রামপালের চিহ্নিত সন্ত্রাসী ‘শহিদ ওরফে র‌্যাব শহিদ’ বিস্ফোরক মামলায় গ্রেফতার

77

স্টাফ রিপোর্টার : রামপাল উপজেলার ২নং উজড়কুড় ইউনিয়নের শিবনগর গ্রামের চিহ্নিত সন্ত্রাসী এবং হত্যা ও চাঁদাবাজিসহ একাধিক মামলার আসামি শহিদ শেখ ওরফে র‌্যাব শহিদকে (৫০) রামপাল থানা ও ফাঁড়ি পুলিশ গ্রেফতার করেছে। এই সন্ত্রাসী শহিদ ওরফে র‌্যাব শহিদ একজন ভয়ংকর খুনি, সন্ত্রাসী। বর্তমান সরকার উৎখাত ও রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনা ধ্বংসের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এবং বিস্ফোরক আইনে তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রামপাল থানার এসআই কামাল হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, সন্ত্রাসী শহিদের বিরুদ্ধে হত্যা ও চাঁদাবাজিসহ ৫ মামলা রয়েছে। এছাড়া সর্বশেষ সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে দায়েরকৃত (বিশেষ ক্ষমতা আইনে) মামলায় তাকে গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের প্রক্রিয়া চলছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে, সন্ত্রাসী শহিদ গ্রেফতার হওয়ায় এলাকার সাধারণ মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে। তাকে গ্রেফতার করায় পুলিশকে সাধুবাদ জানিয়েছেন এলাকাবাসী। কিন্তু তার বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ড এলাকার মানুষকে চরমভাবে ভাবিয়ে তুলেছে। এই সন্ত্রাসী শহিদ এবং তার সন্ত্রাসী বাহিনীর অত্যাচারে এলাকার সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে।
নানা অপকর্মের হোতা র‌্যাব শহিদ স্থানীয় ২নং উজড়কুড় ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান খাজা মঈন উদ্দিন আকতারের দেহরক্ষী ছিল এবং সে ওই ইউপি চেয়ারম্যানের ষড়যন্ত্রমুলক হত্যা মামলার মিথ্যা স্বাক্ষীও। এমনকি আকতার হত্যার প্রকৃত খুনীদের আড়ালে রেখে তার ও তার বাহিনীর উদ্দেশ্যমূলক মিথ্যা স্বাক্ষের ভিত্তিতে ওই হত্যা মামলায় এলাকার অনেক নিরীহ লোককেও আসামি করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া নিজেকে ‘র‌্যাব’ পরিচয় দিয়ে এলাকার মানুষকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করায় গ্রামে সে ‘র‌্যাব শহিদ’ হিসেবে পরিচিতি পায়।
পুলিশের সূত্রে জানা গেছে, বুধবার (৯ আগস্ট) বিকেলে সন্ত্রাসী শহিদ ওরফে র‌্যাব শহিদ উজড়কুড় ইউনিয়নের শিবনগর গ্রামের তার নিজ বাড়ি খালপাড় এলাকা থেকে দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশের একটি বিশেষ টিম অভিযান পরিচালনা করে তাকে আটক করে। পরদিন (বৃহস্পতিবার ১০ আগস্ট) রামপাল থানা পুলিশ তাকে বিষ্ফোরক মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে বাগেরহাট জেল হাজতে প্রেরণ করে। এই শহিদের বিরুদ্ধে রামপাল থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। মামলা নং-১৩, তারিখ-২৭-৭-২০২৩ইং।
মামলায় উল্লেখ করা হয়, দেশের মধ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি, রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র সহ সরকারী স্থাপনা ধ্বংসের নিমিত্তে নাশকতা সৃষ্টির ষড়যন্ত্র ও ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর উদ্দেশ্যে এবং এক অপরের সহযোগিতায় গত ২৭ জুলাই গভীর রাতে রামপাল উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামের পশ্চিমপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনের সামনে মাঠ এলাকায় বিস্ফোরক দ্রব্যাদি মজুদ করে দুর্বৃত্তরা। সেখানে তারা একত্রিত হয়ে ককটেল বোমা, লোহার রড, হাসুয়া ও বাঁসের লাঠি নিয়ে গোপন বৈঠক করে। এ খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে অভিযান শুরু করলে আসামিরা পুলিশকে