যেভাবে ৯ বছর বয়স কমালেন বন বিভাগের নৈশপ্রহরী সিরাজুল!  শিক্ষা সনদ ও বয়স জালিয়াতির মাধ্যমে চাকরি গ্রহণের অভিযোগ

69

স্টাফ রিপোর্টার :

জালিয়াতির মাধ্যমে শিক্ষাগত যোগ্যতার তথ্য গোপন করে পাশের মিথ্যা সনদ এবং মিথ্যা জন্ম তারিখ দেখিয়ে খুলনার আওতাধীন সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগে ভ্রমণ সহকারীর দপ্তরে চাকুরী নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে মোঃ সিরাজুল ইসলাম নামের এক নৈশপ্রহরীর বিরুদ্ধে। চাকরিতে যোগদানকালে তার প্রকৃত বয়স ৩১ হলেও জালিয়াতির মাধ্যমে তিনি ৯ বছর কমিয়ে বয়স দেখিয়েছেন ২২ বছর। উল্লিখিত অভিযোগে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানিয়ে ১৬ আগষ্ট সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। একই সঙ্গে প্রধান বন সংরক্ষক, বন সংরক্ষক (খুলনা সার্কেল) এবং দুর্নীতি দমন কমিশন বরাবর অভিযোগের অনুলিপিও প্রেরণ করা হয়েছে। অভিযুক্ত সিরাজুল ইসলাম রূপসা উপজেলার ইলাইপুর গ্রামের ইব্রাহিম সেখের পুত্র।
অভিযোগে জানা গেছে, খুলনা বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কার্যালয়ে ভ্রমণ সহকারীর দপ্তরে মোঃ সিরাজুল ইসলাম সেন্ট্রি ডিউটি করছেন। সরকারি চাকুরিতে প্রবেশ করার সময় তিনি বয়স দেখিয়েছিলেন ২২ বছর, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তার বয়স ছিল ৩১। সরকারি চাকুরিতে প্রবেশের বয়স না থাকায় দুর্নীতি ও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে বয়স কম দেখান মোঃ সিরাজুল ইসলাম। এমনকি বন বিভাগে চাকুরিতে প্রবেশের সময় মোঃ সিরাজুল ইসলাম মোরেলগঞ্জের মল্লিকের বেড় আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণি পাসের যে সনদ জমা দিয়েছিলেন বাস্তবে সে স্কুল সার্টিফিকেটও ভূয়া বলে প্রমাণিত হয়।
নৈশ প্রহরী পদে নিয়োগের পর থেকে মোঃ সিরাজুল ইসলাম নগরীর হাজী মহসিন রোডস্থ ফরেস্ট কোয়ার্টারে নাইটগার্ড হিসাবে ডিউটি করেলেও বর্তমানে অবৈধ প্রভাব ও ক্ষমতার জোরে অপর দুর্নীতিবাজ বন প্রহরী মোঃ নজরুল ইসলামের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগীতায় রাত্রি কালীন পাহারার পরিবর্তে বিভাগীয় বন কর্মকর্তার বাসভবনের গেটে দিনে ৬ ঘন্টা করে সেন্ট্রি ডিউটিতে নিয়োজিত থাকেন। যার প্রমান বাংলো গেটের ডিউটি রেজিস্ট্রার।
অভিযোগ আছে, এর আগেও দুর্নীতি ও জালিয়াতির মাধ্যমে বাগেরহাট পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে চাকুরি নেয়ার অভিযোগও পাওয়া যায় বন বিভাগের নৈশ প্রহরী মোঃ সিরাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে।
নৈশ প্রহরী সিরাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে মিথ্যা জন্ম তারিখ ও ৮ ম শ্রেণি পাসের মিথ্যা সনদ জমা দিয়ে চাকুরি নেওয়ার ঘটনায় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বরাবর লিখিত এক অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগে ভ্রমণ সহকারীর দপ্তরে নৈশ প্রহরী পদে নিয়োজিত মোঃ সিরাজুল ইসলাম নিয়োগ কালীন সময়ে জালিয়াতির মাধ্যমে প্রকৃত জন্ম তারিখ ও শিক্ষাগত যোগ্যতার তথ্য গোপন করে ভূয়া স্কুল সার্টিফিকেট দিয়ে নৈশ প্রহরী পদে চাকরিতে যোগদান করেন। প্রকৃত বয়স হতে ৯ বছর বয়স কম দেখিয়ে নৈশ প্রহরী পদে কর্মরত মোঃ সিরাজুল ইসলাম ভ্রমণ সহকারীর দপ্তরে সেন্ট্রি ডিউটি করছেন।
