খুলনায় অধিকার ও মায়ের ডাক’র মানববন্ধনে বক্তারা ‘আর চোঁখের পানি নয়, গুমের বিরুদ্ধে রূখে দাঁড়ান’

16

খবর বিজ্ঞপ্তি :
‘আর চোখের পানি নয়, গুমের বির”দ্ধে সকলকে রূখে দাঁড়াতে হবে এবং সুষ্ঠু তদন্ত করে গুমের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।’ গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্মরণে আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে বুধবার (৩০ আগষ্ট) খুলনায় অনুষ্ঠিত গুম বিরোধী র‌্যালী ও মানববন্ধন কর্মসূচীতে বক্তারা এসব কথা বলেন।
দেশের অন্যতম শীর্ষ মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’ ও গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’ যৌথভাবে এ কর্মসূচির আয়োজন করে। এর আগে দিবসটি উপলক্ষে বেলা ১১ টায় নগরীর ফুল মার্কেট মোড় থেকে র‌্যালী বের হয়ে শান্তিধাম মোড় হয়ে জাতিসংঘ পার্কের সামনে গিয়ে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
বক্তারা আরও বলেন, গুম মৌলিক মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। এটি রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের একটি হাতিয়ার। স্বাধীন দেশে এমন কথা ছিল না যে, গুমের বিরুদ্ধে রাস্তায় দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করতে হবে, জনগণকে সংগঠিত করতে হবে। কিন্তু জনসমর্থনহীন সরকার ভিন্নমতের মানুষদের কণ্ঠ স্তব্দ করতে আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দিয়ে গুম করে অবৈধভাবে জোর করে ক্ষমতায় টিকে আছে। কিন্তু আজও গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের কান্না থামেনি। মানববন্ধন থেকে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা এবং সুশাসনসহ গুমের শিকার ব্যক্তিদের অবিলম্বে তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানানো হয়।
অনুষ্ঠানে তথ্য দিয়ে জানানো হয়, ২০০৯ সাল থেকে দেশে গুম হওয়ার ঘটনা ব্যাপকভাবে শুরু হয়। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের বিতর্কিত নির্বাচনগুলোর আগে ও পরে অনেক গুমের ঘটনা ঘটে এবং বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা এর শিকার হন। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখেও একই কায়দায় বিরোধীদলের নেতা-কর্মীদের গুম করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
বক্তারা আরও বলেন, বক্তারা মায়ের ডাক ও অধিকার গুমের শিকার ব্যক্তিদের ফিরে পাওয়ার দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচীসহ আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত গুম , বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড এবং হেফাজতে নির্যাতনের মতো ভয়াবহ ঘটনা ঘটতেই থাকবে। এ কারণে সত্যিকারের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সব ধরনের অন্যায়-অবিচারের প্রতিকার করতে ভুক্তিভোগী পরিবারগুলোকে সঙ্গে নিয়ে দলমত নির্বিশেষে বাংলাদেশের জনগণকে এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে রূখে দাঁড়াতে হবে।
একই সঙ্গে মানববন্ধন থেকে অভিযোগ করা হয়, সম্প্রতি রিমান্ডের নামে খুলনার রূপসা পুলিশ বক্সে নিয়ে পুরুষ পুলিশ কর্তৃক চুমকি নামে এক নারী ফ্যাশান ডিজাইনারকে তিনদিন প্রহার করেছে। এতে তার মানবাধিকার লঙ্ঘণ হয়েছে। আহত অবস্থায় তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। এতে তার পরিবার-পরিজনও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষিদের শাস্তি দাবি করা হয়।
মানববন্ধন কর্মসূচিতে হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার ও সাংবাদিক মুহাম্মদ নূরুজ্জামান সভাপতিত্ব ও দিবসের ঘোষণাপত্র পাঠ করে শোনান। স্বাগত বক্তৃতা করেন মানবাধিকার কর্র্মী ও সাংবাদিক কেএম জিয়াউস সাদাত।
কর্মসূচীতে বক্তৃতা করেন সিনিয়র সাংবাদিক ও নাগরিক ঐক্যের খুলনা মহানগর শাখার সদস্য সচিব কাজী মোতাহার রহমান বাবু, খুলনা জেলা গণসংহতি আন্দোলনের আহবায়ক মুনীর চৌধুরী সোহেল, ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের খুলনা নগর শাখার সহ-সভাপতি শেখ মো. নাসির উদ্দিন, ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আল-আমিন শেখ, মানবাধিকার সংগঠক শেখ আব্দুল হালিম, জেলা ব্লাড ব্যাংকের সভাপতি শেখ ফারুক, গুমের শিকার সাতক্ষীরার ডা. শেখ মোখলেসুর রহমান জনি’র পিতা শেখ আব্দুর রাসেদ, বেনাপোলে গুমের শিকার কলেজছাত্র মোঃ রেজওয়ান হোসেনের ভাই বায়জিদ হোসেন প্রমুখ।
উপস্থিত ছিলেন সাতক্ষীরার মানবাধিকার কর্মী মো. ইয়াসিন আলী সরদার, মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট মো. শহিদুল ইসলাম, নাগরিক ঐক্যের শেখ জামিরুল ইসলাম, ব্যবসায়ী মো. হাবিবুর রহমান খান, জেলা ব্লাড ব্যাংকের সাধারণ সম্পাদক মো. জাহিদুল ইসলাম, সিডিপি’র এস এম এ রহিম, চিকিৎসক এম ডি দেলোয়ার হোসেন, ছাত্রনেতা শহিদুল ইসলাম, সাংবাদিক এম এ আজিম প্রমুখ।