লক্ষ করে ককটেল নিক্ষেপ করে পালিয়ে যায়। পরে ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ ৪টি বিস্ফোরিত ককটেল বোমা, ২টি জালের কাঠি, ২টি টিনের কৌটা, ১৮টি লোহার রড, ২৩টি বাঁসের লাঠি, একটি কাঠের হাতলসহ নানা সরঞ্জাম উদ্ধার করে। এ ঘটনায় ফয়লা পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই খন্দকার আব্দুল মবিন বাদি হয়ে রামপাল থানায় মামলা দায়ের করেন। গ্রেফতারকৃত র‌্যাব শহিদ ওই মামলার সন্দিগ্ধ আসামি বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রামপাল থানার এসআই কামাল হোসেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ৮৬-৮৭ দশকের দিকে ঘের দখলকে কেন্দ্র করে সন্ত্রাসী শহিদের নিজের হাতের বানানো বন্দুক নিজে ফায়ার করার মুহুর্তে বন্দুকের পিছন দিক থেকে সেই গুলি ফায়ার হয়ে ডান হাতের মাঝের আঙ্গুল ক্ষত-বিক্ষত হয়ে যায়। এই শহিদের বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধা প্রদান, সাধারণ মানুষকে হুমকি-ধামকি, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি’র সাথে অসভ্য আচরণ, বিজ্ঞ আদালতের বারান্দায় সাংবাদিককে হুমকি প্রদান, এমনকি ভূমিদস্যু, চাঁদাবাজি, ঘের দখল, বোমাবাজি, বনদস্যুদের সহযোগী, নারী উত্যক্ত কারী, ডাকাতি ও চুরির অভিযোগসহ বিভিন্ন ধরনের একাধিক মামলা, জিডি ও লিখিত অভিযোগ রয়েছে। এলাকার একটি প্রভাবশালী কুচক্রী মহলের দীর্ঘদিনের শেল্টারে বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকা- করে আসছিল সে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই এলাকার কয়েকজন ভুক্তভোগী নারী সাংবাদিকদের জানান, বিভিন্ন সময় সন্ত্রাসী র‌্যাব শহিদ উত্যক্ত করে। মান সম্মানের দিকে তাকিয়ে চুপচাপ থাকি। লম্পট শহিদ আটক হওয়ার পর আমরা খুশি হয়েছি।
একই এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ‘ছ’ অক্ষরযুক্ত এক ব্যক্তি জানান, এই সন্ত্রাসী শহিদ এলাকায় ‘র‌্যাব শহিদ’ হিসেবে পরিচিত। শহিদ তৎকালীন সাবেক এক ইউপি চেয়ারম্যানের দেহরক্ষী ছিলো। সেই দাপটে বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকা-ের সাথে জড়িত ছিলো। বর্তমানে একটি কুচক্রী মহলের শেল্টারে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকা-সহ মানুষের সাথে অশালীন আচরণ করে থাকে। এমনকি এলাকায় মানুষের জমি জোরপূর্বক দখল, মারামারি, বনদস্যু, চুরি-ডাকাতি, চাঁদাবাজিসহ নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে এই সন্ত্রাসী শহিদের বিরুদ্ধে।
একই ভাবে ‘ল’, ‘এ’, ‘আ’, ‘ম’, ‘শ’ অক্ষরযুক্ত অনেকেই অভিযোগ করেন, এই সন্ত্রাসী শহিদ ওরফে র‌্যাব শহিদ আটকে এলাকার সাধারণ মানুষ অনেক খুশি। এ কারনে পুলিশ-প্রশাসনকে আমরা ধন্যবাদ জানায়।
তারা আরো জানান, তৎকালীন এক সময় মৎস্য ঘের দখলকে কেন্দ্র করে উভয় পক্ষের মধ্যে বোমা মারামারি হয়।
শিবনগর এলাকার মিকাইল নামের একজনকে এই সন্ত্রাসী শহিদ পায়ে বোমা মেরে পায়ের পিছনের একাংশ ক্ষত করে দেয়। তাছাড়া প্রায় ১৯ বছর আগে এই সন্ত্রাসী শহিদ ওরফে র‌্যাব শহিদ ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী একই এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল হাকিম নামের এক যুবককে দিনের বেলায় অপহরণ করে নিয়ে যায়। প্রকাশ্যে রাস্তা দিয়ে টেনে-হেঁচড়ে তাকে নির্দয়ভাবে পিটিয়ে মুমূর্ষু অবস্থায় পুলিশের হাতে সোপর্দ করে। পরের দিন সকালে আমরা শুনি তাকে মেরে ফেলেছে। তবে আমরা শুনেছি হাকিমকে ষড়যন্ত্র করে প্রতিহিংসা মূলক মেরে ফেলা হয়।
এ বিষয়ে রামপাল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এস এম আশরাফুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, আসামি শহিদকে গ্রেফতার করে বিজ্ঞ আদালতে পাঠানো হয়েছে।