, মো. হাদিউজ্জামান, গালিব হাসান, মো. তাসনিম হাসান প্রমূখ।
অনুষ্ঠানে বক্তারা আরও বলেন, গুম মানবতা বিরোধী একটি অপরাধ। রাষ্ট্র চাইলেই গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড ও মানবাধিকার লঙ্ঘণের ঘটনা বন্ধ হয়ে যাবে। বক্তারা এখনই গুম বন্ধ এবং গুম হওয়া ব্যক্তিদের তাদের স্বজনদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার আহবান জানান।
তারা বলেন, গুম হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের স্ত্রী-সন্তানরা আর্থিক ও সামাজিকভাবে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে চরম কষ্টে রয়েছেন। এতে দেশের সাধারণ নাগরিকরাও নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছেন। এ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে হলে সুষ্ঠু গণতন্ত্র চর্চা এবং মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।