আরও উল্লেখ করা হয়, চাকুরিতে প্রবেশ করার সময় তিনি বয়স দেখিয়েছেন ২২ বছর। ওই সময় প্রকৃতপক্ষে তার বয়স ছিল ৩১ বছর। অর্থাৎ এসএসসি সার্টিফিকেট অনুযায়ী তার প্রকৃত জন্ম তারিখ ২৬/০৯/১৯৭০, কিন্তু চাকুরিতে দেখিয়েছেন ০৭/০২/১৯৭৯। তিনি চাকুরিতে প্রবেশের জন্য ৯ ম শ্রেনির ছাত্র দেখালেও প্রকৃত পক্ষে ওই সময় তিনি এইচএসসি পাস ছিলেন। সরকারি চাকুরিতে প্রবেশের বয়স না থাকায় দুর্নীতি ও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে বয়স কম দেখান।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, বন বিভাগে চাকুরিতে প্রবেশের সময় মোঃ সিরাজুল ইসলাম মল্লিকেরবেড় আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণি পাশের যে সনদ জমা দেন বাস্তবে ঐ নামে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই। অথচ সনদে উল্লেখ করা হয়, সে ৯ম শ্রেণির একজন ছাত্র ছিল। তবে কত সালে সে ৮ম শ্রেণি পাস করে ৯ ম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত ছিল এবং তার রোল নম্বর কত ছিল তা কিছুই ওই সনদে উল্লেখ নেই। যার প্রমাণ মেলে মল্লিকেরবেড় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কর্তৃক প্রকিষ্ঠানে সংরক্ষিত নথিপত্র মোতাবেক মোঃ সিরাজুল ইসলাম, পিতাঃ মোঃ ইব্রাহিম সেখ নামে কোন ছাত্রের হদিস পাননি মর্মে দেওয়া প্রত্যায়ন পত্রে। মূলত: জালিয়াতির মাধ্যমে সে ভূয়া স্কুল সার্টিফিকেট তৈরি করেছিলেন, যার কপি সংরক্ষিত রয়েছে। এছাড়া ইতিপূর্বে মোঃ সিরাজুল ইসলাম এস.এস.সি পাশের সার্টিফিকেট দিয়ে বাগেরহাট পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে চাকুরি নেয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর প্রশ্ন, নৈশ প্রহরী সিরাজুল ইসলাম যদি ০৭/০২/১৯৭৯ সালে জন্ম গ্রহণ করেন তাহলে কিভাবে ১৯৮৭ সালে মাত্র ৮ বছর বয়সে এসএসসি পাস করেছেন এবং মাত্র ১১ বছর বয়সে ১৯৯০ সালে এইচএসসি কম্পার্টমেন্টাল পাস করেছেন?। যেটি বাস্তবসম্মত নয়।
এ অবস্থায় আইন অনুযায়ী দুর্নীতি, জালিয়াতি ও তথ্য গোপনের অভিযোগে নৈশ প্রহরী মোঃ সিরাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে সরকারি চাকুরি বিধি অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান এবং তার গ্রহণকৃত সমুদয় সরকারি অর্থ আদায়ের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়।
অভিযোগের বিষয়টি পরোক্ষভাবে স্বীকার করে নৈশ প্রহরী সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘এক জায়গায় যদি ই হয়ে যায়, তো অনেকেই তো আবার রেজিস্ট্রেশনও করে বা ভর্তিও হয়। প্রশ্ন করা হয়, এসএসসি পাশ করে কেউ কি আবার নবম শ্রেণিতে পড়বে- জবাবে তিনি বলেন, তার যদি চাকরির বয়স না থাকে তাহলে সে তো আবার ভর্তি হবে। এভাবে তিনি নিজের জালিয়াতি, তথ্য গোপন ও মিথ্যাকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।
এ বিষয়ে জানতে সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা (ডিএফও) ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।